• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

মাদারীপুর দর্পন

হারিয়ে যাওয়া হিমবাহের সন্ধান দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৩  

১৪ এপ্রিল, ১৯১২ সাল। একটি বিশাল হিমবাহ ঘুরে বেড়াচ্ছিল আটলান্টিক মহাসাগরে। সেই হিমবাহের সঙ্গেই ধাক্কা লেগে ডুবে গিয়েছিল সে সময়ের সবচেয়ে আলোচিত জাহাজ টাইটানিক। জলবায়ুবিজ্ঞানীদের ধারণা, এই হিমবাহ ১৯১০ বা ১৯১১ সালে গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম তীরের জ্যাকবশান গ্লেসিয়ারে তৈরি হয়েছিল। এমন অসংখ্য হিমবাহ ঘুরে বেড়াচ্ছে সাগর-মহাসাগরে। এসব হিমবাহের ওপর নজর রাখা বিজ্ঞানীদের জন্য বেশ কঠিন কাজ বটে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। হিমবাহ গলে যাওয়ার বিষয়টিও খালি চোখে বোঝা বেশ কঠিন। এ সমস্যা সমাধানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছেন বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যান ব্রাকম্যান-ফোলগম্যান বলেন, হিমবাহ শনাক্ত করে গলে যাওয়ার ধরন পর্যালোচনা করা বেশ সময়ের ব্যাপার। সমুদ্রে হিমবাহ গলে কী পরিমাণ পানি নতুন করে যুক্ত হচ্ছে, তা পরিমাপ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খালি চোখে এই পর্যবেক্ষণে অনেক সময় লাগে। অনেক তথ্য পর্যবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যায়। হিমবাহের সংকোচন নিরীক্ষণের লক্ষ্যে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবি ব্যবহার করা হয়। এসব ছবি থেকে দৈত্যাকার হিমবাহ গলে যাওয়ার বিষয়টি দ্রুত শনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রচলিত হিমবাহ শনাক্তকরণ পদ্ধতি কিছুটা ধীরগতির। অপর দিকে স্যাটেলাইটের ছবি থেকে তথ্য পেতে কয়েক মিনিট সময় লাগে। এর ফলে এআই ০.০১ সেকেন্ডের কম সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে দিচ্ছে, যা মানুষের তুলনায় ১০ হাজার গুণ দ্রুত।
এ বছর ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে অ্যান্টার্কটিকায় আচ্ছাদিত বিশাল বরফের আস্তর কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এই গলে যাওয়া বরফ খলনায়ক হিসেবে কাজ করবে। গত বছর সবচেয়ে বড় হিমবাহের একটি ‘এ৬৯এ’ গলে যায়। ১০০ মাইলের বেশি লম্বা ও ৩০ মাইল চওড়া ছিল এই হিমবাহ। অ্যান্টার্কটিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাঁচ বছর ধরে সমুদ্রে ভাসার পর দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে গলে যায় হিমবাহটি। আগামী কয়েক বছর ধরে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে এই হিমবাহের ভূমিকা দেখা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এই পরিবর্তন সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা উপগ্রহের ছবি ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন হিমবাহের নড়াচড়া ও সংকোচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।

অ্যান্টার্কটিক উপকূলরেখার উপগ্রহ ছবিগুলোর বেশির ভাগই হিমবাহের মতো দেখতে। আর তাই প্রকৃত হিমবাহ শনাক্ত করা বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ সমস্যা সমাধানে প্রথমবারের মতো গবেষকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সুবিধার নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির সেন্টিনেল-ওয়ান স্যাটেলাইটের ছবিযুক্ত এই নেটওয়ার্কের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত হিমবাহের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। দ্য ক্রায়োস্ফিয়ার জার্নালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হারিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি হিমবাহের সন্ধান দিয়েছে এআই। বিজ্ঞানীরা এআইয়ের মাধ্যমে ৯৯ শতাংশ নির্ভুলভাবে স্যাটেলাইট ছবি থেকে হিমবাহ শনাক্ত করতে পেরেছেন। এরই মধ্যে এআইয়ের মাধ্যমে ৫৪ থেকে ১ হাজার ৫২ বর্গকিলোমিটার আকারের সাতটি হিমবাহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
ইংল্যান্ডের নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু শেফার্ড বলেন, হিমবাহ আসলে খুব ধীরগতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই গবেষণা মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে বাস্তব সময়ে বিশ্বের দূরবর্তী ও দুর্গম অংশ পর্যবেক্ষণে ভূমিকা রাখবে। এআই টুলটি অন্যান্য প্রচলিত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মতো ভুল করছে না। বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতি অনেক সময় বরফের বিশাল খণ্ডকে হিমবাহ মনে করে ভুল করে।