• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

যমজ ৩ ভাইয়ের মেডিক্যালে ভর্তি, মায়ের স্বপ্নপূরণ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

মাফিউল হাসান গত বছর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এবার সাফিউল হাসান দিনাজপুর মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে এবং রাফিউল হাসান নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

বিস্ময়কর বিষয় হলো, মাফিউল, সাফিউল ও রাফিউল তিন জনই যমজ সহদোর। এক পরিবারের তিন ভাই চিকিৎসক হতে যাচ্ছেন, এমন খবরে শুধু বগুড়ার ধুনট উপজেলায় নয়, পুরো জেলা ও দেশে আলোচনা চলছে।

জানা গেছে, বগুড়ার ধুনটের সদর ইউনিয়নের বথুয়াবাড়ি গ্রামের স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফা ও গৃহিণী আর্জিনা বেগম দম্পতির ঘরে গত ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর তিন যমজ সন্তানের জন্ম হয়। প্রথমে সাফিউল হাসান সাফি, এর কিছুক্ষণ পর মাফিউল হাসান মাফি ও রাফিউল হাসান রাফির জন্ম হয়। তাদের সংসারে আরও এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।

২০০৯ সালে স্থানীয় মাঠপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা হৃদরোগে মারা যান। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে সন্তানরা হয় এতিম। মা আর্জিনা বেগম সন্তানদের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের সব দায়িত্ব মাথায় নেন। স্বামীর রেখে যাওয়া বাঙালি নদীর তীরে ছয় বিঘা জমি ও বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া কিছু সম্পত্তেই ছিল তাদের সম্বল।

সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে মর্জিনা বেগম শুরু করেন সম্পত্তি বিক্রি। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের পাশে দাঁড়ায় তখন।

তিন ভাই ধুনট নবীর উদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। গত বছর তিন মেধাবী ভাই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেন। মাফিউল হাসান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হন। প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ায় সাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান কঠোর পরিশ্রম করেন। এবার তারা দিনাজপুর ও নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। খবরটি জানাজানি হলে তাদের বাড়িতে পড়শীরা ভিড় করেন।

রত্নগর্ভা মা আর্জিনা বেগম বলেন, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার সন্তানরা এতিম হয়। তারা বাবার স্নেহ ও ভালোবাসা পায়নি। আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ও বাপের বাড়ির থেকে পাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে তাদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি।

সন্তানদের নিয়ে গর্ব করে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ছেলেদের চিকিৎসক বানাতে প্রয়োজনে আর যা আছে, তা বিক্রি করবেন। সন্তানরা চিকিৎসক হয়ে যাতে গরিব মানুষের সেবা করতে পারে, সে দোয়া করি।

গত বছর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া মাফিউল হাসান মাফি জানান, তারা তিন ভাই বগুড়ায় মেসে থেকে সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজের পড়েছেন। তাদের মা অনেক কষ্ট করে জমিজমা বিক্রি করে তাদের পড়িয়েছেন। তিন ভাই একসঙ্গে চিকিৎসক হবেন, এটা ভাবতে অনেক ভালো লাগছে।

এ বছর দিনাজপুর মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সাফিউল হাসান বলেন, ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মা আমাদের দেখভাল করেছেন। আজ বাবা থাকলে অনেক খুশি হতেন। চিকিৎসক হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারি, সে জন্য দোয়া চাই।

নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া রাফিউল ইসলাম বলেন, বড় হয়ে বাবার হৃদরোগে মৃত্যুর কথা জানতে পারি। তখনই তিন ভাই ডাক্তারি পড়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আজ ডাক্তার হয়ে দরিদ্র মানুষের সেবা করতে চাই।

তিন ভাইয়ের প্রতিবেশী মোবারক হোসেন বলেন, যমজ তিন ভাইয়ের মেডিক্যাল কলেজ ভর্তির বিষয়টি পুরো গ্রামের জন্য গর্বের। দোয়া করি তারা চিকিৎসক হয়ে যেন গরিব মানুষের সেবা করে।

ধুনট নবীর উদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিন ভাই স্কুলে আসে, তখন তাদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত হই। তারা মিষ্টি নিয়ে এসে দোয়া চেয়েছে। তারা মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ায় শুধু আমি নই; পুরো এলাকার মানুষ গর্ববোধ করছেন।