• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পদ্মা থেকে কুয়াকাটা

ফেরিমুক্ত ২৪০ কিমি. পথ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২১  

যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকেই পায়রা সেতুকে ঘিরে আনন্দে উদ্বেল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। রোববার বেলা ১১টার কিছু পর সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে দক্ষিণের ৬ জেলা সড়ক যোগাযোগে নতুন যুগে প্রবেশ করল। 

দক্ষিণাঞ্চল একসময় অবহেলিত অঞ্চল ছিল। একটি সেতু যেন সেই দুঃখকে ঘুচিয়ে দিয়েছে অনেকটা। এজন্য বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ এই অঞ্চলের মানুষ। এই সেতু নির্মাণ হওয়ায় পদ্মার পাড় থেকে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত টানা ২৪০ কিলোমিটার সড়ক থেকে ফেরি দূর হয়ে গেল। একইভাবে মৎস্য বন্দর বরগুনার পাথরঘাটায় পৌঁছতেও পোহাতে হবে না ফেরি পারাপারের কোনো ঝক্কি। একই সঙ্গে সরাসরি সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো পটুয়াখালীসহ দক্ষিণের পায়রা বন্দর এবং সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা।


বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, বরিশাল থেকে মাত্র ১১২ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছতে একসময় পার হতে হতো ৬টি নদী। সময় লাগত ১০-১১ ঘণ্টা। বর্তমান সরকার ৬টি নদীর ৫টিতে আগেই ব্রিজ নির্মাণ করেছে। বাকি ছিল পায়রা। এই সেতু চালু হওয়ায় এখন বরিশাল থেকে মাত্র ২ ঘণ্টায় কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। এটা যে আমাদের জন্য কত বড় প্রাপ্তি তা বলে বোঝানো যাবে না। এজন্য বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, পদ্মা পাড়ির সময়টুকু বাদ দিলে এখন রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ৫ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সময় কমে এসে দাঁড়াবে ৪ ঘণ্টায়। সড়ক যোগাযোগের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন অবহেলিত দক্ষিণের জন্য যে কতটা জরুরি ছিল তা কেবল আমরাই বুঝি। একটা সময় ছিল বরিশাল থেকে সড়কপথে রাজধানী ঢাকায় যেতে পাড়ি দিতে হতো ১০ থেকে ১২টি ফেরি। এখন কেবল পদ্মা ছাড়া আর কোথাও ফেরি পার হতে হয় না। আর এখন তো পায়রা সেতু চালু হয়ে গেল। পদ্মা পাড়ি দিয়ে একটানে সবাই পৌঁছে যাবে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা।

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়ক যোগাযোগের দুরবস্থা আর ঘন ঘন ফেরির কারণে মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছিল পর্যটণ কেন্দ্র কুয়াকাটা। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যে, এখানকার অনেক হোটেল-মোটেলের মালিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে চলে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই নজর দেন এই সৈকতের দিকে। স্থাপন করেন পায়রা সমুদ্র বন্দর। একইসঙ্গে একের পর এক সেতু আর সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মৃতপ্রায় কুয়াকাটাকে তিনি নতুন করে জীবন দেন।

বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রায় শেষ ধাপ হলো এই পায়রা সেতুর উদ্বোধন। এরপর পদ্মা সেতু চালু হলে পায়রা বন্দর থেকে যেমন মাত্র ৪ ঘণ্টায় আমদানি পণ্য পৌঁছে যাবে ঢাকায়; তেমনি সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটাও চলে এলো সবার হাতের নাগালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতার কারণেই বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এরইমধ্যে গড়ে উঠতে শুরু করেছে একের পর এক শিল্পকারখানা। কলাপাড়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বরগুনার তালতলিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানসহ পুরো দক্ষিণেই এখন নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ।’

এদিকে পায়রা সেতুর উদ্বোধনে মানুষের মধ্যে খুশির শেষ নেই। যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়ার পর সেখানে ভিড় করে হাজার হাজার মানুষ। ১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পায়রা সেতু দেখতে আসা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাওসার সোহেলী বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরে। ভার্সিটিতে যেতে আসতে প্রায় প্রতিবারই লেবুখালী ফেরি ঘাটে দেড়-দু’ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। এখন থেকে আর সেই কষ্ট হবে না। ভীষণ ভালো লাগছে।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মুহিব্বুর রহমান বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাবস্থায় একবার কুয়াকাটা এসেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তখন এই ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ দেখে দুঃখ করেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই দুর্ভোগের হাত থেকে এই অঞ্চলের মানুষকে মুক্তি দিতে একের পর এক উন্নয়ন যজ্ঞ করে যাচ্ছেন। তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার কারণেই আজ আমরা পায়রা সেতুসহ পদ্মার পাড় থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিতে নদী পারাপারের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেলাম। কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্যও তিনি মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে এই কুয়াকাটা হবে দেশ তথা সারা বিশ্বের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।