• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর তাগিদ আইএমএফের

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  

অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মুদ্রাবিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং বৈদেশিক লেনদেনে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কাটিয়ে উঠার তাগিদ দিয়েছে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মিশন।
এছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ও আগামী বাজেটে ব্যয় সংকোচন এবং ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে মিশন।

বুধবার আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল প্রথম দিন অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বুধবার অর্থ বিভাগের বাজেট এবং ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে মূলত চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়ন ও আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত এবং  সার্বিক অর্থনীতির অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত হচ্ছে চলতি অর্থবছরের পাশাপাশি আগামী অর্থবছরেও কর জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে।

তবে সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচন থাকায় বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বরভিত্তিক রিজার্ভ ও কর আহরণের বেশকিছু লক্ষ্যমাত্রা কমাতে সম্মত হয় আইএমএফ। এর আলোকে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড় মোটামুটি নিশ্চিত।

লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে সংশোধিত কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।

বিপরীতে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা আদায় করেছে সরকার। তবে পুরো অর্থবছরে শেষে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের নয় মাসের রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষণ করে এনবিআর নিজেই জানিয়েছে, জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থাকতে পারে।

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয় দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেক বছর থেকে আলোচনা হলেও তেমন উন্নতি হয় নি। বরং ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা কমে গত কয়েক বছর কর জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ জন্য করনীতি  এবং কর আহরণ কর্তৃপক্ষ আলাদা করার পুরানো আলোচনাও পুনরায় উঠে এসেছে।

তিনি জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আগামীতে সহজ শর্তের এবং কম সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর ঋণের সুদহার বেড়েছে। আগামী আরও বাড়বে। বাজেট সহায়তা নিলে বিভিন্ন ধরনের শর্ত বিষয় আসে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো গেলে বাজেট সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন হয় না।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে সংস্থাটি পিছিয়ে রয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে রাজস্ব বাড়াতে না পারা। সরকার যে বাজেট দেয় তা জিডিপির অনুপাতে বেশ ছোট। বাজেট আরো বড় করে বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু পর্যাপ্ত রাজস্ব না আসায় এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যাচ্ছে না। যা সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।

রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত গতি না থাকা এবং সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গত অর্থবছর থেকেই ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি নিয়েছে সরকার। তবে আগামীতে আরো ব্যয় সংকোচনের পরামর্শ দিয়েছে মিশন।

মিশন বলেছে, যেসব জায়গায় ভর্তুকি কমানোর সুযোগ রয়েছে সেক্ষেত্রে ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি সংশোধিত বাজেটে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশে সীমিত রাখা  প্রয়োজন। চলতি বাজেটে বাজেটে এক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি ৪ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার সুপারিশ করেছে আইএমএফ মিশন।

এদিকে  বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি কিছুটা বাড়ায় এরই মধ্যে চলতি হিসাবে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রয়েই গেছে। চলতি হিসাবে স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি আর্থিক ঘাটতি কাঠিয়ে উঠার তাগিদ দেওয়া হয়। সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে উদ্যোগ নেয়া হলেও কেন কমছে  না এবং আরো কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আইএমএফ গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। এরইমধ্যে দুই কিস্তিতে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস নাগাদ তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছয়টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে সরকার।