• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ষড়যন্ত্রকারী ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২১  

বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত চলছে। এই ষড়যন্ত্র নির্মূল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭৩ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত দুদিনব্যাপী প্রথম জাতীয় মহাসম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দেড় লাখের বেশি মুক্তিযোদ্ধা এই সম্মেলনে যোগ দেন। মুক্তিযোদ্ধারা যে মানসিকতা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই একই মন নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য তাদের প্রতি বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানান। উদ্বোধনী অধিবেশনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের নেতারাসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন কঠিন, তা রক্ষা করাও কঠিন। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতার পতাকা উঁচু রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ কোনও শক্তির তাঁবেদার হবে না

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ বিশ্বের কোনও শক্তির তাঁবেদার হবে না। বাংলাদেশ তার জোটনিরপেক্ষ স্বাধীন নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে চলবে। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন—বাংলাদেশ কারও পকেটে যাবে না।

মুক্তিযোদ্ধাদের মহাসম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত ও অন্য বন্ধুদের অকৃত্রিম সহযোগিতা, সাহায্য ও সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীনের ভূমিকায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তিযুদ্ধে চীন পাকিস্তানের সামরিক ও পুঁজিবাদী সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল।’

মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানোর নিন্দা 

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মহাসম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ তার ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানোর তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘‘কতিপয় বিদেশি পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পুরোপুরি ভারতকে দায়ী করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। পত্রপত্রিকায় এই মর্মে মন্তব্য করা হয়—‘পাকিস্তানের দুর্বল মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে।’ এটা সত্যের অপলাপ মাত্র। কারণ, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বরের  আগে মুক্তিযোদ্ধারাই মাত্র গুটিকয়েক শহর এলাকা ছাড়া সারা বাংলা মুক্ত করেছিলেন।’’

 

যোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ

যাতে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারাই উপকৃত হতে পারেন, এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে যারা সত্যি সত্যি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল, তাদের ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। পরে সরকারি তালিকা পরীক্ষা করে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করতে চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে ট্রাস্ট করা হয়েছে, তার তহবিল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এর সঙ্গে ভারত ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে।’

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্যে সত্যিই কিছু করতে পারিনি। তবে কেন করতে পারিনি তা তোমরা ভালোভাবেই জানো। কারণ, তোমরা বাংলাকে জানো।’ এ প্রসঙ্গে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে কী পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল এবং তার সরকার কোন অবস্থায় কীভাবে কাজ শুরু করেছিল, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। এরমধ্যে সরকার ৪ কোটি টাকা মূলধনসহ  মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্ট গঠন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

বাংলার মানুষ অকৃতজ্ঞ নয়

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আজকাল একটি ফ্যাশন হয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা। কিন্তু ভারত স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সাহায্য করেছে, তা অতুলনীয়। তারা এক কোটি লোককে আশ্রয় দিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তা করেছে। স্বাধীনতার পর চার লাখ টন খাদ্যশস্য দিয়ে সাহায্য করেছে। ভারত উদারভাবে এ সাহায্য না করলে বাংলার মানুষকে দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতো না।’ তবে কোনও সাহায্যই স্বাধীনতার বিনিময় নেওয়া হয়নি বলে তিনি ঘোষণা করেন।

দেশমাতৃকায় দাসত্বের বন্ধন মোচনে শপথ

শপথ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। সেই একই মনোভাব নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ও সমাজবিরোধীদের রুখে দাঁড়াবার জন্য জাতির জনক সাবেক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। এদিন ৩৫ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই ময়দান থেকেই আমি একদিন তোমাদের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলাম। তোমাদের যার যা আছে তা-ই নিয়ে বর্বর পাক হানাদার শক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে। লাখ লাখ মা-বোনের অশ্রুতে বাংলা স্বাধীন হয়েছে। এই অপশক্তি বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও তাদের অনুসারীরা গাঢাকা দিয়ে রয়েছে। তারা বাংলার অর্জিত স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য গোপনে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।’