• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

১৮ বছর আগের যে রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি আজও

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৪  

ধুমধাড়াক্কা টি-টোয়েন্টির জন্মের পর ক্রিকেটের অনেক কিছুই বদলে গেছে। দ্রুত রান তোলাই যেন এখনকার ক্রিকেটের শেষ কথা। এমনকি টেস্ট ক্রিকেটের মতো ধ্রুপদী জিনিসেও ব্যাকরণবিরুদ্ধ আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে অনেক দল। জন্ম নিয়েছে বাজবলের মতো নতুন যুগের ক্রিকেট। কিন্তু তার আগের ক্রিকেটে যে মারকুটে ব্যাটিং ছিল না, এমনটাও নয়। বরং টি-টোয়েন্টি পূর্ব যুগের একটি রেকর্ড এই মারমার কাটকাট যুগের ক্রিকেটও ভাঙতে পারেনি আজও। অনেকে তো বলে এই এক ম্যাচেই বদলে গেছে ক্রিকেটের গতিপথ।

একটা সময় পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৫০ রানও জেতার জন্য পর্যাপ্ত ধরা হতো। তবে শূন্য দশকের ক্রিকেটে পিঞ্চ হিটিংয়ের যাত্রা শুরুর পর থেকে দ্রুত রান উঠতে থাকে ওয়ানডে ক্রিকেটে। তবে এরপরেও ৩০০ এর অধিক রান করলে জয় মোটামুটি নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া হতো। কিন্তু ক্রিকেট তো গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। মাঝেমাঝে এখানে ঘটে এমন বিস্ময়, যা ব্যাখ্যাতিত।

অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ বরাবরই আক্রমণাত্মক ও টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ উপহার দিয়েছে। যে সময়কার কথা বলা হচ্ছে তখন দুই দলই পার করছে স্বর্ণযুগ। বিশ্বক্রিকেটে তখন অস্ট্রেলিয়ার রাজত্ব। দক্ষিণ আফ্রিকাও তারকায় ঠাঁসা ভয়ঙ্কর এক দল। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে এই দুই দল উপহার দেয় সাদা বলের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর খেলার একটি। রান তাড়ার রেকর্ড বুকে যে ম্যাচের নামটি জ্বলজ্বল করছে সবার ওপরে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সেবার পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের প্রথম চার ম্যাচে দুই দলের জয়-পরাজয় সমান। ফলে ম্যাচটি পরিণত হয় সিরিজ নির্ধারণী খেলায়। সেই ম্যাচেই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে ৪০০ রানের গণ্ডি পার হতে দেখে বিশ্ব।

সেদিন টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ঝড়ো অর্ধশতকে দারুণ সূচনা পায় অস্ট্রেলিয়া। ষোলোতম ওভারের দ্বিতীয় বলে যখন ৪৪ বলে ৫৫ রান করা গিলি আউট হন, অস্ট্রেলিয়ার স্কোরকার্ডে জমা পড়েছে ৯৭ রান। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তাণ্ডব শুরু করেন অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ৯০ বলে ৭৯ রান করা সাইমন ক্যাটিচ ছাড়া অবশ্য সেদিন অজিদের সবাই ঝড় তুলেছিলেন। মাইক হাসির ৫১ বলে ৮১, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ১৩ বলে ২৭ রান বড় অবদান রাখে অস্ট্রেলিয়ার ৪০০ রানের গণ্ডি পার হতে। তবে মূল ভূমিকাটা পন্টিংয়েরই। দলের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১০৫ বলে ১৩ চার ও ৯ ছয়ে ১৬৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন পান্টার। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া সংগ্রহ করে ৪৩৪ রান। প্রথমবারের মতো ৪০০ রান দেখে ক্রিকেটবিশ্ব!

