• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

যুদ্ধাপরাধীদের ছাড় নয়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০১৯  

ভারতের স্বাধীনতার আগের কথা। এক নারী মহাত্মা গান্ধীর কাছে গিয়ে উপহাস করে বলেছিলেন-গান্ধীজী, গান্ধীজী স্বাধীনতা পাইছেন কি? আন্তর্জাতিক মানের ব্যারিস্টার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রত্যুত্তর ছিল-গর্ভ হওয়া মাত্র সন্তান প্রসব হয়না। যার অর্থ উপযুক্ত সময়ের প্রয়োজন। এই উপমা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের অনবদ্য ভাষণের বেলায় যথার্থ প্রযোজ্য। ছাত্র নেতাদের চাপ, আরো কারোর কত কথা; কেবল বেগম মুজিব বলেছিলেন, তোমার নিজের যা ইচ্ছে হয় তাই করো। ওদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তিনি হতেন একজন বিচ্ছিন্নতাবাদি নেতা। পৌঁনে তিনটায় শুরু হওয়া ১৮ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের স্বাধীতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান করেছিলেন। এরসাথে সামরিক আইন প্রত্যাহার আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীর ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কথায় সমগ্র জাতি একাট্টা তা প্রমাণ করেছিল। পাকিস্তানী সমারিক জান্তা ওতেই বুঝে গিয়েছিল সামনে কি হতে পারে। এর নেপথ্যে বিচক্ষণতা আর উপযুক্ত সময় জ্ঞানই তাঁকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বা জনক বলে পরিচিত করলো। এক্ষেত্রে একসময়ের প্রবল জনপ্রিয় নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর অবস্থান দেখলেই স্পষ্টত প্রমাণ মেলে তার হটকারী সিদ্ধান্ত কতটা দায়ী। একথা শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের বেলায়ও যথার্থ। জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তার জীবদ্দশায় কোন বই লেখেননি। তবে একদা শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের কাছে গিয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তার জীবনী লেখার। জবাবে শেরেবাংলা বলেছিলেন-ও তুমি আমার নামে বই লেইখ্যা বিখ্যাত হইতে চাও। অধ্যাপক রাজ্জাক প্রতুত্ত্যরে জানিয়েছিলেন, আমি আপনার রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজির কথাগুলো তুলে ধরতে চাই। এসব উপমা কেবলি নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে টানা।

যাগ্গে, আলোচনায় ফিরি। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণ এর পরবর্তী ২৫ শে মার্চের কালোরাতের মধ্যদিয়ে ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা যার সমাপ্তি ঘটেছিল ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে। বিভিষিকার ওই ৯ মাস ওসময়ের সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর সে শিশু থেকে নারী প্রত্যেকের জীবনে দাগ কেটেছিল। নারীর সম্ভ্রমহানি, খুন, অগ্নিকান্ড আর বিবাগী হওয়ার ঘটনা অসংখ্য। বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছিলেন, সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড নামের বিখ্যাত কবিতাখানি। যেখানে শরনার্থীদের দুর্দশার কথাই ফুটে উঠেছিল। ওই নিয়ে নোবেলজয়ী বব ডিলান সহশিল্পীদের সাথে বাংলাদেশী শরনার্থীদের সহায়তায় কনসার্ট করেছিলেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে কোন একদিন ওই নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখা হয়েছিল বানারীপাড়া উপজেলার গাভারামচন্দ্রপুর গ্রামের বৃদ্ধা সরস্বতী রাণীর সাথে। মিলিটারী আসবে আসবে এমন কথা শুনে বাড়ির পুরুষ লোকেরা অনেকেই দূর গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। একদিন স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী সেনারা ঢুকে পড়ে তাদের গ্রামে। রান্না বলতে চাল নেই, তাই কচু আর শাকপাতা সাথে ঘরপোড়া ডাল। ওসব ফেলে রেখে পাশের কচুক্ষেতে গিয়ে পালিয়ে থাকেন। ওদিন তাদের সাথে এক মাস বয়সী শিশুকে কোলে নিয়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক মা। সমানতালে কেঁদে চলছে শিশুটি। পাশের লোকজন বলছে বাচ্চার কান্না থামাও নতুবা আমরা সবাই মারা পড়বো। অগত্যা নিরুপায় মা তার সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করতে বাধ্যহন অন্যদের জীবন রক্ষার্থে। কল্পনায় একবার ওই সময়য়ের কথা ভাবুন, কে না ব্যথিত হবেন।

ঝালকাঠির ডুমুরীয়া গ্রামের ঘটনাটি হলো, বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে শরনার্থী হয়ে ভারতের পানে চলছেন এক পুত্র। বৃষ্টি কাঁদার মধ্যে অসুস্থ বাবাকে কাঁধে বয়ে নিয়ে পথ চলতে চলতে ক্লান্ত। এমন এক রাতের বেলায় পথে বিশ্রাম নেবার কালে পাকিস্তানী হানাদারদের হামলায় বাবাকে গাছ তলাতে রেখে পালিয়ে জীবন বাঁচান সন্তান। ফিরে এসে ওই বাবাকে নিয়ে যাবার আর সুযোগ পায়নি। ওই বৃদ্ধ বাবার পরিণতি কি হয়েছিল তা আজ অবধি জানতে পায়নি সন্তান বা স্বজনরা। কুড়িয়ানা ক্যাম্পে আটক থাকা অবস্থায় এক সুন্দরী নারীকে দেখতে পেয়েছিলেন বেসাইনখানের মুক্তিযোদ্ধ নাসিরউদ্দিন মোল্লা। পাশের রুমে দেখেছিলেন আলুথালু বেশে অর্ধ উন্মাদ অবস্থায় ওই নারীকে। পাশবিক নির্যাতনে তার ওই অবস্থা বলে জানতে পেয়েছিলেন। আর তাদের এলাকার অনিন্দ্য সুন্দরী ধীবর কন্যাকে পাকিস্তানী সেনারা ধর্ষণ করলে সম্মান রক্ষার্থে সেই যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল আর ফেরেনি। নাসিরউদ্দিন আরো জানান, ১৯৭১ সালের ২১ জুন ভোর রাতে তাদের গ্রামে অভিযান চালায় পাকিস্তানী সেনারা। ২৪ জনকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছিল। এই হত্যাকান্ডে তাদের দলনেতা ঢাকা কলেজের ছাত্রইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত ভিপি মানিক মোল্লাও ছিলেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করেছেন আর গ্রামটির নাম রেখেছেন মানিক নগর।

ওই বাড়ির জালাল উদ্দিন মোল্লার বর্ণনায় ফুটে ওঠে আরেক অমানবিক ঘটনা। হত্যাকান্ডের দিন তখন দুটা পেড়িয়েছে। নিহত ২৪ জনের লাশ ফেলে রেখে আহত ৬০ থেকে ৬৫ জনকে নিয়ে রওয়ানা হয় কুড়িয়ানা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। নেয়ার পথেই ঘটে হৃদয়ে আমৃত্যু ক্ষত সৃষ্টি করে যাওয়া দুর্ঘটনাটি। কয়েক’শ নারী আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানসিংহপুর গ্রামের পাটখেতে। হায় আমাদের চোখের সামনেই অর্ধশত নারীর সম্ভ্রহানি ঘটায়। মা, মেয়ে কেউ রেহাই পায়নি। ছোটাছুটি, কান্নাকাটি। যে মা পেড়েছেন তো দৌড়ে পালিয়েছেন। কেউবা অস্ত্রের ভয়ে জীবন বাঁচাতে গিয়ে সব হারিয়েছেন। এদৃশ্য কল্পনায় এলে সাথে ঘৃনা জাগে মানুষ কিভাবে এমন পশু হতে পারে। মায়ের গর্ভে জন্মে ও তাঁর বুকের দুধ পান করে আর আদর, স্নেহ পেয়ে বেড়ে ওঠা কেউ নারীর প্রতি অমন বিভৎস উল্লাস তা আবার প্রকাশ্যে করতে পারে তা বোধগম্যের বাইরে। আমরা বন্দি অবস্থায় ছিলাম বলে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম। তবে সেদিনের ঘটনায় নির্যাতিত কোন নারীর নাম পরিচয় আমরা আজ পর্যন্ত কারো কাছে প্রকাশ করিনি।

