• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

শিবচর ও আশেপাশের এলাকায় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ!

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২০  

শিবচর প্রতিনিধি: মাদারীপুর জেলার শিবচর, শরিয়তপুরের জাজিরা,ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুর। পদ্মাসেতুকে ঘিরে এই সকল অঞ্চলের অবহেলিত জনপদে এখন উজ্জ্বল সম্ভাবনা। প্রত্যন্ত জনপদে গত ১৫ বছর আগেও যেখানে ছিল না কোন রাস্তা, কাদামাটি-পানি পেরিয়ে ঘরে ফিরতে হতো সাধারণ মানুষের, জরুরী প্রয়োজনে কোথাও তরিত্বগতিতে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা ছিল না সেই সকল এলাকাতে এখন দেশের অন্যতম সড়কের ছোঁয়া! রাস্তাঘাট হওয়ার সাথে সাথেই হাট-বাজার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এখন শহুরে স্পর্শ। জীবন-মানের রাতারাতি এই পরিবর্তনে বিস্মিত এই সকল এলাকার মানুষ। অভিভূত, আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাতারাতি পাল্টে যেতে থাকে মাদারীপুর জেলার শিবচরসহ আশেপাশের এলাকার চিত্র। পদ্মাসেতুর জন্য তৈরিকৃত এ্যাপ্রোচ সড়ক;যার ফলে পদ্মাসেতুর জাজিরা পয়েণ্ট থেকে শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর পর্যন্ত যোগাযোগের আমুল পরিবর্তন ঘটে। এ্যাপ্রোচ সড়কটির জন্য আশেপাশের এলাকার উন্নয়ন হয়। নির্মান করা হয় পাকা রাস্তা। বিশেষ করে পদ্মাসেতু  ও সড়ক নির্মানের জন্য পরিবহনের সহজ যোগাযোগ তৈরি করতে এমনিতে নির্মান করতে হয়েছে রাস্তা-ঘাট। আর এর ফলেই প্রত্যন্ত গ্রামগুলো পেয়েছে আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। দ্রুততার সাথে এই সকল এলাকার ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার বাড়তে থাকে।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দেশের অন্যতম সড়কপথ। যার নাম এক্সপ্রেসওয়ে। ছয়লেনের এই সড়কটির জন্য শিবচরের পাঁচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুনত্ব এসেছে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। বৃদ্ধি পেয়েছে এই সকল এলাকার জমির মূল্যও। যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজতার কারণে মানুষের ব্যবসায়-বাণিজ্যের দ্বার হয়েছে মসৃন।

পদ্মাসেতুকে ঘিরেই এ্যাপ্রোচ সড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে। আর এই পদ্মাসেতুকে ঘিরেই এবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে অলিম্পিক ভিলেজের। মাদারীপুর জেলার শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুর নিয়ে এই অলিম্পিক ভিলেজ নির্মান করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। অলিম্পিক ভিলেজ নির্মান হলে প্রত্যন্ত গ্রামগুলো পরিণত হবে আধুনিক শহরে। এদিকে পদ্মাসেতুর কারণেই দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো সহজ করতে নির্মানাধীন রয়েছে রেললাইনের কাজ। বেশ দ্রুত গতিতে রেল লাইন নির্মান কাজ চলছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শিবচরের পদ্মাসেতু পর্যন্ত। উন্নয়নের এই মহাকর্মযজ্ঞ থেকে গর্বিত গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এই উন্নয়ন নিয়ে তারা আধুনিক জীবনের স্বপ্ন দেখছে।

একই সাথে যুগযুগ ধরে সকল দিক থেকে অবহেলিত থাকা পদ্মার চরাঞ্চলেও লেগেছে উন্নয়নের হাওয়া। চর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করতে সড়ক,সেতু-কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে। ফলে পদ্মা সেতুকে ঘিরে পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষেরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। অবহেলিত চরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এ সকল এলাকায়ও গড়ে উঠবে নানা ধরণের প্রতিষ্ঠান। কলকারখানা- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। কাজের সুযোগ তৈরি হবে এ অঞ্চলের মানুষের। সব মিলিয়ে নদীভাঙা, রোদে পোড়া চরের মানুষের ভাগ্য যে পরিবর্তন হবে; সেই দিনটি খুব দূরে নয়। এমনটিই ভাবনা চরের মানুষের।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতুর মাত্র দুটি স্প্যান উঠানো বাকী আছে। অনেক দিন আগেই এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেয়া হয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য। দ্রুতগতিতে চলছে সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প।

