• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে যত পরিকল্পনা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৪  

বিগত ২০২০ ও ২০২১-এর করোনা মহামারির পর ঘুরে দাঁড়ালেও বৈশ্বিক মন্দার কারণে আবারও সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। অর্থনীতির সেই ধাক্কা সবচেয়ে বেশি সংকট তৈরি করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থাপনায়। হু হু করে বাড়তে থাকে ডলারের দাম, সেই সঙ্গে ডলার সংকট। অন্যদিকে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। যার রেশ এখনো টানছে বাংলাদেশ। তবে সেই তীব্র সংকট এখন কিছু কমতির দিকে। ডলারের দামেও কিছুটা নমনীয় ভাব এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। চলতি রমজান ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও বাড়তে শুরু করেছে।

তবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। রাজস্ব আদায়ে অর্থবছরের আট মাসে ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর ২০২৪-২৫ এর জন্য বাজেট প্রণয়নের কাজ। আসছে বছরটিকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অর্থবছর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী বাজেটে থাকছে দেশের অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর পরিকল্পনা। থাকছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের স্থবিরতা কাটানোর উদ্যোগ। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট আলোচনাগুলোতে এসব বিষয়েও আলোকপাত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সবশেষ গত সপ্তাহে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক প্রাক বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। আগামী জাতীয় বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট । এতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগকে আকর্ষিক করার মতো প্রকল্প ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এ বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হবে চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের পথ দেখানো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করলেও আন্তর্জাতিক নানা চাপ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। তৈরি পোশাক খাতের ওপর আমেরিকা বা ইউরোপিয় ইউনিয়নের বিধিনিষেধ এলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ। এমনিতেই উচ্চ বৈদেশিক ঋণ, ডলার সংকট, নেতিবাচক ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাজার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতিহীনতায় দেশের অর্থনীতি থমকে আছে। ফলে নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেটটি সরকারের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর বাজেট হবে বলে মনে করেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা ও ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে এরই মধ্যে ঢাকায় আসবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল। যার একটা প্রভাব পড়বে নতুন বাজেটে। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সংকট মোকাবিলায়। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে নতুন বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট হবে।

অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি খাতের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। যার ফলে আসছে বছরে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের ইতিবাচক গতি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি মাসের ২২ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪১ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে তা ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের দুই মাস পরই রয়েছে ঈদুল আজহা। যা বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ফলে অর্থবছরের বাকি সময়গুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সরকারকে কিছুটা চিন্তায় ফেলেছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি। যা আসছে অর্থবছরে আরও বাড়বে। ফলে আগামী বাজেটে ঋণ পরিশোধ সহজ করতে কার্যকর কিছু পদেক্ষপও নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম আট মাসে সরকার সুদ ও আসলসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ২০৩ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সুদ ৮০ দশমিক ৫৯ কোটি ডলার এবং আসল ১২২ দশমিক ৪০ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের একই সময় অর্থাৎ প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ পরিশাধ করেছিল ১৪২ দশমিক ৪১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৮ মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৬১ কোটি ডলার। ঋণ পরিশোধের এ চাপ আসছে বছরে আরও বাড়বে। যা সামাল দিতে হলে বৈদিশক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সরকারকে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে। এবং একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হবে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এবার বহুমাত্রিক সংকট রয়েছে দেশের অর্থনীতিতে। আবার বৈদেশিক সহায়তার পরিধিও কমে আসছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাবে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর এই ঘাটতি কমার কোন সম্ভাবনাও নেই। আবার বৈদিশক ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে আরও বাড়বে। এটাও সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনে করেন।