• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

মাদারীপুরে শেষ দিনে উৎসব মুখোর নির্বাচনী প্রচারণা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

 

মাদারীপুরে শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মাদারীপুর তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগের উৎসব মুখোর প্রচারণা চোখে পড়ে। তবে, মাদারীপুর-১ ও ৩ আসনে বিএনপি প্রচারণা কম-বেশি থাকলেও মাঠে প্রচারণা নেই মাদারীপুর-২ আসনের বিএপির প্রার্থী। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা মার্কার কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি।

মাদারীপুর-১ আসনে প্রচারণা
আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূর-ই আলম চৌধুরী শেষ দিনে কোন প্রচারণা মাঠে নামেনি। তবে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রচারণা করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা যুবলীগের আয়োজনে দত্তপাড়া এলাকা থেকে একটি নৌকার মিছিল বেড় করা হয়। এতে অংশ নেয় অন্তত দুই হাজার মানুষ। মিছিলটি শিবচর উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদা ভাবে নৌকার প্রচারণায় নামে। 
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম বলেন, ‘১৯টা ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আজ আমাদের প্রচারণায় অংশ নেয় দুই শতাধিক টিম। আমাদের প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় আজ (বৃহস্পতিবার) ছিলেন না। তিনি রাজনৈতিক কাজে খুলনা ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রচারণার শেষ দিনে সব এলাকা ঘুরে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছে। আমরা শতভাগ আশাবাদ যে আমাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে।’ 
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ধানের শীর্ষের পক্ষে দলবেধে কোন নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা করতে দেখা যায়নি। তবে প্রার্থী নিজে তিনটি মোটরসাইকেল যোগে নির্বাচনী এলাকা কাঁঠালবাড়ি ও দত্তপাড়া ইউনিয়নের গণসংযোগ করেন। 
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাদারীপুর-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতদিন কম-বেশি প্রচারণা নিয়ে তো ভালোই ছিলাম। এখন মহা বিপদের মধ্যে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার এজেন্ট ও কর্মীদের ধমরাচ্ছে। এভাবে কি নির্বাচন করা যায়? তাই প্রচারণার শেষ সময় এসেও আমরা তেমন প্রচারণা করতে পারি নাই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা আমরা চরম বাধার সম্মূখিন হচ্ছি।’

মাদারীপুর-২ আসনে প্রচারণা
বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার কুনিয়ায় জনসভা করেন মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এরপর তিনি পেয়ারপুর ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন, বিকেলে ৪টার দিকে তিনি রাজৈর পৌর ঈদগা মাঠে জনসভায় অংশ নেয় করেন এবং সন্ধ্যায় তিনি সদর উপজেলার পুরান বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি সরকারের নানা উন্নয়ন দিক তুলে ধরেন। একই সাথে তৃনমুল মানুষের কাছে ৩০ ডিসেম্বর বিপুল ভোটে নৌকা মার্কা বিজয় করতে সকলের মাঝে ভোট প্রার্থণা করেন। অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলার আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুনিয়া এলাকায় জনসভা অনুষ্ঠানে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনী খেলার মাঠে পা ভেঙ্গে গেছে, তাই লেভেল ফিল্ড নেই বলে তারা দাবী করছে। তাদের মাঠে খেলার শক্তি নেই, বিএনপির বড় নেতা খালেদা জিয়া তার দুর্নীতির জন্য আজ জেলে বসে দিন কাটাচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে দেশের জনগন নৌকার পক্ষে রায় দিবে।’
মাদারীপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী প্রচারণার শেষ দিনেও তাকে মাঠে দেখা যায়নি। নির্বাচনী এলাকার বিএনপির কোন নেতাকর্মীকেও মাঠে নেই।
এ সম্পর্কে বিএনপির প্রার্থী মিল্টন বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেতাকর্মীদের জানমান রক্ষায় এখন ব্যস্ত। তাদের আমি প্রচারণা নামতে না করেছি। কারণ তারা মাঠে নামলে তাদের উপর হামলা হয়। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। তাই এই আত্মাচার থেকে রক্ষা পেতে আমরা প্রচারণা আগেও করতে পারিনি, এখনও করতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে সবই কমবেশি বলেছি। এখন আর আমাদের আর কিছুই বলার নাই।’

মাদারীপুর-৩ আসনে প্রচারণা
মাদারীপুর-১ ও ২ আসনের বিএনপির তেমন প্রচারণা না থাকলেও মাদারীপুর-৩ আসনের চিত্রটা একটু ভিন্ন। প্রচারণার শেষ দিনে বিএনপির প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইজনই নিবাচনী এলাকার মাঠ ঘাট চষে বেড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে রমজানপুর এলাকা মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সোবাহান গোলাপ জনসভা করেন। এরপর তিনি কালকিনি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়। বিকেলে পৌরসভার মাঠে এক জনসভায় অংশ নেয় গোলাপ। এছাড়াও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করে। বিকেলে প্রার্থী আওয়ামী লীগের আয়োজিত কালনিকি পৌরসভা মাঠে জনসভায় অংশ নেয়। 
জনসভায় মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, আমি আপনাদের সন্ত্রান। আপনাদের এলাকাই বড় হয়েছি। অনেক দাবি আছে আপনাদের। দেশে উন্নয়ন যাত্রা ধরে রাখতে আমি শুধু আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আমি কথা দিচ্ছি যদি আমি নির্বাচিত হতে পরি আপনাদের মনের সকল আশা পূরণ করবো।
তিনি ভোটারদের উদ্দেশে আরো বলেন, বিএনপি-জামাতের অপশক্তিকে বিনাশ করতে আপনারা নৌকায় ভোট দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা দেশ গড়বো। এখানে কোন অপশক্তি আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না।
এদিকে কোন মিছিল ও জনসভা বা পথসভায় অংশ না নিতে পারলেও বিএনপির কর্মী সমর্থকেরা প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির প্রার্থী আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার শশিকর ও নবগ্রাম এলাকায় গণসংযোগ করেন। 
বিএনপির প্রার্থী আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার বলেন, ‘নানা সমস্যার মধ্যেও আমরাধানের শীষ নিয়ে আমরা প্রচারণা শেষ করেছি। আক্ষেপ একটাই বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে একটাও মিছিল ও জনসভা করতে পারিনি। যখনি করতে গেছি বাধা এসেছে। তবুও থেমে থাকিনি। নানা কৌশলে আমাদের নেতাকর্মীরা ধাণের শিষের পক্ষে প্রচারণা করেছে। আশা করছি সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা জিতব।’