• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

চরের বাতিঘর নূরুদ্দিন মাদবরেরকান্দি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

শিবচর প্রতিনিধি: নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চলের একটি গ্রাম নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দিতে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি। শিবচর উপজেলার বন্দোরখোলা ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত পদ্মা নদীর চরের এই বিদ্যালয়টি চরাঞ্চলের বাতিঘর!। চরের ছোট ছোট প্রায় ২৪ টি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করছে। এই বিদ্যালয়ের কারণেই চরের ওই সকল গ্রামে পৌছে গেছে শিক্ষা। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে চরে বসবাসরত পরিবারগুলো। এক সময়ে নদীতে মাছ ধরতে পাঠানো, চাষাবাদের কাজে লাগানো বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়া শিশু-কিশোরদের শৈশব কাটছে বিদ্যালয়ে সময় কাটিয়ে। পরিবারগুলোও ছেলেমেয়েদেরকে পাঠাচ্ছে স্কুলে। লেখাপড়া শিখতে। ফলে দিন দিন দূর্গম চরাঞ্চলে বাড়ছে শিক্ষিতের হারও। মাধ্যমিক শেষ করে চরের ছেলে মেয়েরা এখন উপজেলা শহরে গিয়ে কলেজেও লেখাপড়া করছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও লেখাপড়া করছে বলে স্থানীয়রা জানান।
শিবচর উপজেলার ১৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে একটি ইউনিয়নের নাম বন্দোরখোলা। এই ইউনিয়নের একটি বিরাট অংশ পদ্মা নদীর চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত। উপজেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের ছোট ছোট অসংখ্য গ্রাম নিয়ে বন্দোরখোলা ইউনিয়নের একটি অংশ। কয়েক শতক আগে পদ্মার জেগে উঠা চরে মানুষের বসতি শুরু হয়। সেই থেকে নদীর ভাঙা-গড়া নিয়েই চরের বাসিন্দাদের জীবন। এই চর এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি প্রায় সকল পরিবারই পশু পালনের সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া অনেকে আবার নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। চর থেকে মূল ভূ-খন্ডের দূরুত্ব অনেক হওয়ায় শিক্ষা থেকে ইতোপূর্বে বেশ পিছিয়ে ছিল চরাঞ্চল। বর্তমানে চরাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নিরক্ষরতা দূর হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চরে বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যা বন্যাকালীন সময়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
এই চরের নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি গ্রামে ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস. ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি। বন্দোরখোলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টির কারণে শিবচর উপজেলার বন্দোরখোলা ইউনিয়নের মমিন উদ্দিন হাওলাদারকান্দি. জব্বার আলী মুন্সীকান্দি, বজলু মোড়লের কান্দি, মিয়া আজম বেপারীর কান্দি, রহমত হাজীর কান্দি, জয়েন উদ্দিন শেখ কান্দি, মসত খাঁর কান্দিসহ প্রায় ২৪ টি গ্রাম ও ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার চর নাসিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চরের এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের সকলেই চরের বাসিন্দা। মূল ভূ-খন্ড এখান থেকে বেশ দূরে হওয়ায় চরের ছেলে-মেয়েরা অন্যত্র গিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেতো না। এই বিদ্যালয়টি হওয়ার কারণে এখন চরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। চরের ছোট ছোট প্রায় ২৪ টা গ্রাম থেকে তিনশতাধিক শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করতে আসে। বিদ্যালয়টিতে দশ জন শিক্ষক ও তিন জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতি বছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হচ্ছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করলে তারা জানান,শিবচরের এমপি নূর ই আলম চৌধুরীর সুদৃষ্টি রয়েছে এই চরকে ঘিরে। চরের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে চরে। প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বহুতল ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। বর্ষার সময়ে চর এলাকা পানিতে তলিয়ে গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে পারে এ এলাকার মানুষ।’
তারা আরো বলেন,‘চরের খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে। লেখাপড়া শিখতে পারছে। এটাই বড় কথা। এই চরে যখন স্কুল ছিল না, তখন বৃহত এই চর পাড়ি দিয়ে দূরে গিয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব ছিল না এ এলাকার ছেলে-মেয়েদের। এখন ঘরের কাছে স্কুল হওয়ায় লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়ছে এই চরের অসংখ্য ছেলে-মেয়ে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিবচরের দূর্গম এই চরাঞ্চলে বিগত দশ বছর ধরে ব্যপক উন্নয়ন হচ্ছে। শিবচর থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। পাকা রাস্তা দিয়ে সহজেই চরের বিভিন্ন গ্রামে আসা-যাওয়া করা যাচ্ছে। সেসকল এলাকায় এখনো সড়ক যোগাযোগ নেই, সেখানে রাস্তা তৈরির কাজও চলছে। ছোট ছোট অসংখ্য কালভার্ট ও সেতু তৈরি করা হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য। আর এর পাশাপাশি শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও উন্নয়ন করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মান বাড়ানো, মাল্টিমিডিয়া ক্লাশের প্রচলনও করা হয়েছে চরের এ বিদ্যালয়ে।
বন্দোরখোলা ইউনিয়নের কাজির সূরা এলাকার বাসিন্দা মো. বাবু শেখ বলেন,‘ নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টির বয়স খুব বেশি না হলেও ইতোমধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে চর এলাকায়। লেখাপড়ার মান বৃদ্ধিতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন শিক্ষকগণ। আর এই স্কুলটির কারনেই চরের ছেলেমেয়েরা হাইস্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তা না হলে বেশির ভাগই প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্তই থাকতো। স্কুলটি এই চরের বাতিঘর! শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবজাল হোসেন জানান,‘স্কুলটি শিবচরের মূল ভূ-খন্ড থেকে দূরে অনেকটা দূর্গম এলাকায় অবস্থিত। এর ঠিক পেছনেই অল্প কিছুটা দূরে পদ্মা নদী। চরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আর চর এলাকার ছেলেমেয়েরাই এই স্কুলের প্রাণ। স্কুলটি চরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিতে পারছে। আমরা নিরলস ভাবে মানসম্মত লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো জানান,পদ্মার খুব নিকটবর্তী হওয়ায় বিদ্যালয়টি এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আগামী বর্ষায় টিকবে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা ইতোমধ্যে পদ্মা থেকে নিরাপদ দূরুত্বে একটি জায়গাও নির্ধারণ করে রেখেছি বিদ্যালয়টির জন্য। যাতে করে চরের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত না হয়।’