• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

তৃতীয় টার্মিনালে বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর হবে শাহজালাল

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০২০  

পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) ও এক হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার— সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে।

টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরের সারিতে নাম লেখাবে শাহজালাল। ২০১৯ সালের শেষে শুরু হওয়া এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে।

এ টার্মিনাল নির্মাণে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মাণের ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় সাত হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনালটিতে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি ভবন তৈরি করা হবে। ভবনটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট ভেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি।

সরেজমিনে টার্মিনালের নির্মাণাধীন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টি আর কাদার মধ্যেও পুরোদমে নির্মাণকাজ চলছে। জায়গাটির ভূমি উন্নয়নের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। প্রায় তিন হাজার পাইলিংয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ৭০০টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজ আমি ব্যক্তিগতভাবে সুপারভাইজ করছি। প্রতি সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ডেকে কাজের আপডেট নিচ্ছি। করোনাকালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণকাজ চলছে। ৭০০টি পাইলিংসহ ইতোমধ্যে টার্মিনালের ৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ সম্পন্ন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই বিমানবন্দর বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে একটি হবে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশেই কমবে। পাশাপাশি এ বিমানবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তৃতীয় টার্মিনালের ভেতরে ভবনটির নকশা যে বিখ্যাত স্থপতি করছেন, সেই রোহানি বাহারিন বিশ্বের কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দর ভবনেরও নকশাবিদ। তার নকশা কাজের মধ্যে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পের নকশা করেন তিনি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালের ভবনে বহির্গমনের (ডিপার্চার) জন্য ১৫টি সেলফ চেক-ইন (স্ব-সেবা) কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। বহির্গমনে ৬৪ ও আগমনী যাত্রীদের জন্য ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে। এছাড়া ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ও ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে।

বর্তমানে ভিভিআইপিদের জন্য শাহজালালে পৃথক একটি কমপ্লেক্স থাকলেও তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভেতরে কমপ্লেক্স না করে পৃথক ভিভিআইপি স্পেস রাখার কথা ছিল। তবে শোনা যাচ্ছে, প্রকল্পে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে বিধায় একটি ভিভিআইপি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হতে পারে।

স্বাভাবিক সময়ে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দৈনিক ১৩০টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ২৫ থেকে ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। বর্তমানে এই বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রী হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। তৃতীয় টার্মিনাল হওয়ার পর শাহজালালের হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বেড়ে দুই কোটিতে গিয়ে ঠেকবে।

সম্প্রতি নির্মাণকাজের অবস্থা পরিদর্শন শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, নির্মাণকাজ নিজ গতিতে চলছে। নির্মাণ স্থানের মাটির অবস্থার কারণে স্ক্রুড পাইলিংয়ের পরিবর্তে বোর পাইলিংয়ে কাজ চলছে। এর কারণে প্রকল্প ব্যয় কোনোভাবেই বাড়বে না বরং মোট প্রকল্প ব্যয় থেকে ৭৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয়কৃত টাকা দিয়ে সরকার ও জাইকার সম্মতি এবং অন্যান্য বিধিগত প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি সাপেক্ষে তৃতীয় টার্মিনালে নির্মিতব্য ১২টি বোর্ডিং ব্রিজের অতিরিক্ত আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ ও একটি ভিভিআইপি টার্মিনাল কমপ্লেক্স নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্ধারিত মেয়াদ ২০২৩ সালের জুনের মধ্যেই তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে তা যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।