• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

শিবচরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত দরিদ্র মেধাবীর বাড়িতে গেলেন চীফ হুইপ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩  

মাদারীপুর প্রতিনিধি: চলতি বছর এইচএসসিতে মাদারীপুরের শিবচরের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পিতা ও মাতা হারা দরিদ্র মেধাবী সাইমা জামানের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সাইমা জামানের সাফল্য গাথা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ পেলে বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার নজরে আসে। শেখ রেহানা চীফ হুইপকে সাইমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ব্যবস্থা গ্রহনের ব্যবস্থা নিতে বলেন। শনিবার চীফ হুইপ পদ্মা তীরবর্ত্তী চরাঞ্চলে সাইমাদের বাড়িতে যান। ভাল ফলাফলের জন্য তিনি সাইমা ও তার বিধবা চাচীর মিরজান বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এসময় মাদারীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরীসহ নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ফলাফল প্রকাশের পরই চীফ হুইপ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাইমাদের বাড়িতে মিষ্টি পাঠান। চীফ হুইপ বাড়িতে আসায় অভিভূত সাইমা ও তার পরিবার। তারা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এই নেতার প্রতি। এরআগেও চীফ হুইপ এসএসসি ও এএইচসিতে জিপিএ -৫ প্রাপ্ত অসংখ্য দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বাড়ি মেরামত, বৃত্তি ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। সরেজমিনে জানা যায়, শিবচর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্ত্তী বন্দরখোলার ইউনিয়নের মল্লিককান্দি গ্রামের মরহুম পান্নু মল্লিকের জমজ সন্তানের সাইমা জামান চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ অর্জন করে। সৌদি প্রবাসী বাবা পান্নু প্রবাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২০০৯ সালে তখন সাইমা ও তার সিয়ামের বয়স ৩ বছর। মধ্যবিত্ত পরিবারটি হঠ্যাৎ ভাগ্যের চাক উল্টো ঘুরতে শুরু করে। এর ২ মাস পরই একমাত্র চাচা মিনু মল্লিকও মারা যায়। সাইমার বয়স যখন ৫ বছর তখন মা চলে যায় অন্যের ঘরে। দাদা মনজু মল্লিক ও বিধবা চাচী মিরজান বেগম তার ছোট্ট দুই সন্তান ও সাইমাদের ২ ভাই বোনকে নিয়ে শুরু করে নতুন জীবন সংগ্রাম। ৪ বছর আগে মারা যায় বৃদ্ধ দাদাও। তবু থেমে থাকে মিরজান বেগম। নিজের সন্তানের মতোই বড় করতে থাকেন সাইমাদেরও। সাইমা রাজারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে পায় জিপিএ ৪.৮৯। এরপর ভর্তি হন উপজেলার দত্তপাড়ার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজে। চাচাতো ভাই মনজু মল্লিক ও চাচীর সহায়তা ছাড়া কলেজে ভর্তি ছিল কল্পনা মেয়েটির জন্য। সাইমা গ্রামের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মাসিক ৩ শ টাকা করে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ ও কলেজে যাতায়াত ব্যবস্থা করতো। অর্থের অভাবে নিয়মিত কলেজেও যাওয়া হতো না এই অদম্যর।১০ বছর আগে দাদার রেখে যাওয়া ইটের গাথুনির বাড়ির দেয়ালে এখনো দিতে পারেনি পলেস্তারাও। ভাল ফলাফল করারও পরও উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার নিয়ে শংকিত ছিল সাইমা ও তার পরিবার। বিষয়টি জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও আওয়ামী লীগ সংসদীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক নূর-ই-আলম চৌধুরীর নজরে আসে । চীফ হুইপের নির্দেশে প্রতিনিধিরা সাইমার বাড়িতে মিষ্টি ও উপহার সামগ্রী নিয়ে যান। সাইমার ঘর মেরামতের জন্য টিন ও নগদ অর্থ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাজিবুল ইসলাম। অদম্য সাইমা বলেন, চীফ হুইপ স্যার আমার বাসায় এসেছেন এটা কোনদিনও ভাবিনি। আমি ও আমার পরিবার মাননীয় চীফ হুইপ স্যারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমার লেখাপড়া যেখানে অনিশ্চিত ছিল সেখানে আর কোন ভয় নেই। চাচী মিরজান বেগম বলেন, এর চাইতে ভাল আর কি হতে পারে। আজকের দিনটা আমাদের জন্য গর্বের। চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জিপিএ -৫ অনেকেই পায় । কিন্তু সাইমার প্রাপ্তিটা অন্যরকম। ওর বাবাসহ অনেকে মারা যাওয়ার পরও ওর চাচী চেষ্টায় সে এই অর্জন করেছে। তাই অদম্য মেধাবী সাইমা ও ওর চাচীকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি।এছাড়াও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ওর পাশে দাড়ানোর জন্য আমাকে বলেছেন। তাই আমি শুভেচ্ছা বিনিময় করে গেলাম। আমরা সব সময় দরিদ্র ও মেধাবীদের পাশে থাকি।