• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ওষুধের কাঁচামালের আড়ালে আফগানিস্তান-ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসে আফিম

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০২২  

ওষুধের কাঁচামালের আড়ালে একটি মাদকের চালান আসবে ঢাকায়। এমন খবর পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রেতার ছদ্মবেশ ধারণ করে ৩ কেজি আফিম জব্দ করেন ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীর। গত ১০/১২ বছর পরে এটি প্রথম।

শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে (উত্তর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আমাদের কাছে একটি তথ্য আসে যে, একটি চক্র আফিমের বড় চালান ঢাকায় এনে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করি ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে থাকি। ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ও সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীরের টিম রাজধানীর পল্টন মডেল থানার পুরানা পল্টন লেন (ভিআইপি রোড) থেকে দুই কেজি আফিমসহ মো. আবুল মোতালেব (৪৬) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনশ্রী আবাসিক এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া (88) নামে আরেকজনকে এক কেজি আফিমসহ গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার মোতালেব নোয়াখালীর বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় জড়িত। তবে এর আড়ালে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়ার বাড়ি জামালপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি বেসরকারি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এর আড়ালে তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।

কীভাবে আফিমের চালান জব্দ ও আদৌ আফিম কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, একটি শপিং ব্যাগের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের বয়ামের মধ্যে পলিথিনে মোড়ানো ছিল দুই কেজি আফিম। অপর এক কেজি আফিম পলিথিনে মোড়ানো ছিল।

তিনি বলেন, আফিম একটি ‘ক’ শ্রেণির মাদক। উদ্ধার করা তিন কেজি আফিমের আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে ৩ কোটি টাকা।

আফিমের এ চালান কোন রুটে কীভাবে কারা নিয়ে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এ চালান বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদকের হাব হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকেই এ আফিমের সরবরাহ। এ আফিমের চালান ঢাকায় আনা হয় ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। উদ্ধার করা আফিমের চালানটি ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তিরা জব্দ করা আফিম ঢাকায় সরবরাহের চেষ্টা করে আসছিল।

আফগানিস্তানে এখন তালেবান ক্ষমতায়। ২০২০ সাল থেকে নতুন করে আফগানিস্তানে চাষ হচ্ছে আফিম। এর সঙ্গে তালেবানদের কারো যোগাযোগের তথ্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষ।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে আফিমের ব্যবহার দুইভাবে হয়ে থাকে। এক আফিম সরাসরি সেবন এবং এ আফিম দিয়ে কেমিক্যালের সাহায্যে পরবর্তীতে হেরোইন, ইয়াবা এবং ফেনসিডিলের মতো ভয়ংকর ড্রাগগুলো তৈরি হয়। আফিম আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানে চাষাবাদ হয়ে থাকে।

এরসঙ্গে আরও দুজনের নাম আমরা পেয়েছি। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। গ্রেফতারদের রিমান্ডে এনে আফিমের উৎস এবং গন্তব্য কোথায় ছিল সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যাবে।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ চক্রের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তির তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ নেটওয়ার্কের সব সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হবে।