• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

মাদারীপুর দর্পন

বাজারে ডায়াবেটিসের নকল স্ট্রিপ, মোড়ক ছাপা হয় নয়াপল্টনে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

নামী বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির ডায়াবেটিস মাপার স্ট্রিপের নকল করে বাজারে ছেড়েছে ‘ফার্মা সল্যুশনস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এর নকল মোড়ক তৈরি করা হচ্ছে রাজধানীর নয়াপল্টনে ‘প্রিন্ট ওয়ান’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া অন্য কেউ এতে সম্পৃক্ত কিনা, তার অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে ডায়াবেটিসের নকল স্ট্রিপ বিক্রয় প্রতিরোধে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে কী পরিমাণ অননুমোদিত ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বাজারজাত করছে, সেই তথ্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে চেয়েছে ভোক্তা অধিদফতর।

সভায় ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘ফার্মা সল্যুশন’ নামে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই ব্যাচের স্ট্রিপ তাদের প্রতিষ্ঠানের নয় বলে তদারকি টিমকে জানানো হয়। অতঃপর লাজ ফার্মার কাকরাইল শাখায় তদারকিতে গিয়ে দেখা যায়, বর্ণিত ব্যাচের স্ট্রিপ প্রতিষ্ঠানটি ফার্মা সল্যুশন থেকে ক্রয় করেছে এবং তার ভাউচারও তদারকি টিমকে সরবরাহ করে তারা।

উল্লেখ্য, নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের উক্ত ব্যাচ নম্বর দিয়ে এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রোশ (প্রসিদ্ধ জার্মানি ওষুধ ও মেডিক্যাল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান) বরাবর ই-মেইল করে জানা যায়, ওই ব্যাচের কোনও স্ট্রিপ তাদের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিতই হয়নি।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফার্মা সলুউশনের কুনিপাড়া বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযানে গিয়ে যাচাই করে প্রমাণ হয় যে, উক্ত প্রতিষ্ঠান লাজ ফার্মা কাকরাইল শাখাকে বর্ণিত নির্দিষ্ট ব্যাচের নকল ডায়াবেটিস মাপার স্ট্রিপ সরবরাহ করেছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি জনস্বার্থে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি অধিদফতরে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য থেকে জানা যায়, তারা নয়াপল্টনের ‘প্রিন্ট ওয়ান’ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে এসব নকল ডায়াবেটিস মাপার স্ট্রিপের মোড়ক তৈরি করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নয়াপল্টনে অবস্থিত প্রিন্ট ওয়ান নামক প্রতিষ্ঠানে সরজমিনে তদারকিতে এর সত্যতা পাওয়া যায়। অতঃপর জরিমানা আরোপসহ ওই প্রতিষ্ঠানটিও জনস্বার্থে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

সভায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মাহবুব হোসেন নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের উপর চালানো অভিযানের জন্য অধিদফতরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপসহ অন্যান্য নকল ওষুধ ও ডিভাইস শনাক্তকরণে সকলের সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

এসময় ভোক্তার মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে ফার্মেসি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ১৬৫-১৭০টি দেশে ওষুধ রফতানি করে থাকে। তবে কিছু ওষুধ ও ইকুইপমেন্ট আমদানি করতে হবে।’

তিনি ওষুধ ও মেডিক্যাল ডিভাইসের উপর অধিদফতরের চালানো অভিযানে প্রাপ্ত বিভিন্ন অসঙ্গতি তথ্য তুলে ধরেন। এসব অসঙ্গতির মধ্যে আছে আমদানিকৃত ওষুধ ও ইকুইপমেন্টে খুচরা বিক্রয়মূল্যসহ আমদানিকারকের তথ্য না থাকা, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্ধারণ করা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ডিভাইস বিক্রয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস পাওয়া, ফ্রিজে ডিভাইস ও ওষুধের সাথে কাঁচা সবজি পণ্য সংরক্ষণ করে রাখা, পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় রশিদে কার্বন কপি ব্যবহার না করা; এসব বিষয়েও আলোচনা করেন ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক।

এসময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন সেক্রেটারি মো. জসিম উদ্দিন, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া, আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর সংস্থার প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা।