• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ওয়ানডে বলেই খুনে মেজাজে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২২  

৫০ ওভারের ম্যাচ মানেই যেন খুনে মেজাজের বাংলাদেশ! সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে ম্যাচ ছিনিয়ে আনা যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর কেউই প্রত্যাশা করেনি বাংলাদেশ সিরিজ তো দূরে থাকুক, কোন ওয়ানডে জিতবে! কিন্তু মাঠে নামতেই সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে তামিম ইকবালের দল। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটিতে ক্যারিবীয়দের বিন্দুমাত্র সুযোগ দেয়নি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। দাপটের সঙ্গে ম্যাচ জিতে ৩১তম সিরিজ জয় উদযাপন করলো সাকিব-মুশফিকবিহীন বাংলাদেশ।

শুধু ৩১তম সিরিজ জয়ই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা ১০ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। আগের সর্বোচ্চ দশটি জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি জিতলে টানা ১১ জয়ের ইতিহাস গড়বে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে নিয়ে যে কেউই বাজি ধরতে চাইবে। দেশ হোক আর দেশের বাইরে— এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ যেন খুনে মেজাজের অপ্রতিরোধ্য এক দেশ।

অথচ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর কেউই এতোদূর ভাবতে পারেনি। তার মধ্যে ওয়ানডে দলে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। মুশফিক তো পুরো সিরিজেই নেই। দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য ছাড়া এই লড়াই যেন অকূল সাগর পাড়ি দেওয়ার শামিল। অথচ তাদের ছাড়াই সেই সাগর অনায়াসে পাড়ি দেওয়া গেছে তামিমের দারুণ নেতৃত্বে। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও দারুণ নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। শুধু কী নেতৃত্বই, সামনে থেকে পারফরম্যান্স করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন।

প্রথম ওয়ানডেতে ৬ বিশেষজ্ঞ ব্যাটার ছাড়া ৫ জন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তামিম। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে শুরুতেই বোলাররা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। বাকি কাজটুকু অনায়াসেই করেছেন ব্যাটাররা। বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও একই পরিস্থিতি ঘটেছিল। টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে তামিম তার তিন স্পিনত্রয়ীকে লেলিয়ে দেন। মিরাজ, মোসাদ্দেক ও নাসুম মিলে ২২ গজে হাত ঘুরালেন ২৮ ওভার। তাতেই ব্যাটিং অর্ডার ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় স্বাগতিকদের। এই ২৮ ওভারে ৫ মেডেনসহ ৮৫ রান খরচ করে তারা তুলে নেন ৮ উইকেট।

বুধবার স্পিন আক্রমণ বাড়াতে মোসাদ্দেককে দলের সঙ্গী করেছিলেন তামিম। তাও আবার ফর্মে থাকা তাসকিনকে বাদ দিয়ে। আগের সিরিজে সিরিজ সেরা হওয়া তাসকিনের বদলে মোসাদ্দেককে সুযোগ দেওয়াকে সাহসী সিদ্ধান্তই বলতে হবে। প্রথম ম্যাচে উইকেট শূন্য থাকলেও  ৮ ওভারে ২৫ রান দিয়েছিলেন। ৩২ বলই ছিল ডট। সেই তাসকিনকে ড্রপ দেওয়া কিন্তু মোটেও সহজ ছিলো না। কিন্তু অধিনায়ক তামিম সেই ঝুঁকি নিয়ে সফল হয়েছেন! তাসকিনকে ড্রপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা কঠিন ছিল সেটি তামিম টসের সময় জানিয়েছিলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাসকিনকে আমরা খেলাতে পারছি না। খুব ভালো বোলিং করছিল সে। সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল। আমরা একজন অলরাউন্ডারকে নিয়েছি, মোসাদ্দেক।’

ম্যাচে অধিনায়ক তামিমের এই ‘বাজি’ কিন্তু কাজে লেগেছে। এক বছর পর ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। অধিনায়ক তামিম শুরুতেই মোসাদ্দেকের হাতে বল তুলে দেন। মোসাদ্দেক ২ ওভারের স্পেল করলেন। খরচ করলেন ১২ রান রান। তবে ১১তম ওভারে মোসাদ্দেকের হাত ধরে আসে প্রথম সাফল্য। ডানহাতি অফস্পিনার সরাসরি বোল্ড করেন ভয়ঙ্কর কাইল মায়ার্সকে। এরপরই শুরু হয় নাসুমের ঘূর্ণিজাদু।  ব্রকসকে বোল্ড করার পর এক ওভারেই তুলে নেন শাই হোপ ও নিকোলাস পুরানের উইকেট। এদিকে টানা ওভার করিয়ে মোসাদ্দেকের কোটা ১০ ওভার শেষ করেন। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো বোলিং কোটা পূর্ণ করার সুযোগ পেয়ে ১০ ওভারে ৩৭ রান খরচায় তুলে নেন ১ উইকেট।

মোসাদ্দেকের কোটা পূরণ হতেই দ্বিতীয় স্পেলে ডাকা হয় মিরাজকে। প্রথম স্পেলে ৩ ওভার করা মিরাজ ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে খুব বেশি সময় নিলেন না, দ্বিতীয় স্পেলে মুগ্ধতা ছড়ানো বোলিং করেন। সব মিলিয়ে ৮ ওভারে ১ মেডেনে ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন অফস্পিনার। অন্যদিকে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতে নিলেন নাসুম।  ১০ ওভারে ৪ মেডেনে ১৯ রান দিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট। এই তিন স্পিনারের ঘূর্ণিজাদুতে ১০৮ রানেই থেমে যায় স্বাগতিকদের স্কোরবোর্ড। এরপর সহজ অংক তামিম-লিটনের ব্যাটে সহজেই মিলে যায়, বাংলাদেশ ৯ উইকেট ম্যাচ জিতে ৩১তম বারের মতো সিরিজ জয়ের আনন্দে মাতে।