• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

সেতুটি পাল্টে দিয়েছে চরাঞ্চলের যোগাযোগের চিত্র

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২০  

শিবচর প্রতিনিধিঃ মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মানদী বেস্টিত চরাঞ্চল মাদবরেরচর, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও বন্দরখোলা ইউনিয়ন। এরমধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও পরিচিত ইউনিয়নের নাম মাদবরেরচর। ইউনিয়নটির একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে পদ্মার একটি শাখা নদী। বর্ষা মৌসুমে পুরো চরাঞ্চল তলিয়ে একাকার হয়ে যায়। উপজেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মাদবরেরচরের চরাঞ্চল। এই চর এলাকার সাথে চরের অন্যান্য ইউনিয়নগুলোর চরাঞ্চলও যুক্ত। অর্থাৎ চরাঞ্চল থেকে মূল ভূ-খন্ডে আসতে নৌকা ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা ছিল না। সম্প্রতি পদ্মার শাখা নদীর উপর একটি সেতু নির্মান হলে চরাঞ্চলের সাথে উপজেলার মূল ভূ-খন্ডের যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। যুগযুগ ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থাহীন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা এনেছে সেতুটি।

সরেজমিনে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, মাদবরেরচর হাট থেকে নদীর উপর দিয়ে নির্মিত সেতুটি দিয়ে চরাঞ্চলে একটি সড়ক চলে গেছে। যার মধ্য দিয়ে চরের প্রায় ডজন খানেক গ্রামের মানুষ সরাসরি মাদবরেরচর, পাঁচ্চর, শিবচরে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। এতে করে জীবনযাত্রায় গতি এসেছে চরের মানুষের।

আলাপকালে চরের বাসিন্দারা জানান,'নদীর উপর যখন সেতু ছিল না, তখন নৌকা ছিল একমাত্র অবলম্বন। সন্ধ্যার পরই বন্ধ হয়ে যেতো নৌ চলাচল। বিপদ-আপদে যখন-তখন উপজেলা সদরসহ মাদবরেরচর, পাঁচ্চরে যাওয়া যেতো না। রাস্তাঘাট না থাকায় চরের মানুষকে চরেই থাকতে হতো। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জরুরী প্রয়োজনে সব সময় পিছিয়ে ছিল চরাঞ্চল। কিন্তু সেতুটি নির্মান হওয়ায় জীবনে গতি এসেছে। হাট-বাজার, ব্যবসায়িক কাজ, চিকিৎসার জন্য দিনরাত সবসময় সহজে যাতায়াত করা যাচ্ছে।

জানা গেছে, মাদবরেরচর হাটের সাথে চরাঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় চর এলাকার মানুষ সহজেই হাটে আসতে পারছে। চরে উৎপাদিত সব্জি, কৃষিপন্যসহ নানান দ্রব্য অনায়াসে মাদবরেরচর হাটসহ উপজেলা সদরে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। তেমনি উপজেলা সদর সহ অন্যান্য স্থান থেকে দ্রব্যাদি নিয়ে চরে পৌছে যাওয়া যাচ্ছে অনায়সেই।

সরেজমিনে ও স্থানীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে,শিবচরের মাদবরেরচর ইউনিয়নের  একটি অংশ উপজেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মার চরাঞ্চল। পদ্মার মাঝে জেগে উঠা একটি চরে দীর্ঘদিন ধরেই মানব বসতি। তবে ওই চরাঞ্চলের সাথে উপজেলার মূল ভূ-খন্ডের সরাসরি সড়কপথে কোন যোগাযোগ ছিল না। পদ্মানদী মাঝে জেগে উঠা একটি দ্বীপের মতো মাদবরেরচর ইউনিয়নের পুরান মাদবরেরচর এলাকাটি। পুরান মাদবরেরচর থেকে উপজেলা শহরে আসতে নৌকায় করে কিছু পথ পাড়ি দিতে হয়। তারপরই সড়কের দেখা মেলে। অথচ চরাঞ্চলে বেড়ে উঠা গ্রামগুলো বেশ পুরাতন। সেখানে রয়েছে হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অসংখ্য গ্রাম। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের। নদী বিভক্ত করে রেখেছে মূল ভূ-খন্ডকে। বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
যোগাযোগে পিছিয়ে থাকা মাদবরেরচর ইউনিয়নের পুরাতন মাদবরেরচর, পুরান কান্দি, নতুন কান্দি, হাজিকান্দি, আলে খাঁর কান্দিসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষের সুবিধার্থে পদ্মার এক শাখা নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে সেতু। মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন  চরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নির্মাধীন সেতুটির নামকরন করা হয়েছে শেখ জামাল সেতু। চলতি বছর ২ অক্টোবর  সেতুটির উদ্বোধন করেন চীফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী এমপি।'

আবুল হাসান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন,'সেতুটি হওয়ায় চরের মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। ঘর থেকে ভ্যান, অটোরিক্সাতে করে মাদবরের চর, পাঁচ্চর, শিবচরে যাওয়া যাচ্ছে। কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এখন দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হচ্ছে সেতুটির কারণে। এই সেতুর ফলে চর এলাকায় আরো উন্নয়ন হবে।'

একটি সেতু পাল্টে দিতে পারে জীবনযাত্রার ধারনা। মাদবরেরচরের শেখ জামাল সেতুর ফলে চরের বুকে উন্নয়নের আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা চরবাসীর।