আরেক ঘটনায় ১৯৭১ সালে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র নির্মল হাওলাদার বলেন, আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে কয়েক হাজার লোক যাদের সাথে শরশিনা মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিল, তারা ডুমুরিয়া খালে পশ্চিম পাড়ে আসে। খাজুরা থেকে কাপড়কাঠি পর্যন্ত ৪কি.মি. ব্যাপী পেয়ারা বাগান একদিনেই কেটে ফেলে। পর পর ৩দিন এসেছিল দল বেঁধে পেয়ারা বাগান কাটতে। এসময় পেয়ারা বাগানে আশ্রয় নেয়া নারীদের পেলেই সুযোগ বুঝে নির্যাতন করা হতো। হত্যা করা হয় শত শত লোক, যাদের মরদেহ ডুমুরিয়ার খালে ভাসতে দেখেছেন। মিলিটারীর ভয়ে তারা সাঁকো ফেলে দেয়ায় সন্ধ্যার পর খাল সাঁতরে বাড়ি যাবার সময় লাশের সারির ওপরে ওঠে পড়েন একদিন। ভয়ে পিলে চমকানো অবস্থা। একত্রে বাঁধা আটটি লাশ বাঁশের খুটিতে আটকে ছিল। এমনিতেই জীবন চালানো দায়, তার ওপরে মাথাগোঁজার ঠাঁই গোলপাতার ঘরখানিতে আগুন দেয়া হলে পরিবার সমেত বেড়িয়ে পড়েন ভারতে যাবার জন্য। সেখানে গিয়ে শরনার্থী ক্যাম্পে ভারত সকারের রেশন পেয়ে জীবনে বাঁচেন তারা।

