• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

হ‌ুমায়ূন আহমেদ স্মরণে আজ মঞ্চে ‘দেবী’

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৯  

বিগত চার দশক বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতায় আচ্ছন্ন করে রেখেছেন কোটি বাঙালি পাঠককে। তিনি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হিসেবে তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন সাহিত্য সমালোচকেরা। আজ ১৩ নভেম্বর হ‌ুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মবার্ষিকী। আপন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত এই লেখকের স্মরণে আজ বুধবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘দেবী’। নাট্যদল বহুবচন প্রযোজিত হ‌ুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘দেবী’ নাটকের প্রদর্শনী শুরু হবে আজ সন্ধ্যা সাতটায়। নির্দেশনা দিয়েছেন আরহাম আলো।

আজ ‘দেবী’ ১২০তম প্রদর্শনী । ছবি: সংগৃহীত

আজ ‘দেবী’ ১২০তম প্রদর্শনী । হ‌ুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে এ নাটক। চেতনা-অবচেতন মনের দ্বন্দ্বের চিরায়ত নাটকীয় উপস্থাপনা ‘দেবী’। গল্পে রানুর বয়স ১৬ থেকে ১৭। বিয়ের আগে ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা ওর মনের মধ্যে গেঁথে যায়। তা থেকে বেরিয়ে আসতে নিজেকে অতিমানবীয় মনে করে এবং নিজেকে ‘দেবী’ বলে উপস্থাপন করে। কিন্তু মিসির আলী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, তিনি রানুর ছোটবেলার ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা করেন, তুলে ধরেন কার্যকরণ সূত্র। এরপরই প্রমাণিত হয়, ঘটনাগুলো অতি প্রকৃত নয়, বাস্তব। কিন্তু রানু তা বিশ্বাস করে না। সে নিজেকে ‘দেবী’ বলেই মনে করে। এ রকম অবস্থা প্রত্যেকের জীবনে ঘটে। চেতনা-অবচেতন মনের দ্বন্দ্বের এই ক্রিয়া চিরকালীন।

 

১৯৯৪ সালে মঞ্চে আসে ‘দেবী’। ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৪ সালে মঞ্চে আসে ‘দেবী’।নির্দেশক আরহাম আলো ছাড়াও ‘দেবী’ নাটকে অভিনয় করেছেন তৌফিকুর রহমান, মনু মাসুদ, সালাউদ্দীন আহমেদ, রুমানা হোসেন, ম্যাগডিলিন গমেজ রীনা, হ্যাপী সিকদার, স্বর্ণা, মোহাম্মদ উল্লাহ মাহমুদ, আয়শা মনি, রচনা, সাহিত্য, তাপস, আলো দীপক, আরহাম আলো, জেসমিন, কবিতা, আশিক, সাগর, রাত্রীসহ আরও অনেকে।

নাট্যদল বহুবচনের দলপ্রধান এবং প্রযোজনা অধিকর্তা তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে মঞ্চ মাধ্যমে পথচলায় নাট্যদল বহুবচন সংগত কারণে গৌরবের অংশীদার। ১৯৭৫ সালের শেষ নাগাদ আমরাই মঞ্চে আনি “নন্দিত নরকে” উপন্যাসের নাট্য প্রযোজনা। উপন্যাস থেকে নাট্যরূপের জটিল কর্মটি কীভাবে করা হবে প্রশ্নে হ‌ুমায়ূন আহমদের সমাধান ছিল, “জাফর ইকবালকে বলে দেব, ও-ই নাট্যরূপ দেবে।” সত্যি সত্যি তখন আমরা মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাট্যরূপে নাটকটি মঞ্চে আনি। এই নাটক দর্শকপ্রিয়তা পায়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই “দেবী” মঞ্চায়ন করব। একদিন আমরা লেখকের গ্রিন রোডের বাসায় গেলাম। আমাদের চাওয়ার বিপরীতে তাঁর অভিব্যক্তি ছিল প্রাণবন্ত। তিনি বলেছিলেন, “আমার নাটক লেখার অনুপ্রেরণা তো বহুবচন। আমার যেকোনো নাটক আপনারা নাট্যরূপ দিয়ে মঞ্চস্থ করতে পারেন। আপনাদের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।” এরপর দেড় বছরের মহড়া শেষে ১৯৯৪ সালে মঞ্চে আসে ‘দেবী’। এটি দেশ ও কলকাতায় নাট্যানুরাগী এবং নাট্যবোদ্ধাদের কাছে বহুল প্রশংসিত প্রযোজনা। ২৫ বছর ধরে এটি মঞ্চায়ন হচ্ছে।’

‘দেবী’ নাটকের একটি মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত

‘দেবী’ নাটকের একটি মুহূর্ত। তৌফিকুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে ১১৯টি শো হয় এবং তার মধ্যে ভারতে তিনটি প্রদর্শনী হয়। তিনি বলেন, ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদের মঞ্চনাটকের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ধরে রেখেছি আমরা। আজকের মঞ্চায়নেও দর্শকদের উপস্থিতি এবং আমাদের অভিনয় প্রচেষ্টা উদ্বুদ্ধ করবে একই ধারা অব্যাহত রাখতে।’

প্রসঙ্গত, বহুবচন স্বাধীনতা-উত্তর সংগঠিত অন্যতম পুরোনো নাটকের দল। ‘আমাদের নাটক মানে শুধু নাটকীয়তা নয়, নাটকের চিরাচরিত আঙ্গিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ’—এই স্লোগান নিয়ে ১৯৭২ সালে দলটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর ২২টি নাটক প্রযোজনা করেছে বহুবচন।