• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

মাদারীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের বসতঘর ‘বীর নিবাস’ফাটল

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮  

প্রতিনিধি, মাদারীপুরঃ
মাদারীপুরে ৩১ জন গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বীর নিবাস’ নামের বসতঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ৩১টি ভবনের হস্তান্তরের কয়েক মাসের মধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারগুলো আতঙ্কে বসবাস করছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি’র সূত্র জানায়, প্রতিটি ভবনের জন্য দশ লাখ টাকার মূল্য নির্ধারিত হয়। ঠিকাদাররা দরপত্র পেতে কোনটিতে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য ছাড় দিয়ে নির্মাণ করায় কোন কোনটিতে খরচ হয়েছে ৭ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ৪ কক্ষের একটি ১ তলা ভবন, পাশে একটি টয়লেট, গবাদিপশু ও হাস-মুরগি রাখার দুটি ঘর এবং একটি নলকূপ। জেলায় ইতিমধ্যে নির্মিত ৩১টি বীর নিবাস ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
রোববার সরেজমিনে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ঝিকরহাটি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ও কেন্দুয়া ইউনিয়নের কাউয়াকুড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আক্কেল আলী আকনের ‘বীর নিবাস’ গিয়ে দেখা গেল বীর নিবাস দুটির ইট, বালু, রড আর সিমেন্ট ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে।

ভবনের রঙ খসে খসে পড়ছে। পলেস্তারে ফটল দেখা দিয়েছে। নির্মানকাজে নিম্ন মানের কাঠ ব্যবহার করায় দরজা-জানালা বাঁকা হয়ে গেছে। রাতে জানালা লাগানো সম্ভব হয় না। নষ্ট হয়ে গেছে নলকূপটিও। মুক্তিযোদ্ধা আক্কেল ও কাশেম ছাড়াও একই চিত্র দেখা গেল আরো ১০ টি বীর নিবাসে গিয়ে।
মুক্তিযোদ্ধা আক্কেল আলী বলেন, ‘ঘরের দরজা, জানালা লাগানো যাচ্ছে না।

রান্না ঘরের পলেস্তার খসে খসে পড়ছে। রঙ উঠে গেছে। যখন ঘর উঠানো হয় তখন ঠিকাদাররা ঠিক মত কাজ করে নাই। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার উপজেলা এলজিইডি’র ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে গিয়েছি। তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগও দিয়েছি। তারা বলেছিল পরিদর্শনে গিয়ে ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এখন আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছি।’
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্মাণের সময় আমি ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারকে নিম্ন মানের মালামাল ব্যবহারে নিষেধ করি এবং এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাই। তখন তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। এখন ঘরের প্রায় দরজাই আটকানো যায় না। রাতের বেলায় জানালা কপাট আটকানা যাচ্ছে না। ভবনের দেয়ালে এমনভাবে ফাটল ধরেছে ঘরের মধ্যে থাকতে ভয় পাচ্ছি।’
মাদারীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সিনিয়র ডেপুটি কমান্ডার মো. জহাঙ্গির কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদারীপুরে ২ হাজার ৫৭৩ জন সরকারি ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাদের মধ্যে গৃহহীন ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীর নিবাস নামের বসতঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার। কিন্তু বীর নিবাসগুলোতে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করায় বেশির ভাগ ভবনই এখন ঝুকিপূর্ণ। ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি’র কর্মকর্তাদের আমরা শাস্তি দাবী জানাই।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। অনেক কিছুই আমি জানি না। তবে, প্রতিটি ভবন ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১টি বীর নিবাস মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমি আসার আগেই হস্তান্তর করা হয়েছে। বসতঘরগুলো ফাটলের বিষয় আমার কাছে এখনও কেউ আসেনি। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। যদি এমন হয় অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব।’