• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

দেশে ধাপে ধাপে ব্যবসা শুরুর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২০  

 

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্থবির বিশ্ব অর্থনীতি। বাদ নেই বাংলাদেশও। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মানুষের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে ধাপে ধাপে বা ভৌগোলিকভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ঠিক কোন পদ্ধতিতে এর সূচনা হবে সে ব্যাপারে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের। 

অর্থনৈতিক দুরবস্থার মুখে সম্প্রতি মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করার ব্যাপারে অনেক করোনা আক্রান্ত দেশই ভাবনাচিন্তা করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কয়েকটি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাকে করোনার প্রাদুর্ভাব অনুসারে ‘গ্রীন’ ও ‘অরেঞ্জ’ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রীন জোনের মধ্যে নাগরিকদের সীমিত আকারে চলাচলের অনুমতি দিতে যাচ্ছে কয়েকটি রাজ্য। দেশটির খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকলেও আগামী সোমবার থেকেই সে নির্দেশনা কিছুটা শিথিল হবে। 
 
এ ধরনের নজির সামনে রেখে বাংলাদেশেও কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে সরকারকে ভাবতে বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ‘পথ’ বের করতে হবে। 
 
এ ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অংশীদার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’র (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম খুলে দিতে হবে, অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে হলে অবশ্যই খুলে দিতে হবে। তবে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা একটি স্বাস্থ্যগত সংকট থেকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে যাচ্ছি। এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, অর্থনৈতিক সংকট থেকেও স্বাস্থ্য সংকটের জন্ম হতে পারে। দারিদ্র, খাদ্যাভাব থেকে এমনটা হতে পারে। কিন্তু আশংকার বিষয় হচ্ছে, আমরা জানি না যে, বাংলাদেশ বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির ঠিক কোন অবস্থায় আছে। আমরা করোনার ‘পিক ফেজ’ (যে ধাপে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে) অতিক্রম করেছি কি না জানি না। কেউ কেউ বলছেন, পিক ফেজের দিকে যাচ্ছি আমরা। স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি আমরা হিউম্যানিটেরিয়ান (মানবিক) সংকটের মধ্যে দিয়েও যাচ্ছি।
 
দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে কিছু বিদেশি রাষ্ট্রকে অনুসরণ করা যেতে পারে উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্য দেশের উদাহরণ দেখতে পারি আমরা। এ ক্ষেত্রে জার্মানি এক দারুণ উদাহরণ। তারা কিন্তু পিক ফেজ অতিক্রম করে লকডাউন অনেকটাই শিথিল করেছে। বিভিন্ন খুচরা ও সেবাখাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। যদিও উৎপাদন এখনও শুরু করেনি। তাদের মতো আমাদের এখানেও হতে পারে। ভৌগোলিক বা এলাকাভিত্তিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হতে পারে অথবা খাতভিত্তিক হতে পারে অথবা ধাপে ধাপে সামগ্রিকভাবে হতে পারে। ঠিক কোনভাবে এটা শুরু হতে পারে, সে বিষয়টি সরকার এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে যারা অভিজ্ঞ আছেন তাদের মতামতে হতে পারে, কারণ স্বাস্থ্য সুরক্ষাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকবে।
 
দেশের আরেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ কাজী খলিকুজ্জামান অর্থনীতি সচল রাখতে কৃষি ও সেবাখাতে সরকারি ভর্তুকির সঠিক বণ্টনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, সবার আগে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা। এরপর খাদ্য নিরাপত্তা। দেশের সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সীমিত ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কিছুদিন চলা সম্ভব। তবে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা করোনার কারণে কর্মহীন হলেন তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য কৃষি এবং সেবাখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রণোদনা ও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে।
 
দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে খলিকুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এমনটা করতে পারলে ভালো হয়। যেমনটা অনেক দেশ, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো করেছে। ভিয়েতনাম খুবই ভালো করেছে। করোনা সংক্রমণ হওয়া মাত্রই তারা নাগরিকদের ঘরে রেখে দ্রুত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। সেখানে আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু সেভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এরপরই আবার তারা পরিস্থিতি দ্রুত সামলে নিয়ে অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করেছে। বাংলাদেশে সমস্যা হচ্ছে, আমাদের এখানে জনগণ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়গুলো সেভাবে মানে না। অন্য আরও অনেকে দেশের জনগণও মানে না। কিন্তু কিছু করতে হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই করতে হবে।