• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে

শেখ হাসিনার চার দশক: সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২১  

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার ঘটনাটি বাঙালির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৭ মে দিনটি বাঙালীর কাছে ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ হিসেবে পরিচিত। জাতির পিতার হত্যার পর বাংলাদেশ যখন তার আদর্শচ্যুত হয়ে উল্টো পথে চলছিল, সেদিনের সেই বৃষ্টিস্নাত বিকেল থেকে শুরু হয়েছিল আদর্শহীন শাসনের বিরুদ্ধে এক নিরন্তর সংগ্রামের অভিযাত্রা। ২০২১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক। ২০২১ এ বাংলাদেশে তার নেতৃত্বেরও চার দশক। এই চার দশক ছিল সংগ্রামের, ছিল অর্জনের।

এই চার দশকে শেখ হাসিনা একদিকে যেমন উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তেমনি পালন করেছেন চার দফায় রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। আওয়ামী লীগের এক সংকটময়কালে শেখ হাসিনা সভাপতি হিসেবে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দলটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতায় জাতির পিতার এই সংগঠনকে প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাড় করান। জাতির পিতার হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বাংলাদেশের মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে একটানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি। শেখ হাসিনা সাত দশক বয়সী আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চার দশক  ধরে।

পচাত্তুর পরবর্তী অন্ধকার সময়ে সেদিন তিনি ফিরে এসেছিলেন বলে আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে পেরেছিলাম। গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছিলাম। মানুষ তার অধিকার ফিরে পেয়েছিল। তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হেনরী কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির মতো ষড়যন্ত্রমূলক অপবাদ মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছন। আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রের উন্নতিতে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিশ্বে আজ এক অনন্য উদাহরণ। সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের মানসকন্যা থেকে শেখ হাসিনা আজ ‘উন্নয়ন কন্যা’য় ভূষিত। তার মানবিকতা আর মমত্ববোধের জন্যে তিনি ‘মানবতার মা’ হিসেবেও অভিষিক্ত। তিনি এসেছিলেন বলে খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদশ আজ খাদ্য রপ্তানির দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জাতির পিতা সূচিত বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম সফল পরিণতির দিকে যাচ্ছে। পঁচাত্তরে পিতার হত্যার পর দেশের স্বাধীনতার সূর্য যখন প্রায় অস্তমিত হতে যাচ্ছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রত্যাবর্তন আর তার নেতৃত্বের জন্যেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির সার্থকতা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি আজ পর্যন্ত যা কিছু অর্জন করেছে, তার সবটুকুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কারণেই হয়েছে।

ফিরে আসার পর শেখ হাসিনা সংবিধান লঙ্ঘনকারী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই শুরু করেছিলেন। সেই লড়াইয়ে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার দাবিতেই এদেশে জবাবদিহিতামূলক সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতার হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তিনিই বাতিল করে খুনিদের বিচার শুরু করেছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো রাষ্ট্রে এই ধরনের বর্বর কালো আইন জারীর ইতিহাস নেই । খুনিদের বিচার এখনও কার্যকর করা হচ্ছে।

জাতির পিতার হত্যার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মহান আদর্শগুলোকে দুর্বল ও প্রয়োজনে ভুলুন্ঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এই প্রক্রিয়ায় ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হলো। ওই সময়ে তারা ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মেতে উঠল। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হল। সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি নিষিদ্ধ করা হলো। সেই অন্ধকার সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাতি বয়ে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তিনি মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন, ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করেছেন। তার হাতে পিতার আদর্শের বাতি দেখে মানুষ প্রজ্জ্বলিত মশাল নিয়ে ছুটেছিল। তিনি নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়েছেন আদর্শের চেতনা, তাদের দেখিয়েছেন নতুন স্বপ্ন -বাংলাদেশের স্বপ্ন। তার এই সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তার ছড়ানো আদর্শ আর তাঁর দেখানো স্বপ্নে মানুষ জেগে উঠেছিল। তিনিই তাদের বুঝিয়েছেন, এই রাষ্ট্রের মালিক  জনগণ – এটি রিপাবলিক, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কুক্ষিগত সত্তা নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা কে  বাঙালি বারে বারে সমর্থন দিয়েছে, তাদের সবটুকু ভালবাসা তারা তাঁকে উজার করে দিয়েছে।

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তিনিই এই সংবিধান থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সকল বিধান বাতিল করেছিলেন। তিনিই ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি সফলভাবে সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তৈরি করেছেন যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তিনিই  এদেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের গাড়িতে যখন জাতীয় পতাকা উড়ছিল, তখন এদেশে তাদের বিচার হবে না – এই রকম একটা ধারণায় যখন মানুষ হতাশাগ্রস্ত ছিল, তিনিই তখন জাতির সামনে আশার আলো প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন। জাতির পক্ষে ঘোষণা দিয়ে এই নরঘাতকদের তিনি বিচার করেছিলেন। বাঙালির ইতিহাসে জাতি হিসেবে এটি একটি মাইলফলক অর্জন ছিল। এর কৃতিত্ব প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার।

