• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পুরুষের হার্নিয়া রোগ কেন হয়?

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

ভ্রান্ত ধারণার কারণে অনেকেই হার্নিয়া রোগটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না। অথচ জটিল এ রোগটি সম্পর্কে সবারই স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জটিল এ রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নারীদের চেয়ে পুরুষের বেশি।

হার্নিয়া রোগটি আসলে কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেটের দেয়ালে ছিদ্র থাকার সমস্যাকেই চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হচ্ছে হার্নিয়া। পেটের দেয়ালে যেকোনো জায়গায় ছিদ্র দেখা দিলে সে ছিদ্রস্থান দিয়ে পেটের নাড়ি-ভুড়ি অন্ত্র থেকে বাইরের দিকে চলে আসে। এতে রোগীর নানান শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে।
 
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত দুই ধরনের হার্নিয়া রোগী বেশি দেখা যায়। যেমন-
 
১। প্রাইমারি হার্নিয়া: পরিণতবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে গ্রোইন হার্নিয়া বেশি হয়। স্থূলতার কারণে নাভিতেও হার্নিয়া হতে পারে। বেশ কয়েকবার গর্ভবতী হলে নারীদের তলপেটের অংশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ব্যায়াম না করলে মেয়েদের তলপেট কমজোরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হতে পারে আম্বিলিক্যাল হার্নিয়া।
 
২। সেকেন্ডারি বা ইনসিশনাল হার্নিয়া: অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সময় কোনো কারণে সেলাই খুলে গেলে ইনসিশনাল হার্নিয়া হতে পারে। নারীদের সিজ়ারিয়ান সেকশন বা হিস্টেরেক্টমির পর তলপেটে এ প্রকার হার্নিয়া দেখা যায়। যেকোনো অস্ত্রোপচারের পরেই এই হার্নিয়া হতে পারে। ক্যানসার রোগীর অস্ত্রোপচারের পরে শারীরিক দুর্বলতার জন্য ঘা না শুকালেও হার্নিয়া হয়।
এছাড়াও ফিমোরাল হার্নিয়া, হায়াটাল হার্নিয়া, আমব্লায়াকাল হার্নিয়া, ইঙ্গুয়াল হার্নিয়া রোগীও রয়েছে।

হার্নিয়া রোগের লক্ষণ
কুঁচকিতে, নাভির কাছে বা পুরানো অস্ত্রোপচারের ক্ষতের কাছে কোনো ফোলা ভাব থাকলে, সেখানে ব্যথা হলে সেটা হার্নিয়া হতে পারে। এছাড়া কোনো ভারী জিনিস তুলতে গেলে ব্যথা, মলত্যাগে সমস্যা, সারাক্ষণ পেট ভার হয়ে থাকা হার্নিয়ার উপসর্গ হতে পারে।

কাদের ঝুঁকি বেশি?
ওজন বেশি এমন বয়স্ক নারী-পুরুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, ধুমপায়ী পুরুষদের ক্ষেত্রে হার্নিয়া রোগের ঝুঁকি বেশি। অস্ত্রোপচার হলে, পরিবারে কারও হার্নিয়া থাকলে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলেও হার্নিয়ার সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।

পুরুষের হার্নিয়া রোগ বেশি হওয়ার কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষেরা হার্নিয়া রোগে বেশি ভোগেন। এর প্রধান কারণের মধ্যে রয়েছে জেনেটিক্স ইস্যু। পরিবারে বা অতীতে কোনো সদস্যর হার্নিয়ার ইতিহাস থাকলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষের বেড়ে যায়।

এছাড়া বয়স অনুযায়ী স্থূলতা বা বেশি ওজন হলে, পেটে পেশী স্থিতিশীল না হলে, প্রায়ই ভারী উত্তোলন, ধূমপান, দীর্ঘস্থায়ী কাশি এবং হাঁচি, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে পুরুষরা হার্নিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

চিকিৎসা
হার্নিয়া রোগের একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেটের দেয়ালে ছিদ্র অংশে জালি বসিয়ে স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে হার্নিয়ার সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর দেরি করা যাবে না। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে হার্নিয়াতে ব্যথা না হলেও ধীরে ধীরে তা নানা শারীরিক জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই রোগীর দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর স্থায়ী সমাধান করা উচিত। কেননা জরুরি সমস্যা দেখা দিলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে হার্নিয়ায়।