• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

মাসে দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে তারেককে খুশি রাখতো সাহেদ!

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২০  

করোনাভাইরাস শনাক্ত করার টেস্টের ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগে বন্ধ করা হয়েছে রাজধানীর বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল। হাসপাতালটির মালিক মোহাম্মদ সাহেদ বিভিন্ন সময়ে নিজেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিলেও তার উঠে আসা মূলত বিএনপির শাসনামলে হাওয়া ভবন থেকে।

তথ্যসূত্র বলছে, বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের খুবই আস্থাভাজন ছিলেন প্রতারক সাহেদ। বিএনপির শাসনামলে হাওয়া ভবনে যাতায়াত করার কারণে তারেক-মামুনের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। পরে তারেক রহমান বিভিন্ন মামলায় ফেরারি আসামি হয়ে দেশত্যাগ করলে সাহেদ প্রতি মাসে ‘গুরু দক্ষিণা’ স্বরূপ তাকে দেড় কোটি করে টাকা পাঠিয়ে আসছেন। আর এদিকে বিষয়টিকে ধামা চাপা দিতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে ফটোসেশন করে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, গিরগিটির থেকেও ভয়ানক রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদ।
কারণ, তার উত্থান হাওয়া ভবনে হলেও তিনি গায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লেবাস লাগিয়ে দিনের পর দিন অনিয়ম চালিয়ে গেছেন। আর মানুষ ঠকানো সেসব অর্থের একটা নির্দিষ্ট অংশ বিএনপির সাংগঠনিক কাজে ব্যবহারে অর্থায়ন করেছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, সেই টাকা পুরোটা চলে যায় সোজা তারেক রহমানের কাছে। অর্থের অংকে সেটা ১ থেকে দেড় কোটি টাকা।

সূত্রটি আরো জানায়, তারেক রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন সাহেদ। যার প্রেক্ষিতে তিনি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ড্যাব এর সভাপতি ডা. জাহিদের সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখনই তিনি পরিকল্পনা করেন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার। সেই সূত্র ধরে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন হাওয়া ভবনে, পরিচিত হয়ে ওঠেন সবার কাছে। মূলত সেখান থেকেই তার উত্থান ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি আওয়ামীপন্থী কিছু মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং তাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মহলেও তিনি নিজেকে আসীন করেন।

এরপর দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার নাম করে টক শো করে বনে যান ‘মুখোশধারী সুশীল’। মুখে মুখে তিনি সরকারের গুণকীর্তন করলেও অন্তর তার সদা বিএনপির জন্যই কাঁদতো বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, দলের সঙ্গে সাহেদের প্রকাশ্য যোগাযোগ না থাকলেও কোনো কোনো নেতার সঙ্গে ওঠবস ছিল। এমনকি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন সুবিধাভোগী ও বিতর্কিত লোকজনের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের একজন কর্মী বলেন, গত বছরের জুনে তিনি উত্তরায় রিজেন্ট কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় সাহেদ তার সামনেই স্কাইপেতে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তার সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনেরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বিএনপির পক্ষ থেকেই সাহেদকে কৌশলে এই অনুপ্রেবশ করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো, সাহেদের মতো মুখোশধারীরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলে প্রবেশই করে নিজেদের রাজনৈতিক এজেণ্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। তাই সরকারসহ দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।