• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

রাজৈর মুক্ত দিবস

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

মাদারীপুর প্রতিনিধি: গতকাল ৪ ডিসেম্বর ছিল মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের ঐ দিনে ভোরের প্রথম আলো ফোটার মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত হয় জেলার এই উপজেলাটি। তবে রাজৈর মুক্ত দিবস নিয়ে কারো তেমন আগ্রহ নেই উপজেলায়। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে উপজেলা নেই কোন স্মৃতিস্তম্ভও।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে জেলার রাজৈর উপজেলায় পাক হানাদার বাহিনী আস্তানা গড়ে তোলে। তবে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে আগস্ট মাসের প্রথম দিক থেকে হানাদারদের আক্রমন করতে শুরু করে।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আক্রমন করে হানাদারদের ক্যাম্পে। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় পাক বাহিনীর সাথে। রাত গড়িয়ে দিনের আলো ফুটে উঠে। ৪ ডিসেম্বর ভোরে রাজৈর উপজেলা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ছাগলছিড়া এলাকায় পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। এবং সেখান থেকে বন্দি হয় ১৩৫ জন পাক হানাদার। বিজয়ের পতাকা উড়ে। শত্রæমুক্ত হয় রাজৈর উপজেলা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার পাখুল্যা, লাউসার, কদমবাড়ি, কমলাপুর, মহিষমারী, ইশিবপুর, কবিরাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসব অস্থায়ী ক্যাম্প থেকেই পাক বাহিনীর সাথে লড়াই করে মুক্তিযোদ্ধারা।

রাজৈরে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর মুক্তিকামী মানুষের কয়েক হাজার ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দয়ে। খালিয়ার সেন্দিয়ায় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা আখ ক্ষেত ও ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে পলায়নরত অবস্থায় একদিন ১৩১ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে।

পাকবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় রাজৈর বড় ব্রিজ, আমগ্রাম ব্রিজ ও টেকেরহাটে। তবে এর মধ্যে পাখুল্যায় মুখোমুখি যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। এই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন সাবেক রক্ষীবাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল (অব.) সরোয়ার হোসেন মোল্যা।

জানা গেছে, পাখুল্যায় সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত সম্মুখযুদ্ধ হয় হানাদার বাহিনীর সাথে। এছাড়াও ১৯৭১ সালের ঈদের আগের রাতে রাজৈর উপজেলার বৌলগ্রামে পাক বাহিনীকে অবরুদ্ধ করে রাখে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে ৩ ডিসেম্বর মধ্য রাতে পাকবাহিনী রাজৈর ছেড়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পালিয়ে যায়।

পরের দিন ৪ ডিসেম্বর গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় ১৩৫ জন পাক হানাদারকে আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রæমুক্ত হয় রাজৈর উপজেলা!

রাজৈর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সেকান্দার আলী বলেন,‘বিজয়ের মাস আসলেই মুক্তিযুদ্ধের কথা আপনারা জানতে চান। পত্রিকায় লেখেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই বার্তা পৌছে দিতে হবে। রাজৈর উপজেলায় ১৯৭১ সালে কতটা কষ্ট করেছে মানুষ। কত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে। কত ত্যাগের বিনিময়ে রাজৈর শত্রæমুক্ত হয়েছে। রাজৈর একটা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা প্রয়োজন। যাতে করে বর্তমান প্রজন্ম এই স্মৃতিস্তম্ভ দেখেও যেন উপলদ্ধি করতে পারে।’