• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলবে ২৩’র জুনে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২২  

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭০ শতাংশ। এরই মধ্যে কক্সবাজার অংশের ১৫ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক বসানো পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এছাড়া আইকনিক স্টেশন, ছোট-বড় সেতু, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং ও হাইওয়ে ক্রসিংয়ের কাজ পুরোদমে চলমান। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যেই এ রেল রুটে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

১২৮ কিলোমিটার প্রকল্প ব্যয়
রেলওয়ের প্রকল্প সংক্রান্ত নথি অনুসারে, ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। মূল উদ্দেশ্য পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। 
 
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথকভাবে কাজটি করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭০ শতাংশ। করোনার কারণে প্রকল্প মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ প্রকল্প শেষ করতে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় পাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

ঝিনুকের আকৃতির স্টেশন
শুভ্র সাদা বিশাল আকৃতির এক ঝিনুক। এর ভেতরে আসা যাওয়া করবে ট্রেন। এমন দৃশ্য বাস্তব হতে চলেছে সৈকত শহর কক্সবাজারে। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের আওতায় চলছে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ। যার ৬ তলা স্টেশন ভবনের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্টের (আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং) কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আব্দুল জাবের মিলন জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কক্সবাজার রেলস্টেশন। পুরো স্টেশনটি গড়ে উঠছে ২৯ একর জমির উপর। আইকনিক স্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রায় সবই থাকছে স্টেশনটিতে।

স্টেশনটি হচ্ছে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চাঁন্দেরপাড়া এলাকায়। নির্মাণাধীন স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছয়তলা স্টেশন ভবনের মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। দিন-রাত কমবেশি ৫ শতাধিক প্রকৌশলী ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন স্টেশন ভবনটির নির্মাণকাজে। স্টেশন ভবন ছাড়া আরো ১৭টি স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে, যেগুলো ব্যবহার করা হবে রেলওয়ের পরিচালনা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে।

শুধু কক্সবাজার রেলস্টেশন নির্মাণ করতেই ২১৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেশনটিতে যাত্রী প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে ভিন্ন পথ। থাকছে গাড়ি পার্কিংয়ের বড় জায়গা। আইকনিক রেলস্টেশনটিতে থাকছে তারকামানের হোটেল, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, শিশু যত্নকেন্দ্র। থাকছে লকার বা লাগেজ রাখার স্থান। রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে গিয়ে পর্যটকরা লাগেজ, মালামাল স্টেশনে রাখতে পারবেন। আর সারাদিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্টের (আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং) কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আব্দুল জাবের মিলন জানান, ছয়তলা আইকনিক স্টেশন ভবনের মূল কাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এর পাশাপাশি প্ল্যাটফর্ম ও ফুটওভার ব্রিজের ৪০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। এখন বাকি আছে ফিনিংস, ছাদের কাঠামো তৈরি ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। ছাদের কাঠামো তৈরির কাজটি চলতি মাসে শুরু হয়েছে। ফিনিংসের মধ্যে সেন্ট্রাল এসি, ফায়ার ফাইটিং, বিএমএ সিস্টেম, স্যানিটারি কাজ ও বৈদ্যুতিক কাজ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমেও কাজে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। কারণ ভবনের মূল কাঠামোর কাজ যেহেতু শেষ, ফলে এ কাজগুলো ভেতরে বসেই করা যাবে। এতে কাজগুলোও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। বলা যায়, প্রকল্প মেয়াদের দুই মাস আগে এ আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ শেষ করা সম্ভব।

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে আসেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম ও সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীরসহ রেলের কর্মকর্তারা। তারা আগামী বছরের জুনে এ রেলপথ চালুর পরিকল্পনা করেছেন।

কক্সবাজারে ট্রেন, পাল্টে যাবে অর্থনীতি
কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ সবমিলিয়ে ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে পরের স্টেশনটি রামু। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইসলামাবাদ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, লোহাগড়া, সাতকানিয়া ও দোহাজারী রেলস্টেশন।

কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন এখন বাস্তবায়নের পথে। স্থানীয়রা বলছে, কক্সবাজারে ট্রেন চলাচলে বাড়বে বাণিজ্যিক তৎপরতা, পাল্টে যাবে জেলা তথা গোটা দেশের অর্থনীতির রূপ।

রামুর বাসিন্দা গোলাম মওলা বলেন, কক্সবাজারে ট্রেন আসবে কল্পনাতেও ছিল না। এখন বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে বোঝা যায় আমাদের স্বপ্ন এখন বাস্তবের পথে। যানবাহনের চাপ বেড়েছে অনেকগুণ, সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। রেল যোগাযোগ চালু হলে যাতায়াত-বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরো সহজ হবে। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা-প্রাণহানি।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে ট্রেন চললে পর্যটন শিল্পের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। তখন সারা বছরই পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার, চাঙা থাকবে পর্যটন ব্যবসা। নতুন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও বেশ পরিবর্তন আসবে।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও থেকে রামু উপজেলার জোয়ারিয়া নালা এলাকা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেললাইনে ট্র্যাক বসানো হয়েছে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার অংশে ১৯টি সেতু নির্মাণ হয়ে গেছে। ভূমি উন্নয়ন কাজও শেষ পর্যায়ে। সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের আশা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু সম্ভব হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার সবই থাকছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত টার্গেট জুন ২০২৩। এর মধ্যেই ট্রেন চলাচল শুরুর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলমান।