• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

মাদারীপুর দর্পন

মিথ্যা প্রমাণিত হলো রেজা কিবরিয়ার বক্তব্য

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২  

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মামার বাড়ি নয়। চাইলেই সরকার ঋণ পাবে এমন নয়। সরকার সেখান থেকে ঋণ পাবে না - এমন মন্তব্য করেছিলেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা ড. রেজা কিবরিয়া। আইএমএফের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর আগেই এ কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তার বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বুধবার (৯ নভেম্বর) দুই দফায় কয়েকটি বৈঠকের পরই সহজ শর্তে বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি।

করোনা মহামারি ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, এ দুই কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। উন্নত দেশগুলোও ভুগছে চরম মুদ্রাস্ফীতিতে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের জন্য আইএমএফকে চিঠি পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কথাবার্তা চালাচালির আগেই দেশে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এ ঋণ প্রসঙ্গ।

গণফোরাম ছেড়ে গণঅধিকার পরিষদে যোগ দেয়া রেজা কিবরিয়া সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, সরকার চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আইএমএফ থেকে সহজে ঋণ পাবে না বাংলাদেশ।

সম্প্রতি রেজা কিবরিয়া বলেছিলেন, ‘যে লোকটি বলেছেন (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আমার জানা মতে, তার কোনো মামা নেই সেখানে। ওই খাতির তারা ((আইএমএফ) করবে না। আমার ধারণা সরকার আটকে যাবে। কারণ তারা ব্যাংকিং খাতে গভীরভাবে দুর্নীতিতে জড়িত; তাদের সব প্রিয় লোকরা জড়িত; সুতরাং তারা এ শর্তে ঋণ পাবে না।’

অথচ চিঠি দেয়ার সাড়ে ৩ মাসের মাথায় দুই দফা আলোচনার মধ্যেই ঋণ দিতে রাজি হয় সংস্থাটি।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাহুল আনান্দ জানান, বাংলাদেশ কখনও ঋণখেলাপি হয়নি।

১০ সদস্যের আইএমএফ স্টাফ প্রতিনিধিদলের নেতা রাহুল আনন্দ সচিবালয়ে অর্থ বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, স্টাফ-লেভেলের এ সমঝোতা আইএমএফ ব্যবস্থাপনার অনুমোদন এবং নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষ। আর তা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার পর ঋণ পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এবং মহামারির ফলে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হয়েছে; যার ফলে চলতি হিসাবের ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দ্রুত পতন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ যখন এই তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, তখন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার হুমকিসহ দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সমস্যা মোকাবেলা করা গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) অবস্থা থেকে সফলভাবে স্নাতক হওয়া এবং ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ, যা এর অতীতের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে় তুলতে এবং প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে কাঠামোগত সমস্যা মোকাবেলা করতে ভূমিকা রাখবে।

রাহুল বলেন, এ পটভূমিতে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রাথমিক পদক্ষেপ অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষ আইএমএফ সমর্থিত একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা অত্যধিক প্রয়োজনীয় সামাজিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তাছাড়া এটি এর বাহ্যিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, দুর্বলতা হ্রাস করবে এবং একটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, কঠিন কোনো শর্ত ছাড়াই বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ।

অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া সমস্যা আইএমএফের ঋণ কার্যকরে ভূমিকা রাখবে। এ অর্থের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলেও মত তার।

এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির কাছ থেকে আমরা যতটা সুবিধা পাই ভালো; যদি বৈদেশিক অন্যান্য সাহায্য সংস্থা থেকেও পাই সেগুলো যদি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমাদের বৈদেশিক প্রবাহটা বাড়বে। সেই সব জায়গাতে আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি থেকে মোট ঋণের পরিমাণ ৪৬৮ কোটি মার্কিন ডলার। আগামী তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা ও অনুমোদন সম্পন্ন হয় তাহলে ২৩ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রথম কিস্তি ৩৫২.৩৫ মিলিয়ন (৩৫ কোটি ২৩ লাখ ৫গ হাজার) ডলার পাবে বাংলাদেশ। বাকি ঋণ প্রতি ৬ মাস অন্তর ৫১৯ মিলিয়ন (৫১ কোটি ৯০ লাখ) করে ৬টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে।