• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

যে কারণে শিবচরে করোনার বিস্তার ঘটেনি

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২০  

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে দেশের প্রথম কোনো এলাকা হিসেবে লকডাউনের একমাস অতিক্রম করল মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা। গত ১৯ মার্চ দেশে সর্বপ্রথম শিবচরকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সেদিন বাংলাদেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭ জন। এর মধ্যে শিবচরেই ছিল আটজন। তবে লকডাউন থাকায় করোনার কমিউনিটি সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তা না হলে নারায়ণগঞ্জের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি হত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থা্নীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তার একদিন আগে ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসেন শিবচর পৌরসভার গুয়াতলার এক ব্যক্তি। তিনি ১৩ মার্চ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। পরদিন তার স্ত্রী ও দুই সন্তানও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়। ১৭ মার্চ শনাক্ত হয় তার শাশুড়ি ও এক বন্ধু। ১৮ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। ওই সাতজন ইতালি প্রবাসীর মাধ্যমেই সংক্রমিত হন। এর বাইরে উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের হোগলার মাঠ গ্রামের একজন করোনায় আক্রান্ত হন।

ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১৯ মার্চ শিবচর উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ দেশের প্রথম কোনো এলাকা হিসেবে শিবচরকে লকডাউন ঘোষণা করে। ওই সময় আইইডিসিআরের টিম ঘন ঘন শিবচরে এসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা করে। এর ফলে ওই পরিবারের আরও দুইজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২৪ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপেও ভুগছিলেন।

এরই মধ্যে আইইডিসিআর দেশের মধ্যে যে পাঁচটি এলাকাকে করোনা সংক্রমণ এলাকা ঘোষণা করে। তার মধ্যে শিবচর অন্যতম। দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরে করোনা রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল এবং ওই দুই পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ১২ এপ্রিল ওই প্রবাসীর এক প্রতিবেশীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর বাইরে আরও তিনজন আক্রান্ত হন। তবে তারা নারায়ণগঞ্জ ফেরত ও অপর একজন তাদের সংস্পর্শে আক্রান্ত আসা। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক আছেন যিনি নারায়ণগঞ্জে থেকে রোগী দেখতেন। তিনি শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসকের স্বামী। তিনি শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক স্ত্রীর কাছে বেড়াতে আসেন এবং তার মাধ্যমে তার চিকিৎসক স্ত্রী ও সাত বছরের মেয়ে আক্রান্ত হন। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরের মোট রোগীর সংখ্যা ১৭।

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, লকডাউনের শুরু থেকেই জাতীয় সংসদের চিপ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর নির্দেশে কঠোর নীতিমালা মেনে শিবচর উপজেলার সর্বত্র প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত এলাকার এক তৃতীয়াংশ মানুষের মাঝে সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তাতে প্রায় ২৮ হাজার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সুবিধা গ্রহণ করেছে। এ কারণেই মানুষ অনেকটা ঘরবন্দি থাকতে পেরেছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রোগের বিস্তার রোধে আইইডিসিআরের গবেষণা ও গাইড লাইন অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে জন বিচ্ছিন্ন করে রাখা এবং শতভাগ লকডাউন পালন করার কারণে শিবচরে করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। অন্যথায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মত সংক্রমিত এলাকায় পরিণত হত। কারণ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পরই শিবচরের করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে।

শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, শিবচরকে লকডাউন ঘোষণা করার পর আমরা এটা কার্যকর করার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর পক্ষ থেকে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। শিবচরবাসী সর্বাত্মক লকডাউন মেনে চলায় শিবচরে নারায়ণগঞ্জের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিবচরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনগণ সরকারি নির্দেশ মেনে চলায় এখানে কমিউনিটি পর্যায়ে করোনার বিস্তার ঘটেনি। তিনি জনগণকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লকডাউন মেনে চলার আহ্বান জানান।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ জানান, করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি এ উপজেলায় করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।