• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে

একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করা হোক, দাবি পাকিস্তানেই

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২২  

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো নির্মম গণহত্যা আর যুদ্ধাপরাধকে কেন পাকিস্তান স্বীকার করবে না, কেন পাকিস্তানি জেনারেলদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে না– সে প্রশ্ন এবার খোদ পাকিস্তানেই জোরেশোরে উঠতে শুরু করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ তথা বিজয় দিবসের ৫১তম বর্ষপূর্তিতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির পত্রিকায় একাধিক লেখক-গবেষক-সাংবাদিক এই প্রশ্নগুলো প্রকাশ্যেই তুলেছেন। সেগুলো নিয়ে আলোড়নও হচ্ছে যথেষ্ঠ। আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তাদের স্মৃতিপট থেকে পাকিস্তান মুছে ফেলতে চাইলেও সে কাজ যে অসম্ভব সেটাও দিব্বি বোঝা যাচ্ছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নিবন্ধটি লিখেছেন লেখক ও গবেষক আনাম জাকারিয়া, যিনি ‘১৯৭১: আ পিপলস হিস্ট্রি ফ্রম বাংলাদেশ, পাকিস্তান অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ নামে একটি বইয়েরও রচয়িতা।

আনাম জাকারিয়া

আনাম জাকারিয়া

পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত দ্য ডন পত্রিকায় প্রকাশিত তার নিবন্ধটির শিরোনাম ‘তথ্য বনাম কল্পনা: অস্বস্তিকর ও অপ্রিয় সত্যগুলো পাকিস্তানকে মানতেই হবে’।

আনাম জাকারিয়া যুক্তি দিয়েছেন, একাত্তরের প্রসঙ্গ পাকিস্তানের পাঠ্যপুস্তকেও এড়িয়ে যাওয়া হয়। এরকম জটিল ও নানা পরতের ইতিহাসকে সারা হয় মাত্র কয়েকটি প্যারাগ্রাফে এবং দেশের মূল ধারার ডিসকোর্সে ‘৭১ আজও প্রায় নেই বললেই চলে’।

একাত্তরের ৫০ বছর পূর্তির আশেপাশের সময়কালে পাকিস্তানে এ নিয়ে কিছু ফিল্ম, টিভি সিরিয়াল বা ডকুমেন্টারি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানেও ঘুরেফিরে সেই একাত্তরের জন্য ভারতের ষড়যন্ত্র তত্ত্বকেই তুলে ধরা হয়েছে বা ‘বিহারি’ তথা আটকে পড়া পাকিস্তানিদের দুর্দশাই গুরুত্ব পেয়েছে– সেটাই আক্ষেপ লেখিকার। উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘খেল খেল মে’ নামে সাম্প্রতিক একটি মুভি ও ‘যো বিছর গয়ে’ নামে জনপ্রিয় একটি টিভি সিরিয়ালের কথা উল্লেখ করেছেন।

আনাম জাকারিয়ার কথায়, ‘পাকিস্তানে ভাবখানা যেন একটা ভুল হয়ে গেছে– সে যারই দোষ থাকুক, চলো দুজনেই মাফ চেয়ে নিয়ে সামনে এগোই।’ এখানে সুবিধা হলো, অন্যপক্ষ ক্ষমা না চাইলে পাকিস্তানেরও মাফ চাইবার কোনও দায় থাকে না!’

নিজেদের অতীত অপরাধকে বেমালুম ভুলে থাকার জন্য তিনি যেমন পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করেছেন, তেমনই ‘দ্য ফ্রাইডে টাইমস’ পত্রিকায় একটি নিবন্ধে আবার সরাসরি আঙুল তোলা হয়েছে পাক সেনাবাহিনীর তৎকালীন জেনারেলদের দিকে।

একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করা হোক, দাবি পাকিস্তানেই

‘ফিফটি ইয়ারস ওয়ান: হোয়াই আর পাকিস্তান জেনারেল নট হেল্ড একাউন্টেবল ফর ইভেন্টস ১৯৭১’ লেখাটি লিখেছেন আবদুল্লাহ রাজা নামে পাকিস্তানি একজন গবেষক, যিনি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব আয়ারল্যান্ডে পড়ান। তার যুক্তি হলো, পাকিস্তানি সেনা যে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে একটা ‘মাস ম্যাসাকার’ চালিয়েছিল এখন সেটা স্বীকার করার এবং দোষী সেনাধ্যক্ষদের বিচারের মুখোমুখি করার সময় এসেছে।

আবদুল্লাহ রাজা ওই নিবন্ধে বলছেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা বাংলাদেশে আসলে একটা ‘জিনোসাইডাল রেপ’ চালিয়েছিল। মেজর খাদিম হুসেইন রাজাকে (‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ বইয়ের লেখক) উদ্ধৃত করে তিনি আরও জানাচ্ছেন, পাক জেনারেল নিয়াজী বাঙালি অফিসারদের উপস্থিতিতেই হামেশা বলতেন ‘আমি বাঙালিদের জাতই বদলে দেবো’!

এমন কী একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ খুঁজতে যে হামুদুর রহমান কমিশন গঠিত হয়েছিল, সেখানেও সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েন সেনারা বলতো আমাদের কমান্ডার নিজেই যখন রেপিস্ট তাহলে আমরা কেন বাদ যাই!

এই ধরনের পাশবিক অপরাধ করেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কীভাবে আজও আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেলো– এই চরম অস্বস্তিকর প্রশ্নটিই তুলেছেন আবদুল্লাহ রাজা।

পাকিস্তানের প্রবীণ সাংবাদিক তোহা সিদ্দিকী (যিনি এখন প্যারিস প্রবাসী) আবার মনে করেন, ‘একাত্তরের লজ্জার ৫১ বছর পরেও পাকিস্তান আসলে তা থেকে কোনও শিক্ষাই নেয়নি!’

একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করা হোক, দাবি পাকিস্তানেই

নিজের সম্পাদিত পত্রিকা ‘সাউথ এশিয়া প্রেস’-এ তোহা সিদ্দিকী দুদিন আগেই লিখেছেন, ‘পাকিস্তান এখনও দেশের ভেতরেই বিভিন্ন এথনিক গ্রুপ বা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সিক্রেট অপারেশনস (গোপন অভিযান) চালিয়ে যাচ্ছে।’

তার বক্তব্য হলো, বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চরম অগৌরবের পরাজয় থেকে পাকিস্তান কিছু শেখেনি বলেই আজও বালোচিস্তানে বালোচদের বিরুদ্ধে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাশতুন তাহাফফুজ মুভমেন্টের বিরুদ্ধে কিংবা দক্ষিণে সিন্ধিদের বিরুদ্ধেও তাদের অভিযান জারি আছে।

এই ধরনের রাষ্ট্রীয় সমালোচনামূলক কথাবার্তা পাকিস্তানে কিছুদিন আগেও প্রায় অকল্পনীয় ছিল, কিন্তু এখন এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী সাহস করে একাত্তরের অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ তুলতে শুরু করছেন। তারা কেউ কেউ এমনও বিশ্বাস করেন, পাকিস্তান আগে যদি উপলব্ধি করে একাত্তরে তারা কত বড় অপরাধ করেছে, কেবল তার পরেই একদিন বাংলাদেশের কাছে তাদের ক্ষমা চাওয়ার পথ প্রশস্ত হতে পারে।