• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

রোজায় যে বিষয়গুলো জেনে রাখা জরুরি

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২১  

পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ রমজানের রোজা সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-

সাওম বা রোজা কী?
সাওম আরবি শব্দ। শব্দটি কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা বা ত্যাগ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর ইসলামে সাওম বা রোজা মানে হলো- সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় গ্রহণ এবং যৌন মিলনসহ যেসব কাজে রোজা ভেঙে যায় তা থেকে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিরত থাকা।

ইসলামে রোজার গুরুত্ব: সাওম বা রোজা ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি। রোজা মানুষকে যাবতীয় অনাচার থেকে হেফাজত করে।

> হজরত ওসমান বিন আবুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা হলো দোজখ থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ; যেমন যুদ্ধ থেকে বাঁচতে তোমরা ঢাল ব্যবহার করে থাক।’ (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।

> হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা হলো জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য ঢাল বা দুর্ভেদ্য দুর্গস্বরূপ।’ (মুসনাদে আহমাদ, বাইহাকি)।

> অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে রমজান।’
> এটি একটি বরকতময় মাস।
> এ মাসে রোজা পালন করা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন।
> এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়।
> এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়।
> এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শেকলবদ্ধ করা হয়। আর
> এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। সুতরাং যে এ রাত থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃত পক্ষেই বঞ্চিত হলো।’ (নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে আন্তরিকতার সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রোজা পালন করে থাকে, আল্লাহ তায়ালা তার জীবনের আগের সব গোনাহ মাফ করে দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একদিন রোজা রাখে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে রাখবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

রোজা রাখবেন যারা: প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। তবে তাতে রয়েছে কিছু শর্ত-

> রোজা রাখতে সক্ষম হতে হবে।
> প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
> মুকিম বা বাড়িতে অবস্থানকারী হতে হবে। মুসাফিরের জন্য নয়।
> নারীদেরকে অবশ্যই হায়েজ (মাসিক ঋতুস্রাব) ও নেফাস (সন্তান ভূমিষ্ঠের নির্ধারিত সময়) মুক্ত থাকতে হবে।

যাদের জন্য রোজা জরুরি নয়: কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কারণবশত অনেকের জন্যই রোজা রাখা জরুরি নয়। তবে পরবর্তীতে সে রোজাগুলো আদায় করে নিতে হয়। আর তাহলো-

> অজ্ঞান হয়ে গেলে।
> বয়সন্ধিক্ষণের সময়। সবে মাত্র রোজা ফরজ হয়েছে, কিন্তু রাখতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়।
> অতি বয়স্ক মানুষ। যার জন্য রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব।
> মারাত্মক দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থ ব্যক্তি।
(তারা উভয়ে তাদের রোজা পরিবর্তে একজন মিসকিনের খাদ্যভার বহন করবে)
> গর্ভর্তী নারী। রোজা রাখার কারণে যদি গর্ভবর্তী নারী ও তার গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(এদের ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেন, একজন মিসকিনের খাদ্যভার বহন করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এরা পরবর্তীতে ৩০ দিন রোজা পূর্ণ করে নেবে)।
> সফর বা ভ্রমণকারী ব্যক্তি। সফর অবস্থায় রোজা রাখা আবশ্যক নয়। সফর শেষে রোজাগুলো আদায় করে নেবে।
> হায়েজ ও নেফাসে আক্রান্ত নারী। মাসিক ঋতুস্রাবের সময় কিংবা সন্তান ভূমিষ্ঠের পরবর্তী মেয়াদে থাকা নারীর জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়। পরবর্তীতে তারা ইদ্দতকালীন রোজা পূর্ণ করে নেবে।

রমজান মাসজুড়ে যে আমলগুলো জরুরি: যারা রোজা পালন করেন, তাদের জন্য রয়েছে কিছু আবশ্য করণীয়। যা রমজান মাসজুড়ে পালন করা জরুরি-

তারাবিহ নামাজ আদায়: রমজানের চাঁদ দেখা গেলে ওই সন্ধ্যা থেকেই তারাবিহ বা রমজানের রাতের নামাজ আদায় করা। এ নামাজ মসজিদে কিংবা ঘরে একা একাও আদায় করা যায়। হাদিসে এসেছে-

‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় ক্বিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি)।

শেষ রাতে সাহরি খাওয়া: কম হলেও রোজার জন্য শেষ রাতে সাহরি খাওয়া। অন্তত একটি খেজুর দিয়ে হলেও সাহরি খাওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

‘তোমরা সাহরি খাবে, কেননা এতে অনেক বরকত রয়েছে।’ (বুখারি)

খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা: ইফতারের সময় হলে খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা। খেজুর না পেলে সাদা পানি পান করে ইফতার শুরু করা। হাদিসে এসেছে-

‘রাসূলুল্লাহ (সা.) খেজুর খেয়ে (মাগরিবের) নামাজের আগে রোজা ভঙ্গ করতেন।’ (আবু দাউদ)।

সময় হওয়ার পর ইফতারে দেরি না করা: ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। সময় হওয়ার অযথা রোজা ভাঙতে দেরি না করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

‘মানুষ ততদিন কল্যাণের পথে থাকবে, যতদিন তারা (সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে) তারাতারি ইফতার শুরু করবে।’ (মুসলিম)।

মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ পরিহার করা: রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানের অন্যতম দাবি। হাদিসে পাকে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন-

‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে না, তার পানাহার ত্যাগ করায় (রোজা রাখায় আল্লাহর) কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)।

মন্দ কথার উত্তম জবাব দেয়া: রোজাদারের সঙ্গে কোনো ব্যক্তি মন্দ কথার জবাবে ভালো কথায় উত্তর দেয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

‘কেউ যদি মন্দ কথা বলে, রাগানোর চেষ্টা করে, তখন তাকে এ কথা বলা যে, আমি রোজাদার।’ (নাসাঈ)।

রোজা রেখে যা করা যাবে না: এমন কিছু কাজ আছে, যা করলে রোজা হবে না। আর যদি কেউ সে কাজগুলো করে ফেলে তবে পুনরায় রোজা রাখতে হবে।

> রোজা অবস্থায় পানাহার করলে।
> ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে।
> রোজা অবস্থায় মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হলে।
> যৌন কাজে নিয়োজিত হলে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো জেনে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।