• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে

ইসলামে যেসব বিষয় সত্যের মানদণ্ড নয়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০  

বর্তমান সমাজে কোরআন-সুন্নাহ ও তার অনুমোদিত বিষয় বাদে এমন কিছু বিষয়কে সত্যের মানদণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা ইসলামী শরিয়তে সত্যের মাপকাঠি হিসেবে অনুমোদিত নয়। যেমন,

১. স্বপ্ন : নবীগণের স্বপ্ন ছাড়া আর কারো স্বপ্নকে শরিয়ত দলিলের মর্যাদা দেয়নি। শরিয়ত স্বপ্নকে শুধু সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারীরূপে স্বীকৃতি দিয়েছে; এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে থুতু দিবে এবং আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং এ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর এ দুঃস্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। অপরদিকে ভালো স্বপ্ন দেখলে সুসংবাদ গ্রহণ করবে এবং এ স্বপ্নের কথা মহব্বতের লোকদের কাছেই বর্ণনা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৬১)

রাসুলে আকরাম (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল সে সত্যই আমাকে দেখল। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৬৬)। তবে মহানবী (সা.)-কে দেখা স্বপ্নও ইসলামী শরিয়তের আলোকেই বিচার করা হবে। কেননা ব্যক্তি তা সঠিকভাবে স্মরণ রাখতে পেরেছে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা আলোচ্য হাদিসে দেওয়া হয়নি।

ইমাম শাতেবি (রহ.) গ্রন্থে বলেছেন, ‘এসব বিদআতের মধ্যে দলিলের বিচারে সবচেয়ে দুর্বল সে দল, যারা তাদের আমল ও বিধি-বিধান গ্রহণের ভিত্তি বানিয়েছে স্বপ্নকে। স্বপ্নের ভিত্তিতেই তারা কোনো আমলের প্রতি অগ্রসর হয় বা বিরত থাকে।’ (আল ইতিসাম : ২/৬৬৪)

২. কাশফ ও ইলহাম : কাশফ হলো অদৃশ্য জগতের কোনো কথা প্রকাশিত হয়েছে বলে ধারণা হওয়া আর ইলহাম অর্থ চিন্তা ও চেষ্টা ছাড়াই কোনো কথা অন্তরে উদ্রেক হওয়া। স্বপ্নের মতো কাশফ-ইলহামও ইসলামী শরিয়তের দলিল নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষের অন্তরে শয়তানের পক্ষ থেকেও কথার উদ্রেক হয়, ফেরেশতার পক্ষ থেকেও কথার উদ্রেক হয়। শয়তানের উদ্রেক হলো, মন্দ প্রতিশ্রুতি ও সত্য অস্বীকার করা। আর ফেরেশতার উদ্রেক হলো, কল্যাণের প্রতিশ্রুতি ও হকের সত্যায়ন। যে ব্যক্তি এটি  (ভালো কিছুর উদ্রেক) অনুভব করবে তাকে বুঝতে হবে, এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। তাই তার উচিত আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা। আর যে দ্বিতীয়টি (খারাপ কিছুর উদ্রেক) অনুভব করবে সে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৮)

আর যে বিষয়টি ভালো-মন্দ উভয় সম্ভাবনা রাখে তা কখনো শরিয়তের দলিল ও হক-বাতিলের মাপকাঠি হতে পারে না। কোরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শরিয়তের আলোকে কাশফ-ইলহাম যাচাই করে নিতে হবে।

৩. নির্দিষ্ট জায়গা : পথভ্রষ্টার আরেকটি দিক হলো, নির্দিষ্ট কোনো জায়গাকে সত্যের মাপকাঠি বানানো এবং এর ভিত্তিতে হক না-হকের ফায়সালা করা। পৃথিবীর সবচেয়ে বরকতপূর্ণ স্থান মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার এই মসজিদের একটি সালাত অন্য জায়গার এক হাজার সালাতের চেয়ে উত্তম, মসজিদে হারাম ভিন্ন। মসজিদে হারামের একটি সালাত অন্য জায়গার এক লাখ সালাতের চেয়ে উত্তম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৬৯৪)

কোরআন-হাদিসের কোথাও এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি কিয়ামত পর্যন্ত এই দুই মসজিদের মিম্বর থেকে যা কিছু বলা হবে সব হক! এই দুই মসজিদে কখনো কোনো বিদআত, কোনো গোমরাহি আসন গাড়তে পারবে না। আর বাস্তবতাও তাই। জাহেলি যুগে বাইতুল্লাহ কাফের-মুশরিকদের দখলে ছিল। সেখানে মূর্তিপূজা হতো, সেখান থেকে কুফর-শিরকের আওয়াজ আসত। পৃথিবীর আরেক পবিত্র স্থান বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কোনো ভূখণ্ড কাউকে পবিত্র করতে পারে না। মানুষ পবিত্র হতে পারে একমাত্র আমলের মাধ্যমে।’ (মুআত্তা মালিক, হাদিস : ২৮৪২)

৪. ব্যক্তিবিশেষের অন্ধ অনুসরণ : ব্যক্তিবিশেষের অন্ধ অনুকরণ মুসলিম সমাজের নানাবিদ সমস্যা ও সংকট তৈরি করেছে। বিশেষত যে ব্যক্তি বা পীরের মাধ্যমে মানুষ দ্বিনের পথে আসে তার ব্যাপারে কোনো সমালোচনা শুনতে সে প্রস্তুত থাকে না। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ একজন রাসুল মাত্র। তাঁর আগে আরো বহু রাসুল গত হয়েছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না; বরং আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৪)

৫. কোনো বিশেষ বংশধারা : কোনো বিশেষ বংশধারা বা খানদানকে সত্যের মাপকাঠি মনে করা ইসলামী শরিয়তের মূলনীতি বিরোধী। কোনো বংশধারা যদি হকের মাপকাঠি হতো তবে নবী (সা.)-এর খানদানকেই হকের মাপকাঠি হিসেবে ঘোষণা করা হতো। কিন্তু কোরআন-সুন্নাহে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি নিজেও তা কখনো ঘোষণা করেননি। বরং বলেছেন, ‘আমল যাকে পিছিয়ে রেখেছে বংশ তাকে এগিয়ে নিতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)

৬. সাধারণ জনতার ঢল : সাধারণ জনতার ঢলও মাপকাঠি নয়। সাধারণদের মধ্যে ওই বিশিষ্টজনরাও আছেন, যাদের জাগতিক শিক্ষা আছে, পদ আছে, ক্ষমতা আছে, কিন্তু দ্বিনি ইলম নেই, শরিয়তের মূলনীতি ও হকের মাপকাঠি সম্পর্কেও সঠিক ইলম নেই; তারাও শরিয়তের দৃষ্টিতে সাধারণ। এরা কোনো পক্ষ গ্রহণ করার বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। তবে যারা শরিয়তের দলিল দিয়ে হক-বাতিলের বিশ্লেষণ করতে জানেন এমন জনতার ঢলকে দলিল ও মাপকাঠি বানানো যায়? হ্যাঁ, এই জনতার ঢল যদি হকের পক্ষে থাকে, আল্লাহর শোকর করা এবং বলা আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ এদের সহিহ রাস্তায় রেখেছেন।