• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
চাকরির পেছনে না ছুটে যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান ‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ

শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৪  

ভারতে আগামী জুন মাসে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর দিল্লিতে প্রথম যে বিদেশি সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রীয় সফরে আসবেন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাই মাসের প্রথমার্ধে শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করবেন। অর্থাৎ এটা ঘটবে ভারতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক মাসখানেকের ভেতরেই।

এই সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো আমন্ত্রণপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা বুধবার (৮ এপ্রিল) দুদিনের সফরে ঢাকায় যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার গণভবনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে এই চিঠি তার হাতে তুলে দেবেন বলেও কথা রয়েছে।

ভারতে এখন নির্বাচনি প্রক্রিয়া চলছে পুরোদমে। আজকের (৭ এপ্রিল) পর দেশের অর্ধেকেরও বেশি আসনে ভোটগ্রহণ হয়ে যাবে। বাকি থাকবে আরও প্রায় অর্ধেক। যদিও বেশিরভাগ জনমত জরিপেই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, তবে দেশের পরবর্তী সরকার কারা গড়বে তা কিন্তু ৪ জুন ভোটগণনার আগে জানা সম্ভব নয়।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে কোনও বিদেশি নেতাকে ভারত সফরের জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ জানানোর নজির খুব একটা নেই। ভোটের সময় বিশেষ করে এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়, অপেক্ষা করা হয় নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ তথা শেখ হাসিনার জন্য এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটাতেও ভারত দ্বিধা করেনি। আর এর পেছনে ভারতের দিক থেকেও বিশেষ তাগিদ ছিল।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইতোমধ্যেই জুলাই মাসে তার দেশে সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। এখন গত জানুয়ারি মাসেই টানা চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা, কিন্তু এর আগে কোনও মেয়াদেই তিনি ভারতেরও আগে চীন সফর করেননি। ফলে এবারেও যাতে তা কোনও মতেই ব্যত্যয় না ঘটে সেটা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট ছিল দিল্লি ও ঢাকা দু’পক্ষই।

অনেকটা এই বাস্তবতা থেকেই ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, জুলাইয়ে শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত চীন সফরেরও আগে, সম্ভব হলে জুন মাসের শেষ দিকেই তাকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। দেশের নতুন সরকারের বয়স হবে তখন মাত্র কয়েক দিন, কিন্তু তাতে কি!

তবে পরে দু’পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে স্থির হয়েছে, জুনের শেষ দিকের বদলে জুলাইয়ের প্রথমার্ধে সফরটা হলেই সব দিক থেকে সুবিধা হয়। এখন সফরের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের সময়ই চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কিন্তু ভারতে পরবর্তী সরকার কারা গড়বে তারই কোনও স্থির নেই, অথচ তখনকার জন্য একজন বিদেশি সরকারপ্রধানকে ভারত সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখা হচ্ছে, এই ব্যাপারটা কি কিছুটা অস্বাভাবিক নয়?

ভারতে কূটনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, এটা আদৌ অস্বাভাবিক নয়। কারণ ভারতে সরকার বদল হলেও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একটা ধারাবাহিকতা সব সময় বজায় থাকে। অর্থাৎ তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয়, ভারতে বর্তমান বিজেপি সরকার বিদায় নিয়ে এখনকার বিরোধী জোট সরকার গঠন করলো, তারাও কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো এই আমন্ত্রণকে অক্ষরে অক্ষরে মর্যাদা দেবে।

‘আর তাছাড়া আমাদের দুই দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরা তো বলেইছেন, পারস্পরিক সফরের ক্ষেত্রে তারা দরকারে প্রোটোকলের বাইরে গিয়েও একে অন্যের দেশে সফরে যাবেন’, মনে করিয়ে দিচ্ছেন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ।

ঢাকাতে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘বিদেশি নেতাদের ভারত সফরের সূচিগুলো তো অনেক সময় পুরো এক বছর আগেও তৈরি হয়ে যায়। ইউরোপীয় দেশগুলো এ ব্যাপারে সবচেয়ে খুঁতখুঁতে। ডাচরা যেমন এগারো মাস আগেও একটা ডিনার কোথায় হবে, কখন শুরু হবে, কতক্ষণ চলবে এগুলো প্ল্যান করে রাখতে ভালোবাসে।’

ভারতের এই প্রাক্তন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলছিলেন, ‘সামনের শীতে কোন কোন বিশ্বনেতা ভারতে আসবেন, তারও অনেকগুলো এখন থেকেই ঠিক হয়ে আছে বলে আমি নিশ্চিত। আর শেখ হাসিনার তো কথাই আলাদা। কারণ ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটাও তো স্পেশাল!’

কাজেই দু’মাস বাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটা এখনও জানা না থাকলেও শেখ হাসিনা যে জুলাইতে ভারত সফরে আসছেন এবং সেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে (তা তিনি নরেন্দ্র মোদি বা অন্য যেই হোন) দিল্লিতে বৈঠকে বসছেন তা কিন্তু এখন থেকেই স্থির হয়ে থাকছে।

ওই বৈঠকে তিস্তা চুক্তির অমীমাংসিত ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার কারণ, চীন তিস্তার ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে বড় ব্যারাজ নির্মাণে আগ্রহী বলে ভোটের আগেই ঘোষণা করেছে। এখন শেখ হাসিনার চীন সফরের আগেই এই স্পর্শকাতর প্রশ্নটিতে ভারত তাদের অবস্থান বা বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরতে চাইবে– এটাই প্রত্যাশিত।

বস্তুত চীন সফরে যাওয়ার আগেই শেখ হাসিনা ভারতে আসুন, দিল্লির এই তাগিদ থেকেই যে তড়িঘড়ি ভোটের মধ্যেও এই সফরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে তা একেবারে স্পষ্ট। দুদিনের ঢাকা সফরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াটরাও এই বিষয়টির ওপর জোর দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ছাড়াও ঢাকায় কোয়াটরা বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং তার কাউন্টারপার্ট মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও।

এর আগে গত মাসেই ২০ এপ্রিল ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের কথা ছিল। কিন্তু ‘অনিবার্য কারণবশত’ শেষ মুহূর্তে সেই সফর পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। অবশেষে এখন তিনি বাংলাদেশে যাচ্ছেন।