• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

হজরত ফাতেমার কল্যাণে যে আমল পেল মুসলিম উম্মাহ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২০  

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি ছিলেন নারী জাতিসহ মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী তিনি। তাঁর কারণে পুরো মুসলিম উম্মাহ পেল অনন্য এক আমল তাসবিহে ফাতেমি। যা অনেক ফজিলতপূর্ণ সহজ আমল।

হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বিয়ের পর স্বামী হজরত আলির সঙ্গে সাংসারিক কাজ সম্পাদনে পারস্পরিক সমঝোতা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত এমন হয় যে-
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘরের বাইরের কাজগুলো করবেন। আর হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা খেয়াল রাখবেন ঘরের আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর প্রতি।

সে হিসাবে হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঘরোয়া কাজ নিজেই আঞ্জাম দিতেন। সাংসারিক কাজে খুব কষ্ট করতেন। স্বামী-সন্তানের সেবা-যত্ন করতেন। অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই তিনি এগুলো করতেন। তবে সে কাজ বর্তমান সময়ের মতো এতটা সহজ ছিল না।

সে সময় খাবার তথা রুটি তৈরি করতে হলে জাঁতায় আটা পিষতে হত। জ্বালানির জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে হত। তারপর চুলায় আগুন জ্বলত। এভাবে এক বিরাট কর্মযজ্ঞ আঞ্জাম দিয়েই তবে প্রস্তুত হত শুকনো রুটি। হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে অনেক কষ্ট করেই এসব কাজ করতে হত। স্বামী-সন্তানের জন্য তিনি জযবার সঙ্গে সঙ্গেই এসব সম্পাদন করতেন।

তাসবিহে ফাতেমি লাভ
উম্মতে মোহাম্মাদির জন্য তাসবিহে ফাতেমি এক বিরাট নেয়ামত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একবার অনেক গনীমত জমা হয়। দাস-দাসীও ছিল প্রচুর।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের মাঝে সেগুলো বণ্টন করে দিচ্ছিলেন। সে সময় হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা খবর পেয়ে বাবার কাছে কাজের সহযোগিতার জন্য একজন গোলাম বা বাদীর আবদার নিয়ে গেলেন।

কিন্তু নবীজীর সঙ্গে তার দেখা হল না। তিনি আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিষয়টি অবহিত করে বাড়ি ফিরে যান। বিশ্বনবি বাসায় ফিরলে মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তা তাঁকে জানান।
এবার উম্মতের দরদি নবি নিজ মেয়ের ঘরে এসে উপস্থিত হলেন। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুও তখন ঘরে ছিলেন। নবিজী তাদের ডাকলেন এবং বললেন-
أَلاَ أَدُلّكُمَا عَلَى خَيْرٍ مِمّا سَأَلْتُمَا؟ إِذَا أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا – أَوْ أَوَيْتُمَا إِلَى فِرَاشِكُمَا – فَسَبِّحَا ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ، وَاحْمَدَا ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ، وَكَبِّرَا أَرْبَعًا وَثَلاَثِينَ، فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمَا مِنْ خَادِمٍ.
তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে অনেক উত্তম একটি তোহফা নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছি। আমি কি তা তোমাদেরকে অবগত করব না! যখন তোমরা শোবার প্রস্তুতি নেবে তখন-
- সুবহানাল্লাহ (سُبْحَانَ الله) : ৩৩ বার,
- আলহামদু লিল্লাহ (اَلْحَمْدُ لله) : ৩৩ বার এবং
- আল্লাহু আকবার (اَللهُ اَكْبَر) : ৩৪ বার পড়ে নেবে। এতে খাদেম লাভ করার চেয়ে এ আমলটি তোমাদের জন্য অনেক বেশি উত্তম।’ (বুখারি, মুসলিম)

শিক্ষা গ্রহণ ও চিন্তার বিষয়
নবি দুলালী হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বাবার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তাই মেনে নিলেন। মুখে দ্বিতীয় কোনো কথা বলেনি। আর এতে উম্মতে মুহাম্মাদি পেয়ে গেলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সহজ ও মর্যাদার আমল। যা বিশ্বজুড়ে তাসবিহে ফাতেমি নামে সুপরিচিত।

হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার এ আমল ছিল উম্মতে মুহাম্মাদির সব নারী পুরুষের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত ও শিক্ষা গ্রহণের বিষয়। যাতে মুমিন মুসলমান পুরুষরা পেলেন আমল ও বিশ্বনবির কাছ থেকে গণিমতের মাল হিসেবে দাস বা বাদি না পেয়ে তাঁর কথা মেনে নেয়ার শিক্ষা। আর নারীদের জন্য আনুগত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত।

দুনিয়ার প্রতিটি পরিবার হাদিসের নির্দেশনায় জীবন পরিচালনা করবে। তাসবিহে ফাতেমিকে নিজেদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ আমল মনে করে তা পালন করবে। কষ্টের কাজে ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারী পুরুষকে সাংসারিক কাজ পারস্পরিক সমঝোতা ও মিল মহব্বতের মাধ্যমে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। নবি দুলালী হজরত ফাতেমার সৌজন্যে পাওয়া তাসবিহে ফাতেমির আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।