• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফিরে আসবোই: শেখ হাসিনা জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি: শেখ হাসিনা আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন বাণিজ্যে বিপ্লব

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০১৯  

 

অনলাইন বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে। বর্তমানে ই-কমার্স বা অনলাইন বাজারে কেনাবেচা হচ্ছে হাজারো রকম পণ্য। সারা দেশে অনলাইন লেনদেন বিপ্লবে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার লোকের। ঘরে বসে অর্ডার দিলেই চলে আসছে পছন্দের পণ্য। প্রতিদিন এখন বাংলাদেশের বাজারে গ্রাহকরা ৩০ হাজারের বেশি পণ্য অনলাইন মাধ্যমে কিনছেন। বছরে এ খাতে লেনদেন হচ্ছে গড়ে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার পণ্য। শহর এলাকা ছেড়ে ই-কমার্স এখন গ্রামীণ ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে গেছে। অনলাইন বাণিজ্যের এই প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বের বৃহৎ অনলাইন জায়ান্ট কোম্পানিও বাংলাদেশের বাজারে আসছে। বিশ্বের বড় বড় ই-কমার্স সাইট বাংলাদেশি ভোক্তাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করছে। বেসরকারি উদ্যোগে সহযোগিতা দিতে সরকারও নীতি-সহায়তা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং নীতিমালা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পোস্ট অফিস। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পণ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশে ই-কমার্স বাড়ছে খুবই দ্রুত। তিন বছর ধরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় একশ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই খাত। বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনে নিবন্ধিত প্রায় ৯০০ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন পোর্টাল, অ্যাপস, ফেসবুকের মাধ্যমে পণ্য বাজারজাত করে এমন ছোট-বড় প্রায় ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের উৎপাদিত পণ্যে বাইরে বিদেশি পণ্যও বাজারজাত করে। ই-কমার্সে গাড়ি, মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে থ্রি-পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, বাচ্চাদের পোশাক, জুয়েলারি, চশমা, ঘড়ি, প্রসাধনী, ওয়ালেট, ঘর সাজানোর সামগ্রী, ইলেকট্রনিকসহ সব পণ্যই এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। এর দরদামও নাগালের মধ্যে। এ ছাড়া লেনদেনে পচনশীল দ্রব্য ফলমূল-শাকসবজি যেমন আছে, তেমনি ইলেকট্রনিক দ্রব্যও আছে। এমনকি জমি, ফ্ল্যাট বিক্রয়ের এখন বড় মাধ্যম ই-কমার্স। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার পণ্যের অর্ডার আসে অনলাইন বা ই-কমার্সের মাধ্যমে। গ্রাহকের ঘরে গিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হয় পছন্দের পণ্য। গড়ে একটি পণ্যে দর হাজার টাকা ধরলে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে প্রায় তিন কোটি টাকা। লেনদেনে দেশি পণ্যের পরিমাণই বেশি। তবে বিদেশি বিভিন্ন পণ্য আসছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও। শীর্ষ ই-কমার্স সাইটের মধ্যে রয়েছে- রকমারি, দারাজ, আজকের ডিল, পিকাবু, বাগডুম, প্রিয়শপ, বাংলা শপার্স, ক্লিক বিডি, কিকশা ও অথবা। এর মধ্যে দারাজ, আজকের ডিল, পিকাবু ও বাগডুম বিদেশি প্রতিষ্ঠান। দারাজ মূলত চীনের বিখ্যাত জায়ান্ট কোম্পানি আলিবাবা পরিচালিত। বাংলাদেশে এই নামেই পণ্য বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বখ্যাত আমাজনও বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পণ্য বাজারজাত করছে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে চাইছে।

প্রতি মাসে ই-কমার্সে নতুন নতুন সাইটের আগমন ঘটছে। ই-ক্যাব অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-কমার্সের ক্রেতারা মূলত শহরকেন্দ্রিক। এর মধ্যে ৮০ ভাগ ক্রেতা ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের। এদের মধ্যে ৩৫ ভাগ ঢাকার, ৩৯ ভাগ চট্টগ্রামের এবং ১৫ ভাগ গাজীপুরের অধিবাসী। অন্য দুটি শহর হলো নারায়ণগঞ্জ ও সিলেট। ৭৫ ভাগ ই-কমার্স ব্যবহারকারীর বয়স ১৮ থেকে ৩৪-এর মধ্যে। পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় মোবাইল ফোন এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রীর অনুসন্ধান সবচেয়ে বেশি বলে পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়া ফ্যাশন আইটেম, যেমন পোশাক, ঘড়ি ইত্যাদি বেশি অনুসন্ধান করা হয়। তথ্যমতে, মোবাইল এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও ৯৫ ভাগ ভোক্তা এখনো ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিকে বেশি পছন্দ করেন।

অনলাইন বাণিজ্যে সহায়তা দিতে সরকারও কাজ করছে। ইতিমধ্যে সরকার ডিজিটাল মার্কেটিং নীতিমালা জারি করেছে। এ ছাড়া বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে পাঁচ হাজার উদ্যোক্তাকে অনলাইন মার্কেটিংয়ে দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরে আরও ৫০ হাজার উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বর্তমানে ই-পোস্ট পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকা বিভাগে ২০টি পোস্ট অফিসে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলা শহরে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ৬৪ জেলা শহরের সব পোস্ট অফিসকে এর আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ই-কমার্স এখনো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অনলাইনে অর্ডার দেওয়া গেলেও এখনো নগদ অর্থেই লেনদেন হচ্ছে বেশি। এটিকে বলা হয় ক্যাশ অন ডেলিভারি। পণ্য হাতে পাওয়ার পর ক্যাশ পেমেন্টে নানা ঝুঁকি থাকায় উদ্যোক্তারা বেশির ভাগ সময় জটিলতায় ভোগেন। উদ্যোক্তারা এ সমস্যার সমাধানে সরকারের সহযোগিতা চান। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ই-ক্যাব অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনলাইন মার্কেটিং বাংলাদেশে যে হারে বাড়ছে, দ্ইু বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় লেনদেন প্লাটফর্ম হবে এই খাত। এ ছাড়া বিদেশি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আসছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। সারা দেশে উদ্যোক্তা তৈরি করছি। এ খাতে বতর্মানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এটি প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে অনলাইন লেনদেনে এখনো পেমেন্ট ব্যবস্থায় জটিলতা রয়েছে। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক, পোস্ট অফিসসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আলোচনা করছি।