• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

যে কারণে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ মাছের ডিম সংগ্রহ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২০  

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে এবার রেকর্ড পরিমাণ মাছের ডিম সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় জেলারা। হালদার দূষণ রোধ, মা মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় মা মাছ বেশি ডিম ছেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়রা। ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, হালদায় এবছর মা মাছ ডিম বেশি দেওয়ার পেছনে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা রুহুল আমিনের পদক্ষেপ ভূমিকা রেখেছে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলি জানিয়েছেন, ‘এবার ৬১৬ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রায় ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন। গত ১৪ বছরের মধ্যে এবার রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করেছেন জেলেরা। হালদাকে যদি স্বরূপে রাখা যায় তবে এই সুফল আমরা প্রত্যেক বছর পাবো।’

ডিম আহরণকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাতে হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এরপর শুক্রবার (২২ মে) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম ছাড়ে মা মাছ।

গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আকবর আলী বলেন, ‘এবার প্রচুর ডিম সংগ্রহ হয়েছে। আমি ৪০-৫০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছি। হালদাকে পুরনো রূপে ফিরে পেয়ে আমরা অনেক খুশি। দূষণ ও অবৈধ মাছ শিকার বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় এবার নদীতে মা মাছ বেশি ডিম দিয়েছে।’

হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টায় মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ার পর নদীর গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, সত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনাঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে হালদা পাড়ের ৬১৬ ডিম সংগ্রহকারী ২৮০ নৌকা দিয়ে একটানা কয়েক ঘণ্টা ডিম আহরণ করেন। একেকজন ৩০-৫০ কেজি পর্যন্ত ডিম আহরণ করেছেন। সব মিলিয়ে এবার হালদা থেকে প্রায় ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ আহরণ।

হালদায় এবছর মা মাছ ডিম বেশি দেওয়ার পেছনে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের প্রশংসা করেছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

হাটহাজারী ইউএনও’র অফিস সূত্রে জানা যায়, রুহুল আমিন হাটহাজারী উপজেলায় যোগদানের পর গত একবছরে ১০৯ বার হালদা নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছেন। অভিযানে ২ লাখ ২১ হাজার মিটার ঘেরা জাল জব্দ করা হয়। জালগুলো দিয়ে নদী থেকে মা মাছ শিকার করা হতো। এছাড়া বালু উত্তোলনকারী ৯টি ড্রেজার ও ১৫টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। সাড়ে তিন কিলোমিটারেরও বেশি বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ ধ্বংস করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ঘণফুট বালু।

এ সম্পর্কে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন,  ‘ডিম সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হলে হালদাকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। জেলেরা যাতে ঘেরা জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। তবেই হালদা নদী তার আগের রূপে ফিরে আসবে। তখন ডিম সংগ্রহ এমনি এমনিতেই বেড়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ওপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে হালদাকে আগের রূপে ফেরাতে গত এক বছরে ১০৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ড্রেজার, ঘেরা জাল, বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহার করা পাইপ ও নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। এসব অভিযান পরিচালনায় স্থানীয় মানুষজন উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হালদা পুরনো রূপ ফিরে পাচ্ছে। এ কারণে এবার রেকর্ড সংখ্যক ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।

হালদায় ডিম সংগ্রহ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন,  রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছাড়ার পেছনে হালদা পাড়ে তামাক চাষ বন্ধ করা, হালদা দূষণকারী এশিয়ান পেপার মিল ও হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করা, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অফিসের তৎপরতা। মূলত হালদা দূষণ কমে যাওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে। এ কারণে এবার রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন সংগ্রহকারীরা।

হালদায় গত কয়েক বছরের ডিম সংগ্রহের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে একহাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি (নমুনা ডিম) কেজি ওই বছর পুরো মাত্রায় ডিম ছাড়েনি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি এবং ২০১২ সালে একহাজার ৬০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।