কলসকাঠী হত্যাকান্ড ঘটে বাংলা ৩০ বৈশাখ, ১৪ মে’১৯৭১। দিনটি ছিল শুক্রবার। সকাল ৮ টা হবে বৈকি। এর আগের দিন বলতে বৃহস্পতিবার কুখ্যাত মুসলিমলীগ সমর্থক প্রিন্সিপ্যাল ইসাহাকের চ্যালা-চামুন্ডা, বেবাজ গ্রামের বক্স পাড়ার লতিফ বক্স, কালু বক্স, বাগদিয়ার বারেক মোল্লা, মধু তালুকদাররা কলসকাঠীর হিন্দু অধ্যুষিত পাল পাড়া, সাহা পাড়া, কর্মকার পাড়ায় বলে বেড়ায়- রোজ রোজ পালিয়ে থেকে কি লাভ? মিলিটারী যদি আসে তো, প্রথমে বাজারে আসবে। গুলির শব্দ বা পুল পেড়িয়ে আসার আগেই খবর পৌঁছে গেলে, তখন না হয় বাড়ির পেছনের জঙ্গলে গিয়ে পালাতে পারবে অনায়াসে। এর আগে প্রতিদিন পাড়ার হিন্দুরা ভোর রাতে উঠে সন্তান,স্বজনদের নিয়ে দূর গ্রাম ডাপরকাঠী, বাগদিয়ার মুসলিম এলাকায় পালিয়ে থাকতেন। আবার সন্ধ্যে হলে তবেই ফিরতেন। কাজ নেই, কর্ম নেই; আয় রোজগার নেই। মরিচ ভাত খেয়ে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিয়েই দিন কেটেছে তখন। আউলিয়াপুরের গোলাম মোস্তফা জানালেন, ১৪ মে সকালে তুলাতলী নদী পথে সাহেবগঞ্জ লঞ্চঘাট পেড়িয়ে ৩ খানা গানবোট, কলসকাঠীর পাড়ে বলতে পশ্চিম সীমানায় নোঙ্গর করে। আর পান্ডব নদী হয়ে কলসকাঠীর পূব সীমানা আঙ্গারীয়া নামক স্থানে ভিড়ে ২টি গান বোট। তার বর্ণনা মতে দু’শতাধিক পাক সেনা অংশ নিয়েছিল কলসকাঠীর অবর্ণনীয় হত্যাকান্ডে। আবদুস ছালাম মাষ্টার তখন শিক্ষকতা করতেন কলসকাঠীর বরদাকান্ত-মুক্তাকেশী (বিএম) একাডেমিতে। তিনি বলেন, পাক গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা ছিল হিন্দুরাই পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য যুদ্ধ করছেন। তাই পাকিস্তানী সেনারা মফস্বলে হিন্দুদের হত্যা ও মুসলমানদের রেহাই দিয়েছে শেল্টার পাওয়া জন্য। এই হিসেব অনুযায়ী কলসকাঠীর হত্যাকান্ডে কেবল হিন্দুদের মেরেছে। মুসলমান মারা যায়নি একজনও। আগুন লাগিয়েছে হিন্দু পাড়াতে। প্রথমে এসেই হত্যা করে খিরোদ চন্দকে। তিনি পাক সেনা দেখে খেই হারিয়ে লাফিয়ে ওঠে চিৎকার করে, বর্বরদের আগমনের খবর জানান দিচ্ছিলেন এলাকাবাসীকে। অমনি সময়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা। এরপর একযোগে তুলাতলী নদীর খেয়াঘাটে, জমিদার বাড়ির সম্মুখে বর্তমানে যেখানে করা হয়েছে শহীদের উদ্দেশ্য স্মৃতি ফলক সেখানে এবং বাজারের খালের পাড়, এই তিন স্থানে পাকসেনারা চালায় মানুষ নিধন যজ্ঞ। সকাল ৮ টায় শুরু হওয়া হত্যাকান্ড চলে বিকেল ৫টা অবধি। তখন পাকসেনারা কলসকাঠী ছেড়ে বরিশালের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। এই হত্যাকান্ডে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন অমূল্য চন্দ্র পাল। তার বর্ণনায়, সামনে থেকে আক্রমণ চালালে পিছন বলতে পূব দিক দিয়ে, নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারবেন। এই হিসেব করে অন্যদের ন্যায় বড়ির পিছনের জঙ্গলে, পরিবার সমেত পালিয়ে ছিলেন অমূল্য পাল। দেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় স্কুলের উত্তর পাশের ব্রীজ পেড়িয়ে পাক সেনারা দু’ভাগে ভাগ হয়। সামনে পিছনে উভয় দিক থেকে তাদেরকে ঘিরে ফেলে। পালবার কোন পথ ছিলনা। তাদের পাল পাড়া থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জনকে ধরে নিয়ে আসে। নারী ও শিশুদের রাখা হয় বিএম একাডেমী ভবনের একটি রুমে। আর পুরুষদের রাখা হয় চাউলের হাটখোলায়। অমূল্য পাল সমেত ১১ জন বসে আছেন। রাজ্যের চিন্তা এসে জড়ো হয় যখন তার চোখের সামনে থেকে একজন একজন করে উঠায়ে নিয়ে, খালের পাড়ে গুলি করার সময়ে। কি ভাবে মারছেন, কে কেমন করে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে খালে পড়ে যাচ্ছেন তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। হাত পা অবশ হয়ে আসছিল। মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। অমনি সময়ে খুব করে মনে পড়ে বৃদ্ধা মায়ের কথা। যে মা তাকে মাত্র ৫ বছর বয়সে, বাবা দারিকানাথ পাল মারা যাবার পর থেকে মানুষ করেছেন। মনে পড়েছে শিশু সন্তানদের কথা, স্ত্রীর কথা। অবশেষে একের পর এক মৃত্যু দেখে সবকিছু ভুলে গিয়ে ঈশ্বরের কথাই স্মরণ করতে থাকলেন। এমনি করে সর্বশেষ হত্যার সিরিয়ালে অমূল্য পালের আগের জন ছিলেন, দশাসই এক তরুণ নাম বাবুল সাহা। খালে নামার আগেই পাক সেনারা গুলি করলে, ধর খালের পানে আর দেহ পড়ে থাকে পাড়ে। অমূল্য পালকে ইঙ্গিত করে বাবুল সাহার লাশ খালে ফেলে দিতে। খালে নেমে দুই বাহু ধরে নামানোর চেষ্টাও চালিয়েছিলেন তিনি। আগাম সতর্ক থাকায় গুলি ছোড়া মাত্রই শরীর বাঁকায়ে এক ডুবে খালের ওপাড়ে গিয়ে ওঠেন। মাথা তুলতে দেখা মাত্রই ফের গুলি চালায়। লাগে বাম হাতের বাহুতে। এরপর ফের ডুব দিয়ে খাদ্যগুদামের জেটির নীচে লুকায়। এমনি করে অনেকটা দিন যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থাকলে তার হাতখানি আজীবনের জন্য কার্যক্ষমতা হারিয়েছিল। আওয়ামীলীগ সরকার যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন বটে, তবে আজো বহাল তবিয়তে আছে কলসকাঠী হত্যাকান্ডের মূলহোতা প্রিন্সিপাল ইসাহাক ও তার দোসররা।

স্বাধীন দেশেও যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন আমরা দেখেছি। সময়ের প্রয়োজনে নিজেদের বদলে ক্ষমতাসীনদের দলে ভিড়ে সুবিধা নেয়ার ঘটনা আজো বিদ্যমান। কিন্তু যারা স্বজন হারিয়েছেন, নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন বা সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের মনোবেদনা কখনো উপলব্ধি করেছেন কি? তাদের বুকে বয়ে চলা বেদনা একটুকুন প্রশমনের জন্য আজো কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সরকারের একান্ত কর্তব্য। এমন দাবী এই মার্চে মুক্তিযোদ্ধা ও বেদনা বয়ে চলা স্বজনদের।

বিধান সরকার, একাত্তর টেলিভিশন বরিশাল ব্যুরো প্রধান