• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

শিবচরে নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

 

 

শিবচর প্রতিনিধি:

যেন মুক্তিযুদ্ধকালীন এক শহর। কোথাও দূর্গম পাহাড়ের মাঝে যুদ্ধরত  সৈনিকমুক্তবাংলা।কোথাও নৌকায় চড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনের প্রবাহমান ৭১   ভাস্কর্য। কোথাও আবার অস্ত্র হাতে কাধে কাধ মিলিয়ে স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভভাস্কর্য। রয়েছে বুদ্ধিজীবি স্মৃতি স্তম্ভ, সড়ক ৭১, ৭১ চত্ত্বর, মুক্তবাংলা ভাস্কর্যসহ অসংখ্য ভাস্কর্য-স্মৃতি স্তম্ভ-মুড়্যাল।এখানেই শেষ নয় উপজেলার বিভিন্ন সেতু, স্থাপনা,দোকানপাট সবকিছুতেই লাল সবুজের সমারোহ। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, স্কুলে স্কুলে বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ভবনসহ কতকিছু। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে শুধু দৃষ্টান্তই নয় ইতিহাস সৃষ্টি করছে।

 

আর সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর কোষাধাক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মরহুম ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী (দাদাভাই)- সন্তান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সংসদীয় দলের সাধারন সম্পাদক নূর- -আলম চৌধুরীর অনন্য উদ্যোগে। তার এই মহান উদ্যেগের কারনেই নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। উপজেলাটির দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার দাবী মুক্তিযোদ্ধাদের।

সরেজমিনে জানা যায়, ভৌগলিক কারনে পদ্মা সেতুসহ নানান কারনে দক্ষিনাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাটি বহুল পরিচিত গুরুত্বপূর্ন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই উপজেলার বীর সন্তানদের রয়েছে অনন্য অবদান। তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের এমপি বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী দাদাভাই ছিলেন মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তার দিক নির্দেশনাতেই শিবচর থেকে পাশ^বর্ত্তী উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা হয়।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে মরহুম ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী দাদাভাই এর বড় ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সংসদীয় দলের সাধারন সম্পাদক অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি নূর আলম চৌধুরীর নানান উদ্যোগ দেশে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। উপজেলাটিতে ঢুকতেই একের পর এক সেতু লাল সবুজের রংয়ে ঢাকা। বঙ্গবন্ধুর বড় বোন চৌধুরী ফাতেমা বেগম পৌর অডিটোরিয়ামের সামনে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে পানির ফোয়ারার মাঝে নৌকায় চড়ে একদল মাজায় শাড়ী গোঝা নারী লুঙ্গী কাছা দেয়াখালি গায়ে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদেরপ্রবাহমান ৭১ ভাস্কর্যটি। প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত কলেজ মোড়ে অস্ত্র তাক করেস্বাধীনতা স্তম্ভে দাড়িয়ে আছে বীর সেনানীরা। পৌরবাজারে দীর্ঘ একটি সড়ক নামকরন করা হয়েছে সড়ক -৭১ নামে। যেখানে লাল সবুজ রংয়ে সজ্জিত শতাধিক দোকানও রয়েছে। ৭১ সড়কে প্রবেশমুখেই প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতি স্তম্ভ। উপজেলা পরিষদের সামনে প্রায় ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছেমুক্তবাংলানামের অস্ত্র তাক করে পাহাড়ে যুদ্ধরত অবস্থায় দাড়িয়ে থাকা একদল মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য। শহীদদের কবরের পাশে তৈরি করা হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ। যেখানে স্থানীয় ১৩ জন শহীদদের নামসহ যুদ্ধের ইতিহাস বর্ননা করা হয়েছে।

 

শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে শেখ ফজিলাতুন্নেছার এক অসাধারন ভাস্কর্য। ৭১ চত্ত্বর, বিজয় চত্ত্বর, বরহামগঞ্জ চত্ত্বর, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সভবনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু,শেখ হাসিনা, দাদাভাই মুর‌্যালসহ অসংখ্য মুর‌্যাল। যার প্রায় সবগুলোই নূর- আলম চৌধুরীর নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করে নির্মান করা হয়েছে।

 

ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী দাদাভাইয়ের নামে তোড়ন নির্মানের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন সংসদ সদস্য। একেকটি ভাস্কর্য, মুর‌্যালই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করে। বিভিন্ন রাস্তা ঘাট শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামকরন, স্কুলের বিভিন্ন ভবন মুক্তিযোদ্ধাদের নামকরন, বিভিন্ন সেতু মুক্তিযোদ্ধাদের নামকরন রয়েছে অহরহ। বিভিন্ন বাজারের দোকানপাটও লাল সবুজ সাজে সজ্জিত। সবমিলিয়ে যেন জাতীয় পতাকার লাল সবুজের সমারোহ ভাস্কর্য সমৃদ্ধ এক উপজেলা।এসকল স্মৃতি স্তম্ভে স্ব স্ব দিবসে শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষ শ্রদ্ধা জানানোয় প্রসার ঘটছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে সারাদেশে শিবচরকে মডেল গন্য করার দাবী বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, সাধারন জনগনসহ সকলের।

 

স্কুল শিক্ষার্থী আলমাস বলেন, আমরা কখনো শিবচরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতাম না। বর্তমানে বাজারের বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য দেখে মুরব্বীদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধে শিবচরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছি আর গর্বিত হচ্ছি।

 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনগুলোর কারনে আমাদের শিক্ষার্থীরা এগুলো সম্পর্কে আমাদের কাছে জানতে চায়। আমরা তখন বলি মুক্তিযুদ্ধের গল্প। ফলে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জেনে।

 

শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, অশিবচর যেন এক মুক্তিযুদ্ধের শহরে রূপ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের এত স্মৃতি সংরক্ষন আর কোথাও নেই। এখান থেকে শিক্ষা নিয়েই নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হতে পারবে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সাত থানা মুক্তিযোদ্ধা এরিয়া কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন খান বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষন করছেন তাতে আমরা গর্বিত।

 

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাজাহান চৌধুরী বলেন, সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে শিবচরকে মডেল হিসেবে নেওয়া উচিত।

 

উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন খান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরীর (দাদাভাই) সন্তান আমাদের সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে যে উদ্যেগ গ্রহন করেছেন তা সারাদেশের মধ্যে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

 

জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনির চৌধুরী বলেন, লিটন চৌধুরীর শিবচরের আদলে বাংলাদেশকে সাজিয়ে তোলা দরকার। তাহলেই দেশটি মুক্তিযুদ্ধময় হবে।

 

শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তালুকদার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে আমাদের সংসদ সদস্যের নির্দেশে ইতমধ্যেই আমরা মুক্তবাংলা, প্রবাহমান ৭১, স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভ, শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতি স্তম্ভ, ৭১ চত্ত্বর, ৭১ সড়কসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য মুর‌্যাল নির্মান করেছি। যা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করছে।

 

শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, আমাদের শিবচর উপজেলায় যে দিক থেকেই কেউ প্রবেশ করুক নজরে পড়বে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ বিভিন্ন ভাস্কর্য, মুর‌্যাল লাল সবুজের বিশাল সমারোহ। আর মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতি সংরক্ষনে আমাদের সংসদ সদস্য নিজস্ব তহবিল থেকেই অধিকাংশ ব্যয় করেছেন। এছাড়া পৌরসভা , জেলা পরিষদ উপজেলা পরিষদ থেকেও কিছু কিছু স্মৃতি সংরক্ষনে ব্যয় করা হয়েছে।

 

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ বলেন, আমি দেশের অনেক স্থানে দায়িত্ব পালন করেছি। তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে শিবচরকে আমার কাছে ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে স্থানীয় সংসদ সংদস্যের দেশপ্রেম সত্যি বিরল।

 

আওয়ামীলীগ সংসদীয় দলের সাধারন সম্পাদক নূর--আলম চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে আমাদের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। সারা উপজেলাকেই মুক্তিযুদ্ধের আলোকে সাজাতে চাই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এখানে যুদ্ধাপরাধী মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় ছিল। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সম্পূর্নরুপে বিকৃত করেছে। আমরা এমন কিছু করতে চাই যেন আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে জীবন ধারন করতে পারে।