• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

সুস্থ সচল আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি আতিকুলের

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২০  

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম 'সুস্থ ঢাকা, সচল ঢাকা, আধুনিক ঢাকা' গড়ার প্রত্যয়ে ত্রিমুখী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে গুলশানের লেক শোর হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় আতিক বলেন, ‘আমার প্রধান লক্ষ্য আনিস ভাইয়ের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে কাউন্সিলরদের প্রত্যেক বছর সম্পদের হিসাব দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’

সবাইকে মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে, এ জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভঙ্গুর দেশের দায়িত্ব নিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলার কাঠামো দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুরু হয়েছিল দেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রা। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাব মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আমাদের প্রগতিশীলতা, উন্নয়ন-অগ্রগতি-সবকিছুকেই স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনকাল সীমাহীন দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কারণে, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি শুধু স্থবিরই হয়নি, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবারও বাংলাদেশের মানুষ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।’

শুরু হলো আলোর পথে যাত্রা...

অতিকুল ইসলাম আতিক বলেন, ‘১১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আজ আলোয় উদ্ভাসিত। উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূর প্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) পূরণে এক রোল মডেল। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২০ - এ অংশ নিচ্ছি।’

আতিক বলেন, ‘আজ  সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে পারবো।  ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকা, যার বাঁকে বাঁকে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংগ্রাম আর বিনির্মাণের গল্প। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের জনবহুল শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের মানুষের যাপিত-জীবনে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ শহর আমাদের কাছে বড় আবেগের,বড় ভালোবাসার।’

তিনি বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ উদযাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। এরইমধ্যে এ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ  বিশ্বসভায় সমাদৃত। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। সেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এই মহোৎসব দু'টির অপেক্ষায় গোটা বাঙালি জাতি।’’

মেয়র প্রার্থী আতিক বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিগত ১০/১১ বছরে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এগিয়ে বর্তমানে এসে উপস্থিত হয়ছে। সেই অগ্রযাত্রার দিশারী আমাদের প্রিয় শহর ঢাকা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রাজধানী ঢাকার উন্নয়নে বহু কাজ করেছে। আরও বহু কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি শহরের প্রাণ হচ্ছে শহরের পাড়া ও মহল্লাগুলো। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে গেলে প্রতিটি এলাকা, পাড়া ও মহল্লাকে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। প্রতিটি এলাকাভিত্তিক সমস্যা শনাক্ত করে সেগুলোর স্থায়ী সমাধানের মধ্য দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনই নগরীর সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। যার ফলে এই নগরীতে বসবাস করা মানুষগুলো সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আমার প্রধান লক্ষ্য, এই নগরীকে কেবল বসবাস উপাযাগী নয়, বরং নগরবাসীর জীবনমানেরও উন্নতি সাধন করা।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০১৯ সালের উপ-নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারের অধিকাংশ কাজই শুরু হয়েছে, উল্লেখ করে আতিক বলেন, ‘আমার গত ৯ মাসের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর ঢাকা গড়ার লক্ষ্য অর্জনে পেশ করেছি আমার ত্রিমুখী ইশতেহার।  চলুন, এক নজরে দেখে নেই একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলতে আমার পরিকল্পনা।’

সুস্থ ঢাকা গড়ে তুলতে ১৩টি ওয়াদা করেছেন আতিকুল ইসলাম। এগুলো হলো-

১) উন্নত বিশ্বের মতো ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিতে বছরব্যাপী মশা নিধন।
২) টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটি স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্যকে জ্বালানি ও শক্তিতে পরিণত করা।
৩) তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে শহরের সব ওয়ার্ডে নিয়মিত পাড়া উৎসব আয়োজন করা।
৪) বস্তিবাসীদের জন্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
৫) প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নাগরিকদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া।
৬) ডিএনসিসির বর্ধিত এলাকায় কম্প্রিহেনসিভ রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ কেয়ার সেন্টার ও প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার নির্মাণ।
৭) মিরপুরে বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ।
৮) সবার জন্য উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ।
৯) বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক পশু জবাই কেন্দ্র স্থাপন।
১০) ডিএনসিসির প্রতিটি স্থাপনায় মাতৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ।
১১) বিশেষভাবে সক্ষম ও সবার জন্য আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।
১২) মিস্ট ব্লোয়ার ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো।
১৩) ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরি।

সচল ঢাকা- শিরোনামেও আছে ১৩টি ওয়াদা। এগুলো হলো -
১) ফুটপাত দখলমুক্ত করে ফুটপাথ নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
২) যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
৩) পথচারী পারাপারে বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিংয়ে ডিজিটাল পুশ বাটন স্থাপন
৪) নগর পরিবহনে ই-টিকেটিং সেবা।
৫) শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
৬) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য গণস্থাপনা ও গণপরিবহন নিশ্চিতকরণ।
৭) নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ।
৮) হকারদের পুনর্বাসন ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা।
৯) আনিসুল হকের পরিকল্পনা ঢাকা বাস রুট র‌্যাশনাইলেজেশরের কাজ সম্পন্ন করা।
১০) এসকেলেটরসহ ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ।
১১) সাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও সাইকেল পার্কিং।
১২) স্মার্ট বাসস্টপ ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।
১৩) প্রতিটি মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান ট্র্যাক করা।

আধুনিক ঢাকা- শিরোনামে ১২টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আতিকুল ইসলাম। এগুলো হলো -
১) সবার ঢাকা অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকি করা। মেয়রের সঙ্গে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা।
২) ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্য নাগরিক সেবা প্রদান।
৩) ডিএনসিসির মালিকানাধীন কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য স্ট্রাকচারাল আপগ্রেডেশন।
৪) একটি সার্বক্ষণিক ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরি যার মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হবে।
৫) নগর পরিকল্পনাবিদ রাষ্ট্রপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ।
৬) সব লেট খালের সংস্কার উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধকের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন।
৭) বায়ুদূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু করা।
৮) ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তৈরি হবে হেল্প ডেস্ক।
৯) উত্তর ঢাকাকে একটি স্মার্ট সিটি করে তুলতে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি এলাকায় স্মার্ট নেইবার হুড হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
১০) তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সেবা কেন্দ্র গঠন।
১১) প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
১২) জাবেদা নিষিদ্ধ করতে জনতার মুখোমুখি মেয়র শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান।