• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে

৭৫ লাখ টাঙ্গাইল শাড়ি রপ্তানি হয়েছে ভারতে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৪  

এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে যা উৎপাদন করেছি তা আমরা বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। পাইকারি বিক্রিও মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। আমরা আশাবাদী গত বছরের চেয়ে এবার আমাদের বিক্রিটা ভালো হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, মানুষের মাঝে ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এজন্য আমরা আশাবাদী বিক্রি ভালো হবে। এ বছর আমাদের রপ্তানিটাও বেশি হয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানিটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। শুধু আমাদের দেশে বাজার দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এই শিল্পটাকে যেন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এজন্য সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত দরকার। টাঙ্গাইল জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক এমন কথাই বললেন।

এদিকে প্রায় ৪শ কোটি টাকার শাড়ি ও তাঁতের নানা পোশাক বিক্রির আশা করছে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স। এজন্য কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধিতে উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতের শাড়ি ও পোশাক তৈরির নানা ধাপের কারিগররাও। দেশের পাশাপাশি অন্য দেশে রপ্তানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের শাড়ি। গত বছর ভারতেই রপ্তানি হয়েছে ৭৪ লাখ পিস শাড়ি। এবার তা ছাড়িয়ে ৭৫ পিস লাখ শাড়ি রপ্তানি হয়েছে। নতুন ও বাহারি ডিজাইনের সুতি শাড়ি ৬শ থেকে ২৫ হাজার টাকা, জামদানি, হাফ সিল্ক, মসলিন, এন্ডি সিল্ক ও সফট সিল্ক ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম রয়েছে।

ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসবকে সামনে রেখে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে ওঠার আশা করছে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ব্যবসায়ীরা। এ দুই উৎসব ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে তাঁতপল্লিতে। ক্রেতার চাহিদা মেটাতে দিনরাত বুননের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। গরমের কথা মাথায় রেখে এবার শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র্য আর নতুনত্ব। আলো আঁধারের ছোট-বড় তাঁত শাড়ির কারখানায় এখন কারিগরদের ব্যস্ততা। ভোর থেকে চলছে মাকু আর শানার ঠোকাঠুকির শব্দ। তাঁতির হাত ও পায়ের ছন্দে তৈরি হচ্ছে এক একটি বর্ণিল শাড়ি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড় এখন তাঁতপল্লিতে। অর্ডার অনুযায়ী শাড়ির জোগান দিতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন কারিগররা।

তাঁত শ্রমিক রশিদ মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে তাঁতের অবস্থা তেমন ভালো না। পরিবার নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি। সব কিছুর দাম বেশি। যে মজুরি দেয় তা দিয়ে সংসার তেমন চলে না। তারপরও আমরা সংসার চালাতে কাজ করে যাচ্ছি। তবে আশা করছি সামনে ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তাঁতের শাড়ি ভালো বিক্রি হবে।’ মুসলিম মিয়া বলেন, ‘একটা শাড়ি তৈরি করতে দুইদিন সময় লাগে। আমরা বর্তমানে পৌঁনে ৭শ টাকা মজুরি পাচ্ছি। এ দিয়ে আর সংসার চলে না। এ পেশা যে ছেড়ে দিব অন্য কাজও পারি না। পেটের তাগিদে এ পেশাকে ধরে রেখেছি। মহাজনে ঠিকমতো কাপড় বিক্রি করতে পারলে আমাদের কাজ দেয়। আর বিক্রি করতে না পারলে আমাদের কাজ দেয় না। এভাবেই চলছে আমাদের কাজকর্ম। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের সহযোগিতা করা হোক।’

আরফান আলী বলেন, আমি এ পেশায় কাজ করি ৩৫ বছর ধরে। আমাদের টাঙ্গাইলের তাঁতে শাড়ি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি হয়। একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে তিন-চারদিন। বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। মজুরি দেয় মাত্র এক হাজার টাকা। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। বেশিরভাগই এ পেশা থেকে চলে গেছেন। আমি অন্য কোনো কাজ আর শিখি নাই। এজন্য আমি যেতে পারি নাই। এভাবে আর আমাদের সংসার চলছে না। আমাদের মজুরি বাড়ানো হলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারব।