সরেজমিনে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাতসহ পদ্মাসেতু সংলগ্ন এলাকা ও এক্সপ্রেসওয়ের এলাকা ঘুরে ও মানুষের সাথে কথা বললে এই উন্নয়ন নিয়ে গর্বিত বলে তারা জানান। আগামী প্রজন্ম একটি আধুনিক সমাজে বসবাস করতে পারবে ভেবে অভিভূত বয়স্করা। চরের মানুষে বলে কেউ আর খাটো করে দেখতে পারবে না তাদের। কারন দেশের মধ্যে অন্যতম উন্নয়ন এলাকায় হচ্ছে তাদের বসবাস।
পদ্মার চর এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ করলে তারা জানান,‘পদ্মাসেতু আমাদের স্বপ্ন! আমরা দ্রুত পদ্মাসেতুর কাজ শেষ দেখতে চাই। পদ্মাসেতুর সাথে সাথেই আমাদের এই এলাকার উন্নয়ন হবে। আগে যেখানে কোন রাস্তাই ছিল না আজ সেখানে বিদেশের মতো রাস্তা! চরের মানুষদের অনেকেই ‘খাটো’ করে দেখে। কিন্তু আগামীতে এই চরই হবে উন্নয়নের মডেল।’

চরের জেলেদের কাছে পদ্মাসেতু সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন,‘পদ্মায় মাছ ধরতে যারাই যাই তাকিয়ে থাকি সেতুর দিকে। এক এক করে স্প্যানগুলো উঠে গেছে। মাত্র দুটি বাকী। তাহলেই দুইপ্রান্তের জোড়া লেগে যাবে। পদ্মার পাড়ের মানুষ হিসেবে আমাদের গর্ব হয় পদ্মাসেতুকে নিয়ে। তাছাড়া পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই চর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উন্নয়নের কথা বলেছেন। আমরা বিশ্বাস করি এই চরের উন্নয়ণ হবে পদ্মাসেতুর সাথে সাথেই!’

শিবচর উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একমাত্র দ্বীপ ইউনিয়ন হচ্ছে চরজানাজাত ইউনিয়ন। এছাড়াও পদ্মা বেষ্টিত রয়েছে কাঁঠালবাড়ী, মাদবরেরচর ও বন্দোরখোলা ইউনিয়ন। তাছাড়া শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাগুরখন্ডসহ আশেপাশের বিশাল এলাকা পদ্মার চরাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। চরাঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। নানা ধরণের সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত চরের মানুষেরাও। এ সকল চরের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই কৃষিজীবি। এছাড়াও রয়েছেন বড় একটি অংশ জেলে। মূল ভূখন্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন চরজানাজাত ইউনিয়নে সড়ক পথে কোন যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ চরের ৬৫টি গ্রামে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের বাস। কৃষিকাজ,গবাদি পশু পালন, মাছ শিকার ও ঘাট এলাকায় ফেরি করে পন্য বিক্রি এ চরের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস। পিছিয়ে পড়া এই পদ্মার চরে বইছে উন্নয়নের ছোঁয়া। অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, শেখ হাসিনা ইন্সিটিউট অব হাইটেক পার্ক এ্যান্ড টেকনোলজিসহ নানা ধরনের উন্নয়ন কাজের জন্য পদ্মার চর ও আশেপাশের এলাকা বেছে নেবার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে পদ্মাসেতু নির্মানের সাথে সাথেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০ হাজার ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মাসেতু হয়ে মাত্র ৪৫ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে রাজধানী ঢাকায় যাওয়া সম্ভব হবে এর মাধ্যমে।

স্বপ্নের পদ্মাসেতু মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এক সময়ের কল্পনা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ধীরে ধীরে বদল হচ্ছে চরাঞ্চলসহ দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। পদ্মার পাড়ের এসকল এলাকা হয়ে উঠবে আধুনিক নগরী। ভবিষ্যত প্রজন্ম এই সুবিধা ভোগ করবে এমনটাই আশা এই এলাকার সাধারণ মানুষের।