• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

মিরপুরে তামিম-শান্তর রুদ্ধদ্বার বৈঠক!

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৪  

মিরপুরে আবাহনী-প্রাইম ব্যাংকের ম্যাচ ঘিরে ছিল উত্তেজনা। পুরো ম্যাচেই আম্পায়ারিং নিয়ে বেশ কয়েকবার অসন্তুষ্টি দেখিয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তিন সেঞ্চুরির ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনীই হেসেছে শেষ হাসি।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে ম্যাচ শেষে আলোচনায় অন্য কিছু! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে লম্বা সময় ধরে দূরে থাকা তামিম ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর বৈঠক নিয়ে সন্ধ্যা থেকেই চলেছে আলোচনা; যদিও এই ব্যাপারে সবার মুখেই যেন কুলুপ।

মিরপুরের উত্তেজনাকর ম্যাচ শেষ হতেই তামিম সোজা চলে গেলেন আবাহনীর ড্রেসিংরুমে। সেখানেই বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে শান্তর সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। শান্ত-তামিমের এই বৈঠক যখন ক্যামেরাম্যানদের লেন্স খুঁজে পেলো, তখনই দুজন উঠে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমের ভেতরের কামরায়! ওখানে বেশ খানিকক্ষণ আলাপ করেন সাবেক ও বর্তমান দুই অধিনায়ক।

বৈঠক কেবল ওখানেই থেমে থাকেনি। এরপর দুজনই চলে যান ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কক্ষে। জালাল ইউনুসও অপেক্ষায় ছিলেন তামিম-শান্তর জন্য! সেই মিটিংয়ে আবার উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিসও।

তামিম অবশ্য বেশিক্ষণ ওই মিটিংয়ে ছিলেন না। পরে শান্তর সঙ্গে ক্রিকেট অফিসের দুই কর্তা মিলে ঘণ্টাখানেক মিটিং করেছেন। সেই মিটিংয়ে বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তর গুঞ্জন থাকলেও শান্ত-জালাল মুখে কুলুপই এঁটে রাখলেন। তারা কেউই মিটিং নিয়ে কিছু বলেননি।

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘আমি অফিসে এলেই তামিম আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আজও এসেছিল। এর বাইরে কিছু নেই। আর শান্ত আমাদের অধিনায়ক। তার সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু মিটিং হয়েছে। এটা একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত। এ ব্যাপারে বাড়তি কিছু বলার সুযোগ নেই।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসরের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ফিরেও এসেছিলেন। পরে আবার বিশ্বকাপ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারও করে নেন। তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফিরবেন কি না, এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। জানিয়েছিলেন, বিপিএলের সময়টায় সবকিছু পরিষ্কার করবেন। কিন্তু বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েও স্পষ্ট করে করেননি কিছুই। কেবল বলেছেন, অনেক কিছু ঠিক হলেই ফিরতে পারেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে!

বিপিএল শিরোপা জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার প্রশ্নে ধোঁয়াশা রেখে বলেছিলেন, ‘একটা জিনিস পরিষ্কারভাবেই আপনাদের বলতে চাই, আমার জন্য ফিরে আসার ক্ষেত্রে অনেক কিছু ঠিক হতে হবে। নয়তো শুধু এসে খেলার কোনও পয়েন্ট নেই। কারণ আমি ক্যারিয়ারের এমন স্টেজে আছি, হয়তো দুই বছর খেলবো (সব মিলিয়ে)। ওই কথাগুলো বোর্ডের সঙ্গে বলতে হবে।’

সেই অনেক কিছু কী, সেটা নিয়ে রয়েছে অনেক ধোঁয়াশা। তবে গুঞ্জন আছে, হাথুরুসিংহের কারণেই নাকি তামিমের এই ‘গোঁয়ার্তুমি’। হাথুরুসিংহে থাকলে তামিম ফিরবেন না জাতীয় দলে—এমন চর্চাও নিয়মিত হয় ক্রিকেটপাড়ায়; যদিও কোনও সূত্রই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে ও তামিমের দ্বন্দ্ব এখন অনেকটা প্রকাশ্যেই।

ঘটনার সূত্রপাত গত বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই। তামিমের ইনজুরি নিয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার পছন্দ হয়নি প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। বিষয়টি বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানকে অবহিত করলে তিনিও তামিমের ওপর ক্ষিপ্ত হন। বাঁহাতি ব্যাটারও বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। কিন্তু দল ঘোষণার দুই দিন আগে ঘটনাপ্রবাহ পাল্টে যায়। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান ফোন দিয়ে তামিমকে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি এটাও জানান, সব ম্যাচে তামিমকে খেলানো হবে না। এসব বিষয় ভালোভাবে নিতে পারেননি দেশসেরা এই ওপেনার। এ কারণে বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

এরপর নানা সময়ে নিজের ফেরা নিয়ে অস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলেও কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে তামিম বলেছিলেন, চলতি বছর তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায় হুট করেই আজ তামিম ইস্যু আলোচনায়। অথচ চলতি বছর বাংলাদেশের খুব বেশি ওয়ানডে ও টেস্ট খেলা নেই। আগামী ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। তার আগে টেস্ট সিরিজও নেই। যেখানে লম্বা বিরতি, সেখানে হুট করে তামিমের সঙ্গে অধিনায়কের সাক্ষাৎ তাই জনমনে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

বিসিবির একটি সূত্র অবশ্য নিশ্চিত করেছে, তামিমের সঙ্গে শান্তর আলোচনা যা কিছু নিয়েই হোক না কেন, সেখানে হাথুরুসিংহের কোনও ইস্যু ছিল না। তবে এ ব্যাপারে অধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হলে শান্ত বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেন, ‘এটা আমার আর তামিম ভাইর মধ্যেই থাক। নরমালি একটু আড্ডা দিয়েছি। ওই রকম যদি কিছু হয় আপনারা জানতে পারবেন। আমরা ক্রিকেট নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। কীভাবে আমরা আরও একটু ভালো করতে পারি, এসব নিয়ে আলোচনা করেছি।’

তবে শান্ত এতটুকু নিশ্চিত করেছেন যে অভিজ্ঞ এই ওপেনারকে দলে পেলে দলের জন্যই ভালো হবে, ‘ওনার যে অভিজ্ঞতা আছে, উনি থাকলে অবশ্যই দলের অনেক সুবিধা হয়। জুনিয়র প্লেয়াররা অনেক শিখতে পারে। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে আসলে লম্বা চিন্তা করা মুশকিল।’