রানের বিশ্বরেকর্ড গড়া অজিদের জয় তখন নিশ্চিতই মনে হচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ রানের মাথায় ওপেনার বোটা ডিপেনারের উইকেট হারালে পাহাড়সমান লক্ষ্যটা আরও বড় দেখাচ্ছিল। কিন্তু ওয়ান ডাউনে হার্শেল গিবস নেমেছিলেন ভিন্ন চিন্তা করেই। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের অন্যতম গিফটেড স্ট্রোকমেকার এই ব্যাটার তাণ্ডব শুরু করেন। গিবস ঝড়ে কিছুক্ষণ আগে খেলা পন্টিংয়ের দুর্দান্ত ইনিংসটাও তখন ম্লান লাগছিল।

গিবস প্রথমে অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথের সঙ্গে বিস্ফোরক জুটি গড়ন। তাতে মাত্র ২২.১ ওভারেই ১৯০ রান তুলে ফেলে প্রোটিয়ারা। ৫৫ বলে ৯০ রানের ইনিংস খেলে স্মিথ বিদায় নেন। গিবস অবশ্য তখন পাগলাটে বুনো ষাড়। ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে জুটিতে মাত্র ৪৬ বলে যোগ করেন ৯৪ রান, যেখানে ডি ভিলিয়ার্সের অবদান ২০ বলে মাত্র ১৪ রান! ২৮৪ রানের মাথায় ডি ভিলিয়ার্স আউট হন।

প্রোটিয়ারা বড় ধাক্কা খায় এর কিছুক্ষণ পরেই। ২৯৯ রানে সায়মন্ডসের বলে ব্রেট লির হাতে ধরা পড়েন গিবস। তার আগে মাত্র ১১১ বলে ২১ চার ও ৭ ছয়ে খেলে ফেলেছেন ১৭৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতকের সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেন গিবস।

গিবসের বিদায়ের পর দ্রুতই আউট হয়ে যান জ্যাক ক্যালিস (২০) ও জাস্টিন কেম্প (১৩)। তবে উইকেটকিপার মার্ক বাউচার ও জোহান ফন ডার ওয়াথ এর জুটিতে ম্যাচ জমিয়ে তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। টান টান উত্তেজনায় দর্শকরা তখন দাঁতে নখ খুঁটছেন!

৩৯৯ রানের মাথায় ব্রাকেনের শিকারে পরিণত হন ফন ডার ওয়াথ। ১৮ বলে ৩৫ রান করে ফিরে যান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য তখনও দরকার ২১ বলে ৪০ রান। টি-টোয়েন্টির এই যুগেও লক্ষ্যটা মোটেও সহজ নয়, সেই যুগে তো ছিল আরও কঠিন।

প্রোটিয়া টেল এন্ডারদের নিয়ে এবার লড়াইটা শুরু করেন মার্ক বাউচার। রোজার টেলেমেকাস ৬ বলে ১২ ও আন্ড্রিউ হল ৪ বলে ৭ রান করে বিদায় নেন। জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ১ উইকেট, অন্যদিকে প্রোটিয়াদের ৩ বলে ৫ রান। ওভারের চার নম্বর বলে সিঙ্গেল নিয়ে বাউচারকে দেন এনটিনি। ব্রেট লির ওভারের পঞ্চম বলটি সজোরে বাউন্ডারি মেরে অবিশ্বাস্য এক জয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে উপহার দেন বাউচার, সেই সঙ্গে ৪৩ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি।

এই ম্যাচে প্রথমবারের মতো ৪০০ রানের গণ্ডি পার করে কোনো দল। একই ম্যাচে দুবার ৪০০ রানের ইনিংস দেখে ক্রিকেটবিশ্ব। রান তাড়া করে জয়ের নতুন বিশ্বরেকর্ড হয়, যা ১৮ বছর ধরে এখনো অটুট। এদিন ১০ ওভারে ১১৩ রান দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন অস্ট্রেলিয়ার মিকি লুইস।

২০০৬ সালের ১২ মার্চ তথা ১৮ বছর আগে আজকের দিনে এই ইতিহাস লেখা হয়েছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০ বা এর অধিক রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এই একটিই। ২০০৯ সালে রাজকোটে শ্রীলঙ্কা খুব কাছাকাছি গিয়েও এই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারেনি। সেদিন ভারতের দেওয়া ৪১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৪১১ রান তুলতে সমর্থ হয় শ্রীলঙ্কা। মাত্র ৩ রানে হারতে হয় তাদের।