ঢাকা থেকে শাড়ি কিনতে এসেছেন রাবিয়া খাতুন। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কোয়ালিটি ভালো। গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি তারপরও টাঙ্গাইলের শাড়ি অনেক ভালো মানের সেজন্য নিয়ে যাচ্ছি। আরেক ক্রেতা সুমাইয়া শিমু বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দুটি তাঁতের শাড়ি নিয়ে গেলাম ও পরিবারের জন্য তিনটি নিয়েছি। শাড়ির মান ও ডিজাইন অনেক ভালো। এজন্য প্রতিবছর টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কিনতে আসি। আগের থেকে এবার দাম বেশি রাখছে। দাম একটু কম হলে ভালো হতো।’

পাথরাইল এলাকার তাঁতশিল্পের মালিক গোবিন্দ সূত্রধর বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। পাওয়ার লুমের কারণে হ্যান্ড লুমের তৈরি শাড়ি কম চলে। হ্যান্ড লুমের শাড়ির দাম বেশি। এগুলো এখন খুব কম চলে। ৫শ থেকে ৭শ টাকায় পাওয়ার লুমের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। হ্যান্ড লুমের শাড়ি তৈরি করতেই মজুরি দিতে হয় ৫শ থেকে ৭শ টাকা। এজন্য আমাদের শাড়ি কম চলে। আমরা তারপরও আশা করছি এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ পাশাপাশি আমাদের বিক্রি ভালো হবে। গতবারের থেকে এবার বেশি বিক্রি হবে।’

টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, ‘টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িতে এবার নতুনত্ব এসেছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রায় ৩শ থেকে ৪শ কোটি টাকার টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রি হবে বলে আশা করছি। এবার মোটামুটি সবাই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তাঁতিদের আমরা চলমান প্রক্রিয়ায় ঋণ প্রদান করি। প্রণোদনামূলক ঋণ হিসেবে ৫% ঋণ সার্ভিস চার্জে আমরা তাতিদের সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা ঋণ দিতে পারি।

বেলকুচিতে সরব হয়ে উঠেছে তাঁতপল্লি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ জানান,  পবিত্র ঈদুল-ফিতরকে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে তাঁতকুঞ্জ খ্যাত সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তাঁত পল্লিগুলো। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এ অঞ্চলের তাঁত মালিক ও শ্রমিকদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। এই ব্যস্ততা শুধু পুরুষের নয়। নারীরাও পুরুষদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব কাজে সহযোগিতা করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তাঁত প্রধান তামাই, শেরনগর, চন্দনগাঁতি ও রান্ধুনীবাড়ি এলাকা কারখানায় মালিক ও শ্রমিকরা শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি পিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। বসে নেই নারীরাও। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নলীভরা, সুতাপারি করা, মাড়দেয়া ও রং তুলিতে নকশা আঁকাসহ কাপড় বুননের কাজেও সহযোগিতা করছে ওই এলাকার নারী শ্রমিকরা। জালাল হোসেনসহ একাধিক তাঁত শ্রমিকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। আগে দিনে ৭-৮ ঘণ্টা কাজ করলেও এখন ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। এতে তাদের আয়ও বেড়েছে। ঈদে নিজের ও পরিবারের চাহিদাকে ঘিরে বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে মূলত অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন। তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাদের কাজের সমস্যা হলেও তা মানিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত আয়ের উদ্দেশ্যে তাঁত কারখায় শ্রম দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।

সোয়ান লুঙ্গির স্বত্বাধিকারী বাবু সরকার জানান, সারা বছর যেমন তেমন আমরা তাঁতের ব্যবসায়ীরা ঈদ ও পূজাকে ঘিরে আশায় থাকি ভালো ব্যবসা হবে। সেই অনুপাতে তাঁতিরা কাপড় উৎপাদন করে থাকে। এ বছরও তারই ধারাবাহিকতায় আশা রাখছি যে ঈদে ভালো একটা ব্যবসা হবে। আমরা কিছু  হলেও লাভের মুখ দেখবো। তবে এখনো ভালো কিছু বুঝতেছি না। সামনে আরও দিন রয়েছে দেখা যাক কি হয়। আশা করি কেনা বেচা ভালোই হবে।

জ্যোতি শাড়ি ঘরের স্বত্বাধিকারী বৈদ্যনাথ রায় জানান, রোজার বেশ কয়েকটা চলে গেলেও এখনো কাপড়ের বাজার খুব একটা সন্তোষজনক না। তবে সামনে আরও কয়েকদিন রয়েছে। আশা করছি ঈদকে ঘিরে আমরা যে আশায় বুক বেঁধেছিলাম তা পূর্ণ হবে।