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি অনন্য সাফল্য দেখিয়েছেন। জাতির পিতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকার প্রধান যিনি জ্বালানী নিরাপত্তার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। এতো অল্প সময়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন রাষ্ট্র এই ধরণের উন্নয়নের নজির স্থাপন করতে পারেনি।

প্রিয় নেত্রী রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যা যা করনীয় তার সবটুকুই করেছেন। তার কারণেই বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ন্যায্য পানি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র এই ধরনের চুক্তি করতে পারেনি। অন্যান্য নদী থেকেও চুক্তির মাধ্যমে পানি আনার উদ্যোগ তিনিই গ্রহণ করেছেন। অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে একদিকে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, অন্যদিকে ঐ এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব টেকসই করার জন্য যথাযথ আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র্য সত্তাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। এই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী চুক্তির জন্য তিনি অনায়াসেই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেতে পারতেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক লবি’র কারণে তাঁকে সেটি দেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে, জননেত্রীর সব অনন্য সাফল্যের জন্য তিনি অসংখ্য বিশ্বখ্যাত পুরষ্কার ও অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন।

তিনি আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার, পরিবেশ, জ্বালানী নিরাপত্তা, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনিত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র তারই। মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ আর ভালবাসার কারণে তিনি আজ বাংলাদেশকে রূপান্তরিত একটি কার্যকরী কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে। এদেশের মানুষের জন্য তার প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা। শেখ হাসিনার দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন মডেল বিশ্বব্যাপী এমনভাবে প্রশংসিত হয়েছে যে, পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শেখ হাসিনার দারিদ্র বিমোচনের এই মডেল অনুসরণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই তিনি দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা করেছেন। দেশি-বিদেশি সকল বিশেষজ্ঞ ও গবেষকের হাইপোথিসিস’কে ভুল প্রমাণ করে তার সুদক্ষ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে তিনি মিয়ানমার ও ভারতের দাবির বিরুদ্ধে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছেন। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর খুব কম দেশই এত সফলভাবে সমুদ্রের উপর তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এই কৃতিত্ব কেবলই বঙ্গবন্ধু কন্যার।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বাংলাদেশে অবস্থিত গ্যাস সম্পদ সহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদ বিদেশি শক্তি সমূহের কাছ থেকে অবমুক্ত করে আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছিলেন, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা তথা সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন তারই কন্যা আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বার্থে তিনি এই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন বলেই ২০০১ সালে এক প্রহসনমূলক নির্বাচনে তাকে হারানো হয়েছিল।

জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ উদ্যোগ ও কার্যকরী ডিপ্লোমেসির কারণে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সাথে স্থল-সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে, অথচ পাকিস্তান সরকার ২৪ বছরে এবং বাংলাদেশে জিয়া-এরশাদ, খালেদা জিয়ার সরকারসহ আওয়ামী লীগের বাইরের সরকারগুলোর ২৮ বছরসহ মোট ৫২ বছরের শাসনামলে ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।

প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা  দেশের তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু সহ স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার এই পদক্ষেপ উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি করোনাভাইরাস উদ্ভুত সকল বিষয় ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে পারদর্শিতার সাথে মোকাবেলা করছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় যা যা প্রয়োজন তিনি তাই করছেন। দেশের মানুষকে বাঁচাতে ও অর্থনীতিকে রক্ষা করতে তিনি লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার অনুদান ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর খুব কম রাষ্ট্রনায়ক এই ধরণের যুগান্তকারী উদ্যোগ নিতে পেরেছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রাম আর উন্নয়নের এই অভিযাত্রায় তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। এমনকি তাকে বেশ কয়েকবার হত্যা চেষ্টাও হয়েছিল। পিতা-মাতা-ভাই সহ পরিবারের প্রায় সবাইকে হারিয়েও তিনি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য এখনও অদম্য গতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার আরেক কন্যা শেখ রেহেনাও সব হারিয়ে ভালবাসা আর মমতা দিয়ে বড় বোনকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন। এদেশের মানুষের কল্যাণে এবং জাতীয় স্বার্থে শেখ হাসিনা অবিচল। তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল এবং সেই চেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে, কারণ তাকে সরিয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশকে থামান যাবে, বাংলাদেশের অগ্রগতিকে দমানো যাবে। ৭৫ এ একই কারণে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ বিরোধী গোষ্ঠীটি জানে, তাকে থামাতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ গুলোকে আবার নির্বাসিত করা যাবে, আবার ভূলুণ্ঠিত করা যাবে।

চার দশক আগে ১৭ই মে প্রিয় নেত্রী ফিরে এসেছিলেন অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে। তারা পরাস্ত হয়েছে। তবে তাদের প্রেতাত্মারা এখনও আনাগোনা করছে। জননেত্রীর সংগ্রামের সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। নেত্রী ফিরে এসেছিলেন  বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। বঙ্গবন্ধুর পর তিনিই বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকবর্তিকা। ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সকল অর্জন শেখ হাসিনার  কারণেই। তার জন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে। যতদিন এই বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, জননেত্রীর সকল মহান কীর্তির জন্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ততদিন তার নামটিও থাকবে দেদীপ্যমান। তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে।

লেখকঃ ড. সেলিম মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