• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
চাকরির পেছনে না ছুটে যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান ‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ

৪ বছরে পদ্মাসেতু: দৃশ্যমান উন্নয়নের স্বপ্ন শিবচরবাসীর

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০১৮  

 

 

শিবচর প্রতিনিধি:

দেশের দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। বহুল কাঙ্খিত পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরন হতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাড়াচ্ছে পদ্মাসেতু। এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নও মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে সেই সাথে। পদ্মাসেতুর একপ্রান্ত মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর অন্য প্রান্ত শরিয়তপুরের জাজিরায়। তবে শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েণ্টে নেমে যে সংযোগ সড়কটি দক্ষিণাঞ্চলকে যুক্ত করেছে তা শিবচরের উপর দিয়ে গেছে। এই পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে মাদারীপুর জেলার শিবচরে। শিবচরে পদ্মার চরাঞ্চলের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে এই সেতুকে কেন্দ্র করেই। তাই পদ্মাসেতু শিবচরের মানুষের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক আশীর্বাদ বলে এ এলাকার মানুষ মনে করেন।

শিবচর উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একমাত্র দ্বীপ ইউনিয়ন হচ্ছে চরজানাজাত ইউনিয়ন। এছাড়াও পদ্মা বেষ্টিত রয়েছে কাঁঠালবাড়ী, মাদবরেরচর ও বন্দোরখোলা ইউনিয়ন। তাছাড়া শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাগুরখন্ডসহ আশেপাশের বিশাল এলাকা পদ্মার চরাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। চরাঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। নানা ধরণের সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত চরের মানুষেরাও। এ সকল চরের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই কৃষিজীবি। এছাড়াও রয়েছেন বড় একটি অংশ জেলে। মূল ভূখন্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন চরজানাজাত ইউনিয়নে সড়ক পথে কোন যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ চরের ৬৫টি গ্রামে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের বাস। কৃষিকাজ,গবাদি পশু পালন, মাছ শিকার ও ঘাট এলাকায় ফেরি করে পন্য বিক্রি এ চরের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস। পিছিয়ে পড়া এই পদ্মার চরে বইছে উন্নয়নের ছোঁয়া। অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, শেখ হাসিনা ইন্সিটিউট অব হাইটেক পার্ক এ্যান্ড টেকনোলজি, বিমানবন্দরসহ নানা ধরনের উন্নয়ন কাজের জন্য পদ্মার চর বেছে নেবার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে পদ্মাসেতু নির্মানের সাথে সাথেই। বিভিন্ন সময় চরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে সরকারের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের আগমনকে চরের মানুষের মনে আশা জাগানিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

এদিকে পদ্মাসেতুর নির্মানের চার বছর হচ্ছে ডিসেম্বরে। পদ্মাসেতুর প্রকৌশলী সূত্র থেকে জানা যায়, মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। নদীতে যে ২৬২টি পাইল বসবে তার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ১৮৬টি পাইল ড্রাইভ। বাকি আছে ৭৬টি পাইল ড্রাইভ। ৬টি পিলারের ওপর স্প্যান বসেছে ৫টি। এখনো ৩৬ পিলারের ওপর ৩৫টি স্প্যান বসানো বাকি। মূল সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ১৩টির কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর ২৯টি পিলার স্প্যান বসানোর উপযোগী করতে কাজ চলছে। মাওয়ায় মোট ১৭টি ট্রাস (স্প্যান) এসেছে যার মধ্যে ৫টি স্থায়ীভাবে ও ১টি অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

 

নদী শাসনের মোট ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪১টি পিলারের পিয়ার কলামের মধ্যে ৬টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৩৫টির কাজ চলছে। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের ৪৭টি পিলারের পিয়ার কলামের ১৮টি শেষ হয়েছে এবং ২৯টির কাজ চলমান। মূল সেতুর ২ প্রান্তের ২টি ট্রান্সিশন পিয়ারের ৩২টি পিয়ারের সবগুলো পাইল শেষ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের ৩৫৬টি ভায়াডাক্টের সবগুলো পাইল বসানো হয়েছে। নকশা সমাধান হওয়া ৯টি পিলারের কাজ এখনো শুরু হয়নি। পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হওয়া পিলারগুলো হলো-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৮, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১।

 

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ১ বছরের বেশি সময় ধরে পদ্মাসেতুর ১১টি পিলারের নকশা জটিলতায় ছিল। পিলারগুলোর পাইলিংয়ের ৩৮০ থেকে ৪০০ ফুট গভীরতায় ধরা পড়ে কাদার স্তর। ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এখনো নকশা বাকি আছে ৬,৭ নম্বর পিলারের। নকশা সমাধান হওয়া পিলারের ৭টি করে পাইল ড্রাইভ হবে।

 

এছাড়া এসব পিলারে স্ক্রিন গ্রাউটিং নামে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। সম্প্রতি প্রকৌশলীরা স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের কাজের জন্য ১৬টি টেম্প পাইল প্রস্তুত করেছেন। সেতুর ৪১টি স্প্যানে রেলওয়ে স্ল্যাব বসবে ২ হাজার ৯৫৯টি। পরীক্ষামূলকভাবে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫০টির মতো স্ল্যাব বসেছে। মাওয়া প্রান্তে ৭০০ বেশি এসব স্ল্যাব প্রস্তুত আছে। 

 

সূত্র জানায়, সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। আর সেতুটির নকশা প্রণয়ন করা হয় তারও দুই বছর আগে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৯টি পিলারের নকশা সমাধান হলেও এখনি বাকি ২টি পিলারের। নকশা প্রণয়নের সময়ে প্রতিটি পিলারের গোড়ার মাটি পরীক্ষা করা হয়নি। ৫টির পরপর ১টি করে পিলারের মাটি পরীক্ষা করা হয়, আবার তুলনামূলক কম গভীর মাটি পরীক্ষা করা হয়। ৭০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটি পরীক্ষা করা হয়। ফলে এর নিচে মাটির কি অবস্থা রয়েছে তা জানা যায়নি।

 

উল্লেখ্য, সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় ৪ মাস পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর মাত্র দেড় মাস পর ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। আর পঞ্চম স্প্যানটি বসে এক মাস ১৬ দিনের মাথায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।