• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ

নেতৃত্বে পরিবর্তন হচ্ছে না!

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২২  

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামী শনিবার। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে ৭ হাজার কাউন্সিলর ও লক্ষাধিক ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। শোনা যাচ্ছে, এবার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আবারও আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, বারবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। এবারও তিনি সভাপতি হচ্ছেন। কারণ দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী তিনি। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের পুনর্বহাল থাকছেন বলে জানা গেছে। তবে এবার সম্মেলনের মাধ্যমে দলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের আলোচনায় এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এলে সম্মেলনে বড় চমক হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মশিউর রহমান। নির্বাচন কমিশন প্রথমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আহ্বান করবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাব ও সমর্থনের মাধ্যমে শীর্ষ দুই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এরপর কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এদিকে কারা নতুন নেতা হচ্ছেন, পুরোনো কে কে বাদ পড়ছেন, সে বিষয়ে এখনো সবাই অন্ধকারে। এ জন্য পদপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নেতারা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অনেকেই ভুগছেন পদ হারানোর আতঙ্কে। আবার অনেকে রয়েছেন পদোন্নতির আশায়। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তেমন কোনো পরিবর্তন বা রদবদল আসছে না। গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন আসছে না। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের সম্মেলনকে ঘিরে সারা দেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

গণভবনে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক :আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এটাই বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শেষ বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আমন্ত্রিত সদস্যদের যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উপস্থিত থাকার জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি অনুরোধ জানিয়েছেন। সভায় অবহিত করা হবে কাউন্সিলের আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা। অনুমোদন দেওয়া হবে সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের প্রতিবেদন। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট সভায় তুলে ধরবেন।

৭৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে সম্মেলন হয়েছে ৩৯ : সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এর মধ্যে ৩৯টির সম্মেলন হয়েছে, সম্মেলন হয়নি বাকি ৩৯টির। সম্মেলন হওয়া ৩৯টির মধ্যে প্রায় সবকয়টিতেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্ভর কমিটি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে মাত্র সাতটি জেলা। অন্যদিকে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়নি ২৪টিতে এবং নেতৃত্বের আংশিক পরিবর্তন হয়েছে আটটিতে। উপজেলা পর্যায়েও একই চিত্র। একই অবস্থা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেও। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে দলটি চার বার সম্মেলন করলেও নতুন নেতা তৈরি করেছে মাত্র ৭৭ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে পরিবর্তন না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে দুই বার পরিবর্তন হয়েছে।

পদ্মা সেতুর ওপর নৌকা আদলে মঞ্চ :সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চের ওপর। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাকি দুটোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজন থাকছে এবার। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি। এবার আলোকসজ্জা একেবারেই করা হচ্ছে না । আগের মতো বিশাল তোরণও হবে না।

এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিদেশ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও থাকবেন। সাংগঠনিক জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য পৃথক পৃথক চেয়ারে নাম লেখা থাকবে যাতে তারা পতাকা উত্তোলন শেষে এসে নিজের নির্ধারিত চেয়ারে বসতে পারেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র জানায়, সভাপতি পদে শেখ হাসিনাই থাকছেন, এটা নিশ্চিত। এর বাইরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন এমন আলোচনায়ও আছে। যদিও অতীতের সম্মেলনগুলোতেও একই আলোচনা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ আসেননি। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দলে দায়িত্ব পেতে নেতৃত্বের অভাব নেই; আছে প্রতিযোগিতা। সভানেত্রী হিসেবে এবারও থাকবেন শেখ হাসিনা। তাই হয়তো শেষ পর্যন্ত দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরেই আস্থা রাখছেন শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় পরিবর্তন আনতে চান না দলের নীতিনির্ধারকরা।