• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

শিবচরে ভ্রমনতরীতে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন স্থানীয় জেলেদের

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২১  

শিবচর প্রতিনিধি: মাদারীপুর জেলার শিবচরের পদ্মানদীতে ভ্রমনপ্রেমীদের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে চারটি ভ্রমনতরী (সাজানো গোছানো মাঝারি আকৃতির ট্রলার) নামানো হয়েছে। চলতি মাসের ৪ তারিখে উপজেলার বাংলাবাজার ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীর তীরে রাখা হয়েছে এই ভ্রমনতরীগুলো। পদ্মাসেতু ও নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা ভ্রমনপ্রেমীরা এখান থেকে নৌকা নিয়ে পদ্মায় ঘুরে বেড়াতে পারে। পর্যটনশিল্পের বিকাশের সাথে সাথে স্থানীয় জেলেদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ গ্রহন। এই ভ্রমনতরীগুলোর মালিক জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত স্থানীয় জেলেরাই। জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে পদ্মাপাড়ের শতাধিক জেলে পরিবার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,‘ পদ্মাসেতু ও নদী এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ অবসর সময় কাটাতে আসে। নৌকা ভাড়া করে নদীতে ঘুরে বেড়ায় এবং পদ্মাসেতু দেখতে মাঝ নদীতেও যায় এসকল ট্রলার। বিচ্ছিন্ন ভাবে ভ্রমনপ্রেমীরা এই এলাকায় ঘুরতে এসে নৌ ভ্রমনও করে। তবে ভ্রমনপ্রেমীদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসন পদ্মার এই এলাকায় পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ভ্রমনতরীর যাত্রা শুরু। একই সাথে এই পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগিয়ে পদ্মাপাড়ের জেলেদের জীবনমান যাতে উন্নত হয় সেই লক্ষ্যে এই ভ্রমনতরীগুলো শুধুমাত্র জেলেরাই জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পদ্মায় নামাতে পারবে। গত ৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা এই ভ্রমনতরীতে ভ্রমন করতে পর্যটকদের ঘন্টা প্রতি এক হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। আয়ের সকল টাকাই জেলেদের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,‘পদ্মাসেতুকে ঘিরে শিবচরের পদ্মাপাড়ে পর্যটনের অমিয় সম্ভবনা রয়েছে। এই সম্ভবনা কাজে লাগিয়ে জেলেদের জীবনযাত্রার মানও বদলে দেয়া সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই পর্যটনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে চারটি ভ্রমনতরী দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে পর্যটনের। ক্রমান্বয়ে নৌকার সংখ্যা আরও বাড়বে। একই সাথে পদ্মার তীর এলাকাতেও পর্যটনের উপযোগী নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে।

স্থানীয় জেলেদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান,‘মাছ ধরার পাশাপাশি পর্যটনের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় জেলেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসা সম্ভব। মাছ ধরার সময়ের বাইরে বাড়তি উপাজর্নের একটা পথ তৈরি হচ্ছে এতে করে। তাছাড়া ইলিশ ধরা বন্ধের মৌসুমে জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে লুকিয়ে মাছ শিকার করতে যাবে না। সেই সময়ে এই ভ্রমনতরীর মাধ্যমে বাড়তি উপার্জনের পথ তৈরি হবে। এতে করে সব মিলিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবে স্থানীয় জেলেরা।
চারটি ভ্রমনতরীর একটির মালিক স্থানীয় জেলে আজাহার মিয়া বলেন,‘মাছ ধরে জীবিকা অর্জন করতাম। এখন বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই ব্যবস্থা হয়েছে। এতে করে বাড়তি টাকা আয় করা যাবে। তবে বর্তমানে ঘণ্টা প্রতি এক হাজার টাকা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এতে করে তেল খরচের শেষে দুইজন মাঝির তেমন কিছু থাকে না। টাকা আরো বাড়ানো দাবি জানাই। সেই সাথে প্রয়োজনে সময়ও বেশি নেবো আমরা।’

অপর জেলে আবু কালাম মোল্যা বলেন,‘আসলে এক ঘন্টায় তেমন কিছুই দেখানো সম্ভব হয় না। উঠতে নামতেই পার হয়ে যায়।’

ঘুরতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান,‘নির্ধারিত নৌকা থাকায় ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের ভ্রমন সহজ হয়ে গেলো। নৌকায় করে পদ্মানদী ও পদ্মাসেতু দেখতে আসা ভ্রমনপ্রেমীদের জন্য এই এলাকায় পর্যটনের আরো উদ্যোগ নেয়া উচিত সরকারের।’

জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান,‘পদ্মাসেতুকে ঘিরে পদ্মা ও চরাঞ্চল পর্যটনের জন্য একটি সম্ভবনাময় স্থান। পর্যটনের বিকাশের সাথে সাথে জেলেদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য প্রাথমিকভাবে চারটি ভ্রমনতরী নামানো হয়েছে পদ্মায়। জেলেদের আয়ের একটি বিকল্প পথ তৈরি করার প্রয়াস এটা। আগামীতে আরো বাড়বে নৌকার সংখ্যা। এতে করে ইলিশ নিষিদ্ধের মৌসুমে জেলেরা বিকল্প উপার্জনের মাধ্যমে সংসার চালাতে পারবে। অবৈধ পন্থায় ইলিশ শিকারের প্রয়োজন হবে না।