• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

দুজনকে কুপিয়ে করেন উদযাপন, একজন মারা গেলে আত্মগোপনে যান তারা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৪  

ছিলেন একই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদক কেনা-বেচাসহ বিভিন্ন দ্বন্দ্বের জেরে পৃথক গ্যাং তৈরি করেন। এরপর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। চলমান এ বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের দুজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পার্টি করে উদযাপন করেন একটি গ্রুপের সদস্যরা। পার্টি শেষে যখন শুনতে পান আহতদের মধ্যে একজন মারা গেছেন, তখনই দেশের বিভিন্নস্থানে আত্মগোপনে চলে যান আসামিরা।

রাজধানীর পল্লবীতে ‘পেপার সানী’ গ্রুপ ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রুপের দ্বন্দের জেরে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ফয়সাল হত্যার ঘটনায় কিশোর গ্যাং লিডারসহ ৫ জনকে গ্রেফতারের পর এসব কথা জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেফতাররা হলেন-হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মো. আকাশ ওরফে টান আকাশ (২২), ফজলে রাব্বি ওরফে হিটার রাব্বি ওরফে গালকাটা রাব্বি (২০), মো. ইমরান (২৫), মো. রাসেল কাজী (২৪) ও নয়ন (২৫)।

দুজনকে কুপিয়ে করেন উদযাপন, একজন মারা গেলে আত্মগোপনে যান তারা

শুক্রবার (২২ মার্চ) নরসিংদী ও গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাব্বি ও আকাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি বাগান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় পল্লবী এলাকায় দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে ফয়সাল নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে র‌্যাব। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুর এবং নরসিংদী থেকে মূল আসামিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, গ্রেফতাররা এবং নিহত এক সময় মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং ‘পেপার সানী’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। গালকাটা রাব্বি পেপার সানী গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু ৪-৫ মাস আগে মাদক কেনা-বেচা নিয়ে ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের কোন্দল ঘিরে রাব্বি ওই গ্রুপ থেকে বের হয়ে ‘গালকাটা রাব্বি’ নামে পৃথক গ্রুপ তৈরি করে।

দুজনকে কুপিয়ে করেন উদযাপন, একজন মারা গেলে আত্মগোপনে যান তারা

এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। ঘটনার প্রায় ১ মাস আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বিকে মারধর করে পায়ের রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় তারা রাব্বিকে উদ্ধার করে। গত ১৫ মার্চ দুই গ্রুপের মধ্যে আবার মারামারি হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, এতে রাব্বি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এছাড়া, ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা রাব্বি গ্রুপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করলে রাব্বি আরও ক্ষিপ্ত হয়।

এর মধ্যে গ্রেফতাররা জানতে পারে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা একটি ইফতার পার্টিতে গেছে। নিহত ফয়সাল ও রানা স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টি শেষে ফেরার পথে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের ওপর হামলা করে রাব্বী গ্রুপের সদস্যরা। এ সময় ফয়সাল ও রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাতারি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রুপের এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় পার্টি করে উদযাপন করেন। পার্টি শেষে তারা জানতে পারে ফয়সাল হাসপাতালে মারা গেছে ও রানা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

দুজনকে কুপিয়ে করেন উদযাপন, একজন মারা গেলে আত্মগোপনে যান তারা

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেফতার এড়াতে তারা প্রথমে নেত্রকোনায় আত্মগোপন করে দুই দিন অবস্থান করে। পরে মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, গ্রেফতার রাব্বির বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি ও মাদক সংক্রান্তে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা রয়েছে এবং এর আগে একাধিক বার কারাভোগ করেছে। আকাশের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে, সেও একাধিকবার কারাভোগ করেছে।

এছাড়া গ্রেফতার রাসেল, ইমরান ও নয়ন কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রুপের সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাব্বীর গ্রুপের ১৪-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যাদের অধিকাংশই আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য ছিল। পরে তারা সেই গ্রুপ থেকে বের হয়ে নতুন গ্রুপে যোগ দেয়। এখন পর্যন্ত তাদের ইন্ধনদাতা বা মদতদাতার তথ্য পাওয়া যায়নি। পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধেও র‌্যাবের অভিযান চলমান।