• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

মহামারিতেও পুরোদমে চলছে মেট্রোরেলের কাজ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২১  

মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপের মধ্যেও পুরোদমে চলছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের কাজ। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। 

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল শুরু হবে

সরেজমিনে মিরপুর-১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এবং আগারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, করোনার মধ্যেও ব্যাপক কর্মতৎপরতা চলছে। স্টেশনগুলোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল পুরো এমআরটি লাইন-৬ এর অগ্রগতি হয়েছে ৫৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সর্বশেষ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত অংশের হাউজহোল্ড সার্ভে এবং সোশ্যালও স্টাডি শেষ হয়েছে। 

 

মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ এখন মোটামুটি দৃশ্যমান - সংগৃহীত

 

ডিএমটিসিএল -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএন সিদ্দিকী জানিয়েছেন, এটি এমন একটি প্রকল্প যেটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে না। এখনও সঠিক পথেই চলছে প্রকল্পটি।

এদিকে, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মেট্রোরেলের ডিপোতে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে তৈরি হচ্ছে ৫২টি স্থাপনা। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ স্থাপনার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো কাজও ৮০ ভাগ শেষ। এছাড়া ট্রেন পরিচালনার জন্য ১৫’শ ভোল্টের বিদ্যুৎ রিসিভিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকারের ওয়ার্ক স্টেশন। এখানে ট্রেনগুলো চলাচলের পর প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তারপর ত্রুটিমুক্ত করেই ফের চলবে লাইনের ওপর। এই ওয়ার্ক স্টেশনে একসঙ্গে ২৪টি ট্রেন মেইনটেনেন্সের ব্যবস্থা থাকবে।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পিয়ারের ওপর সর্বশেষ ভায়াডাক্ট স্থাপনও শেষ হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর রেললাইন বসানোর কাজও প্রায় শেষের দিকে।

* সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্টেশনগুলোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পে মোট ১৭টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে উত্তরা সেন্টার, বিজয় সরণি ও মতিঝিল স্টেশন হবে আইকনিক স্টেশন। বাকিগুলো সাধারণ স্টেশন। জাপানের সহযোগিতায় বাস্তবায়নাধীন দেশের প্রথম মেট্রোরেলের এই রুটে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে বগি।

 

সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্টেশনগুলোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে - সংগৃহীত

 

জানা গেছে, টিকিট কাউন্টার, বিশ্রামাগার, খাবারের স্বয়ংক্রিয় দোকান, নামাজের জায়গা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট, অপারেশন ও মেইনটেনেন্স রুম, বিনা-টিকিটে বা টিকিটের অতিরিক্ত গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, উপরে ওঠার সিঁড়ি, এসকেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি), লিফটসহ নানা আয়োজন থাকছে স্টেশনগুলোতে। প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে ৪৫ সেকেন্ড।

* প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে

* উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনের সক্ষমতা থাকবে 

ট্রেনের এক একটি বগিতে ৫৪ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পিক সময়ে (অফিস যাওয়া ও আসার সময়) বসে এবং দাঁড়িয়ে মিলে মোট ২ হাজার ৩০৮ জন যেতে পারবেন এক-একটি ট্রেনে। স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার ৭৩৮ জন যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতিটি ট্রেনে নারীদের জন্য থাকবে একটি করে বিশেষ বগি। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে প্রতিটি বগির দরজার পাশে হুইল চেয়ার আটকানোর ব্যবস্থাও।

এদিকে মেট্রোরেলের ছয়টি বগির একটি চালান মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। গত ৩১ মার্চ মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর ইয়ার্ড থেকে আমদানিকৃত বগিগুলো খালাস করা হয়। জাপানের কাওয়াসাকী হ্যাভি ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড তৈরি মেট্রোরেলের বগিগুলো ডিএমটিসিএল -এর কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৮ এর আওতায় আমদানি করা হয়েছে। ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে এই প্যাকেজের আরো ১৩৮টি বগি মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি, ছাড়করণ ও পরিবহন করা হবে।

 

মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর ইয়ার্ড থেকে আমদানিকৃত বগিগুলো খালাস করা হয় - সংগৃহীত

 

ডিএমটিসিএল -এর কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৮ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবিএম আরিফুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, মেট্রোরেলের লাইন-৬ কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৮ আওতায় এর জন্য ২৪টি যাত্রীবাহী রেল কোচ আমদানি করা হবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আবহাওয়া ও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এখন থেকে প্রতিমাসে একটি করে কোচের জন্য ছয়টি বগি মোংলা বন্দরে পৌঁছাবে।

* প্রতিটি কোচে ৬টি বগি

* ৬টি বগির একটি প্যাকেজে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে

তিনি বলেন, মোংলা বন্দরে প্রথম চালানে আসা ছয়টি বগি খালাস শেষে নদী পথে ঢাকার তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত আমাদের নিজস্ব জেটিতে নেয়া হয়। সেখান থেকে উত্তরায় আমাদের প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানে নেয়া হবে।

 

গেল কয়েক বছরে সক্ষমতা বাড়ছে মোংলা বন্দরের - ফাইল ছবি

 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, গেল কয়েক বছরে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়েছে। আপনারা দেখেছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ মোংলা বন্দর দিয়ে এসেছে। আশা করি, ভবিষ্যতে সরকার মোংলা বন্দরের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল আনয়ন করবে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জুলাই থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। 

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উড়ালপথে মেট্রোরেলের দূরত্ব ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। সময় লাগবে ৩৫ মিনিট। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দূরত্ব ৮ দশমিক ১২ কিলোমিটার।