• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

রানী দুর্গার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯  

ইতিহাস, ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপ বরিশাল। এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হচ্ছে রানী দুর্গাবতীর দুর্গাসাগর। বরিশালের বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউপির বানারীপাড়া-বরিশাল সড়কের পাশে অবস্থিত। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম দীঘি এটি।

এ দীঘির মোট জমির আয়তন ৪৫.৫৫ একর। এর মধ্যে ২৭.৩৮ একর জায়গা ঘিরে মূল দীঘি। রানী দুর্গার নামের সঙ্গে মিল রেখে এবং সাগর নাম যুক্ত করে এর বিশালত্ব বুঝিয়ে দীঘিটির নামকরণ হয়েছে। 

মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে ভরপুর এ দীঘি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। দর্শনার্থীরা প্রতিনিয়তই এ দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন। দীঘির চারপাশে ও মাঝখানের দ্বীপটিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, ওষধি ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। দীঘির চারপাশে ১.৬ কিলোমিটার হাঁটাপথ রয়েছে। বিশাল এ দীঘির মাঝখানে সুন্দর জঙ্গলপূর্ণ ছোট্ট দ্বীপের মতো একটি টিলা রয়েছে। দর্শনার্থীর অন্যতম আকর্ষণ মাঝখানের দ্বীপটির সৌন্দর্য। তবে পাড় থেকে দ্বীপে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই এবং যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না।

দীঘির মাঝখানের দ্বীপটি সারাক্ষণ পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে। এখানে আছে সুবিশাল সিমেন্টের তিনটি প্রশস্ত ঘাটলা। দীঘির পাড়ে সরু সড়ক, মাঝে মধ্যে বসার জন্য বেঞ্চ, সবুজ বৃক্ষরাজি, পাখির কলকাকলি, মাতাল হাওয়া ইত্যাদির পাশাপাশি দুর্গাসাগরের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মোহিত করে পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমীদের। 

বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে। প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এ দীঘি অনাবিল প্রশান্তির অন্যতম কেন্দ্র। সম্পূর্ণ দীঘিটি উঁচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। শখের মৎস্য শিকারিরাও এখানে আসেন, বিশাল আকৃতির মাছ ধরার জন্য। বছরে অন্তত দুইবার টিকিট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ রয়েছে এখানে। এছাড়াও চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র স্নানের উদ্দেশ্যে এখানে সমবেত হন। স্নান উৎসবের সময় এখানে বড় মেলা বসে। 

 

 

কথিত আছে, সাগরঘেঁষা প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপ বারবার বর্মি আর পর্তুগিজ জলদস্যুদের অবাধ লুণ্ঠন ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় শ্রীনগর তথা মাধবপাশায় চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের পঞ্চদশ রাজা শিবনারায়ণ। যদিও রাজবাড়ির কিছুই অবশিষ্ট নেই। বেশকিছু দীঘি থাকলেও তার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। যা রয়েছে তা এখন শুধুই কালের সাক্ষী। রাজবংশের উত্তরসূরিরা এখন ভারতে বসবাস করছেন। 

১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রজাদের খাবার পানির কষ্ট লাঘবের জন্য শিব নারায়ণের স্ত্রী রানী দুর্গাবতী বিশাল এ দীঘিটি খনন করান। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতী ও প্রজাবৎসল। তার নামেই দীঘিটি দুর্গাসাগর নামে পরিচিত। জনশ্রুতি আছে, রানী সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি একবারে যতটুকু জমিতে হাঁটতে পারবেন, দীঘি ততোটুকু খনন করা হবে এবং তাই করা হয়েছে।

দুর্গাসাগরকে পাখির অভয়াশ্রম ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।দুর্গাসাগর উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে।

অতিসম্প্রতি দুর্গাসাগরকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে গাছে হাড়ি বাঁধা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন  পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিম। এর আগে প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে দুর্গাসাগর দিঘির চারিপাশ ঘুরে দেখা হয়েছে। এসময় প্রতিমন্ত্রী দুর্গাসাগরকে পর্যটনের একটি বড় স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।