• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

যেভাবে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে দেশ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২০  

স্বাধীনতার চার যুগে শিল্পায়নের সিঁড়িতে উঠে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত রাষ্ট্র এখন তৈরি পোশাক উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। জাহাজ, সিমেন্ট থেকে কাগজ, ওষুধ থেকে পাদুকা, ইস্পাত থেকে আইসিটি শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে পদ্মা মেঘনা যুমনা বুড়িগঙ্গা পাড়ের এ দেশ। চার যুগ আগে বাংলাদেশকে শাসন করত যে পাকিস্তানিরা, তারাও এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল হিসেবে স্বীকার করছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বাঙালির অবিস্মরণীয় জয়কেই পরিপূর্ণতা দান করেছে বাংলাদেশের নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি।

'সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত নানা ইতিবাচক কর্মসূচির ফলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বদলে যাচ্ছে দেশের চেহারা। আওয়ামী লীগ সরকারের ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ায় এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

শিক্ষা: সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে বছরের শুরুতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে সকল ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের এক অনন্য সফলতা। এখন পর্যন্ত ২৯৬ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে সরকার। বর্তমান সরকার শুরুতে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক।

দারিদ্র্যের হার: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের অর্থ বছরে ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর হতদরিদ্রের হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমেছে। বিশ্বের কাছে অভাবনীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা। দারিদ্র্যের হার হ্রাসে সরকারের কার্যক্রম ছিল আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।

গড় আয়ু বৃদ্ধি: দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৩ বছর। বিগত কয়েক বছরে দেশের জনগণের গড় আয়ুতে পরিবর্তন ছিলো লক্ষ্যণীয়।

বিদ্যুৎ খাতে উন্নতি: বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্য বিস্ময়কর। দেশের অনেক জেলা এরই মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। ৯৫ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি মিলিয়ে গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ। বিদ্যুৎ বিতরণে এ পর্যন্ত দেশে সঞ্চালন লাইন করা হয়েছে ১১ হাজার ৯০৫ সার্কিট কিলোমিটার। গ্রিড সাব-স্টেশন ক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৫ (এমভিএ) স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার। এক সময় ডাবল ডিজিটের সিস্টেম লস কমে এখন ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমেছে। সরকারের সর্বশেষ হিসাবে, বছরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে ৫১০ কিলোওয়াট।

আমার গ্রাম, আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করতে সরকারের কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছানো। বর্তমানে ডিজিটাল ডিভাইস তৈরির পাশাপাশি ৯০০ ডিজিটাল সার্ভিস তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ সার্ভিস প্রায় প্রস্তুত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সব গ্রামকে জেলা-উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করা হবে। সুপেয় পানি এবং উন্নতমানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সুস্থ বিনোদন এবং খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। কর্মসংস্থানের জন্য জেলা-উপজেলায় কলকারখানা গড়ে তোলা হবে। সর্বত্র পৌঁছে যাবে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি।

আইসিটি খাতে রফতানি: বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব মনে হলেও সত্য, বাংলাদেশ এখন আইসিটি খাতে রফতানি শুরু করেছে। গেলো বছরে আইসিটি খাতে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া বাংলাদেশে তারুণরা আইসিটির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিভাগে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলছেন। 

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে অনলাইন শ্রমশক্তির সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে ভারত, যাদের প্রায় ২৪ শতাংশ গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সার ওয়ার্কার আছে। এর পরের অবস্থানটিই বাংলাদেশের। দেশের উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে শুরু করেছে ‘ডিজিটাল অর্থনীতি’। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থানেও অন্যন্য অবদান রাখছে এই ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং।

তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা এই সরকারের মূলনীতি। একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এবং স্বাবলম্বী তরুণ সমাজ গঠন করতে ২০২১ সালের মধ্যে ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’ তৈরি করা হবে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স: বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের জনগণের কল্যাণে এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছে সরকার। দুদক প্রাতিষ্ঠানিক টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা দফতরের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির স্বরূপ এবং কারণ উদঘাটন করে তা প্রতিরোধে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা দফতরে সুপারিশ করেছে। দুদকের এরূপ কার্যক্রমের ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা দফতরে দুর্নীতির মাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা: শুধু মাছে ভাতে নয়, চারটি খাদ্য বাংলাদেশ এখন স্বয়সম্পূর্ণ। এগুলো হলো পোল্ট্রি শিল্প, দুধ ও ডিম, মৎস্য ও চাল উৎপাদন। বিশ্বে মৎস্য চাষে বাংলাদেশ তৃতীয়। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। বাংলাদেশের সবজি বিশ্বের ৫০টি দেশে রফতানি হয়। কৃষিমন্ত্রী  আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিগত দশ বছরে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। চাল, শাকসবজি ও শস্য উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে এর কিছু রফতানিও করা হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য রফতানি করতে সক্ষম হওয়া দেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন ছোয়ায় ত্বরান্বিত হয়েছে মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য নির্মূল, সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু ইকোনোমি- সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।