• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

সুন্দর সমাজ গঠনে সালামের গুরুত্ব

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২১  

সালাম আরবি শব্দ। এর অর্থ-শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, ইত্যাদি। মুসলমানদের পরস্পর সাক্ষাতে সম্ভাষণ করাকে সালাম বুঝায়। এই সম্ভাষণের পদ্ধতি বিভিন্ন জাতিতে বিভিন্ন প্রকার। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কিতাবে মুসলমানদের পরস্পর সালাম-বিনিময় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইসলাম হল আল্লাহ তাআলার একমাত্র মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। কুরআন মাজিদ হল পরিপর্ণ হেদায়েত গ্রন্থ। আর ইসলামি শিষ্টাচারের মধ্যে সালাম হল অভিভাদনের অন্যতম মাধ্যম। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা তৈরির প্রধান উপাদেয়ও সালাম। সালামের মাধ্যমে সমাজে শান্তি আনা সম্ভব, কারণ সালামের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি শান্তি কামনা করে থাকেন।

আল্লাহ তাআলার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ পৃথিবীতে চলার পথে কিরূপে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে পরস্পরের মধ্যে ভাব বিনিময়, সাদর-সম্ভাষণ ও অভিবাদন করে চলবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এই শিক্ষা দিয়েছেন।

ইসলামে সালাম শুধু সম্মানার্থেই ব্যবহার হয় না বরং এটি কল্যাণের একটি বিশেষ দোয়া। দেখা সাক্ষাতে পরস্পর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় দোয়া করেন। সালাম শব্দের শাব্দিক অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা। ইসলামের বিধানানুসারে দেখা সাক্ষাতে পরস্পর পরস্পরের জন্য শান্তি নিরাপত্তা কামনা করে যে দোয়া করা হয় তার নামই সালাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর যখন ওই সব লোক তোমার কাছে আসে যারা আমাদের আয়াতসমূহের ওপর ঈমান আনে, তখন তুমি বল- তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (সুরা আল-আনআম : আয়াত ৫৫)

মানব সৃষ্টির পর থেকে যত নবি-রাসুল এসেছেন সবাই পৃথিবীতে শান্তি-প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করেছেন। একমাত্র ইসলাম ধর্মেই এই অনিন্দ্য বার্তাটি রয়েছে। ইসলাম ধর্মের ন্যায় অন্যান্য ধর্মেও একে অপরকে সম্মান জানানোর নিয়ম রয়েছে কিন্তু তা দুনিয়াতে নিয়ম পালনার্থে করা হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে ইসলামই ব্যতিক্রম। কেননা সালাম প্রদান করার মাধ্যমে ইসলাম একটি আধ্যাত্মিক উন্নতির ইঙ্গিত প্রদান করে। সালাম প্রদান করার মাধ্যমে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলে। ভালোবাসার সুসম্পর্ক বাড়ায়। হাদিসে এসেছে-
এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কথা বলার আগে সালাম দাও। যখন দুইজন পরস্পরের সম্মুখীন হও তখন যে কেউ আগে সালাম দেয় সে আল্লাহর সবচয়ে বেশি কাছাকাছি।’ (মেশকাত)
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট, বড় সবাইকেই সালাম দিতেন। ছোট হলে তাকে সালাম দেয়া যাবে না; এমনটি ইসলামের শিক্ষা নয়। কারণ আপনি সালাম দিলে সে আপনার কাছ থেকে এই মহামূল্যবান অভিভাদনের ভাষা ও সংস্কৃতি শিখবে। অতএব এই সুযোগ হাতছাড়া করার কোনো অবকাশ নেই। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সালামের প্রসার ঘটাতে হবে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপকতা প্রদান কর।’

নিজের ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেয়া, স্ত্রী-সন্তান-সন্তুতির সামনে সালাম বিনিময় করাসহ কারও বাড়িতে প্রবেশের সময় সালাম দেয়া এবং ঘরে প্রবেশের অনুমতি নেয়া সবচেয়ে উত্তম কাজ। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামের কোন কাজ সর্বোত্তম? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়া এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম করা।’ (মেশকাত)

সালাম শুধু ঘরে অনুমতি নেয়া আর পারস্পরিক অভিভাদন ও দোয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। সালাম দেয়ার মাঝে রয়েছে অনেক বরকত ও সাওয়াব। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একবার এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে।
তারপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে।

তারপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন-‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মেশকাত)

তাছাড়া এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের যেসব হক বা অধিকার রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো কারো সঙ্গে দেখা হলেই সালাম বিনিময় করা। কেননা সালাম মানুষকে আপন করে তোলে। দূরত্ব ঘুচিয়ে কাছাকাছি করে দেয়।

সালাম আদান প্রদানেই মানুষ হয়ে ওঠে নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী। প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর সমাজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, পরস্পরের মাঝে বেশি বেশি সালামের প্রচলন ঘটানো। কুরআনের নির্দেশ মেনে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা।

আসুন, সালামের মাধ্যমে পাস্পরিক বন্ধন মজবুত করি। চেনা-অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে বেশি বেশি সালাম বিনিময় করে শান্তি ও কল্যাণ লাভ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ব্যাপকভাবে সালাম বিনিময় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।