• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

সরকারের সাফ্যলের ধারায় যোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন যুগে বাংলাদেশ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২০  

যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে আজ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন এ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন।

ভ্রমণ সময় কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আরামদায়ক ও নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের এ এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে।

স্থানীয় এক পরিবহন চালক বশির বলেন, এটি খুবই সুন্দর সড়ক। এখন অনেক কম সময়ে ঢাকা থেকে মাওয়া যাওয়া যাবে। এছাড়া এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে।

প্রকল্পের বিবরণে জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে ৫টি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। এটিতে মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দুটি এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে।

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ৬ জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার মানুষ সরাসরি এ আন্তর্জাতিকমানের এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।

আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর চার কিলোমিটার মঙ্গলবার ২৬তম স্প্যান বসানোর পর ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।

২০২১ সালের জুনের মধ্যে ট্রাফিকের জন্য ব্রিজটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে, কোনো ভ্রমণকারীর ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ায় মাত্র ১ ঘণ্টা সময় লাগবে না।

এ হাইওয়েতে আগামী ২০ বছরের জন্য ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের পরিমাণ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ১১০০৩ দশমিক ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে ২০১৬ সালে চারটি জেলা- ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে এবং নির্ধারিত সময়সীমার ৩ মাস আগে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।

১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ উদযাপন শুরুর প্রাক্কালে এক্সপ্রেসওয়ে ট্রাফিকের জন্য উন্মুক্ত হতে চলেছে।

স্থানীয় ও ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে দুটি পরিষেবা লেন রাখা হয়েছে যাতে দ্রুত যানবাহনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় চলাচল করতে পারে এবং এইভাবে দীর্ঘপথের যাত্রীদের ভ্রমণের সময় হ্রাস করতে পারে।

এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হল- আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে।

৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ রয়েছে এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৩ মিটার ধলেশ্বরী, ১৫৯১ মিটার ধলেশ্বরী, ২৪৬৬ মিটার আড়িয়ালখাঁ এবং ১৩৬ মিটার কুমার সেতু।

মঙ্গলবার এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া অংশে সরেজমিন দেখা যায়, শ্রমিকরা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির রাস্তায় চূড়ান্ত স্পর্শ দিচ্ছিলেন।

মাওয়ার নিকটবর্তী রাস্তার পাশে নিরালা রেস্তোরাঁর মালিক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মাওয়া থেকে ঢাকা যেতে আগের ২ ঘণ্টার পরিবর্তে এখন ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে। যানজট না থাকায় বাস ও ট্রাক দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারে। এর আগে পোস্তগোলা রেলপথ পার হতেই ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট সময় লেগেছিল, এখন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্পটটি অতিক্রম করা যায়।

তিনি আরও বলেন, ভ্রমণের সময় হ্রাস হওয়ায় রোগীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী থেকে সহজেই মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন। দ্রুত যোগাযোগের অগ্রগতির কারণে এখন অনেক লোকই আমাদের এলাকায় ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করতে চাইছেন। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাগরিক আরিফ চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন করে বলেছেন, এটা চমৎকার, আমি অভিভূত। আমার কাছে মনে হয় আমি যুক্তরাজ্যের কোথাও আছি, এ এক্সপ্রেসওয়ের মান এবং সৌন্দর্য দেখে আমি গর্ব অনুভব করছি।

মাদারীপুরের বাসিন্দা হামিদুল হক বলেন, এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। এতে শিবচর থেকে ঢাকা যেতে অনেক কম সময় লাগবে। শরীয়তপুরের বজলুর রহমান বলেন, আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার পর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা মহাসড়কটি চালু হলে আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাব।