• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

দেখি বাংলার রূপ :

ভ্রমন গাইড শাপলা রাজ্য-সাতলা (ভিডিওসহ)

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮  

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলা ভূমি আমাদের এই বরিশাল। আর বরিশালের উজিরপুর উপজেলার লাল শাপলা মন্ডিত বিলগুলো যেন বিধাতা রচনা করেছেন নিজের সৃষ্টিশীলতা আর নান্দনিকতা ঢেলে। মৌসুম এলে এ এলাকার প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমি লাল শাপলা (প্রকৃত পদ্য গুলো ম্যাজেন্টা রং এর) বুকে নিয়ে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। বছর দুয়েক আগে এমনই অপরূপ লাল শাপলার ১টি ছবিতে চোখ আটকে যায় আমার। মনের মধ্যে তীব্র আকাঙ্খা জাগে জায়গাটি স্বচোখে দেখার। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় তখন সুযোগ না মিললেও আমি স্বপ্নটি দীর্ঘ দিন লালন করেছি মনের গভীরে। পরে বদলি জনিত কারণে সুযোগ হয় বরিশালে বসবাসের। ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকেই আমি জানতে চেষ্টা করি লাল শাপলা এবং সাতলা সম্পর্কে। তাছাড়া বেশ কয়েক বার ওখানের অপরূপ সৌন্দর্য্যে অবগাহন করার সুযোগ আমার হয়েছে। বরিশাল শহর থেকে ৫০ কিঃমিঃ দূরে উজিরপুর উপজেলার হারতা ও সাতলা এবং আগৈলঝাড়ার বাগধা পাশাপাশি ৩টি ইউনিয়নের সাতলা, কালবিলা, পটিবাড়ী, নয়াকান্দি, মুড়িবাড়ী প্রভাতি বিলগুলোতে ফোটে হাজারও হাজারও লাল শাপলা, সঙ্গে অল্প কিছু সাদা ও বেগুনী শাপলা এবং অন্যান্য জলজ ফুল। অপূর্ব সুন্দর উজ্জ্বল রং এবং সংখ্যায় অগনিত হওয়ার জন্যেই অসম্ভব ভাললাগে তখন এখানের বিলগুলো। সবুজ বড়বড় পাতার ফাঁকে গুচ্ছে গুচ্ছে মাথা উচুঁকরে থাকা লক্ষ-হাজার লাল শাপলা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। শহরের কোলাহল, দূষণ আর জনারণ্য ফেলে একটুখানি স্বস্তি নিঃশ্বাস নিতে একা বা স্ববান্ধব ঘুরে আসতে পারেন অনন্য সন্দুর এই এলাকাটি। কখন যাবেন বর্ষাকালে যখন বিলগুলো ভরে ওঠে পানিতে তখন ফোটা শুরু করে শাপলা। আবার হেমন্তে যখন বিল শুকিয়ে যায় শেষ হয় শাপলার মৌসুম। সে হিসাবে বলা যায় জুন/জুলাই - নভেম্বর পর্যন্ত- ফোটে শাপলা। তবে শরৎ এবং হেমন্ত এই ২ ঋতু হচ্ছে চমৎকার সময়। তাই ঋতু সৌন্দর্য দেখতে চাইলে যেতে হবে আগষ্ট-নভেম্বরের প্রথমার্ধের মধ্যে। শাপলা রাতের ফুল। শেষ বিকাল থেকে তারা ফোঁটাশুর করে। আবার সকালে দিনের আলো প্রখর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বুজতে শুর করে। তাই শাপলা দেখতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় ভোর বেলা। সকাল ৯টার পর ফুল গুলো বুজতে শুর করে। ১০.৩০/১১.০০ টা নাগাদ বুজেযায়। তাই শাপলার সৌন্দর্য্য পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে পৌঁছাতে হবে ৬.৩০/৭.০০ টার মধ্যে। কিভাবে যাবেন বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল ৬টা থেকে আধা ঘন্টা পরপর ছাড়ে হারতা/ বাগধার বাস। পৌঁছাতে সময়লাগে ঘন্টা দু`য়েক।সড়ক বা নৌপথে ঢাকা থেকে আসতে পারেন বরিশাল। সকাল ৬টা - রাত ১০ টা পর্যন্ত বেশ কিছু পরিবহন (এসি, নন এসি) যেমন- গ্রিনলাইন, সাকুরা, ঈগল, হানিফ প্রভৃতির বাস ছাড়ে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে। বরিশাল পৌঁছাতে সময় লাগে ৭/৮ ঘন্টা, ভাড়া (এসি৭০০-৮০০ টাকা এবং ননএসি ৫০০ টাকা) পছন্দ মত সময়ে বাসের ও নাহয়ে আসতে পারেন বরিশালে। এছাড়া ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে হাইস্পিড লঞ্চ গ্রীণলাইন ওয়াটার ওয়েজ সকাল ৮টায় ছেড়ে বরিশাল পৌঁছায় ১.৩০/২.০০ টার দিকে। ভাড়া ৭০০-১০০০ টাকা। তাছাড়াও বেশ কিছু বিলাস বহুল লঞ্চ যেমন- সুন্দরবন, সুরভী, কীর্তনখোলা, পারাবত, এ্যাডভেঞ্চার প্রভাতি ঢাকা থেকে রাত ৮-৯ টার মধ্যে ছেড়ে আসে বরিশালের উদ্দেশ্যে এবং পৌঁছে সকাল ৫.০০/৫.৩০ টার দিকে। ভাড়া ডেক ১৫০-২০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০-৯০০ টাকা থেকে শুর করে ভিআইপি কেবিন ৬০০০-৭০০০ টাকা পর্যন্ত । বিভিন্ন শ্রেনীতে আপনি এই চমৎকার লঞ্চ ভ্রমনটির অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। আরামদায়ক লঞ্চ ভ্রমন শেষে ভোর-ভোর পৌঁছে আরাম সে সকালের নাস্তা সেরে রিজার্ভ মাহেন্দ্র/ অটো নিয়ে রওনা হতে পারেন সাতলার উদ্দেশ্যে। ভাড়া ২০০০ টাকার আশেপাশে। অথবা লঞ্চঘাট থেকে নথুল্লাবাদ এসে বাসে করেও যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হয়ত সময় ঘন্টা খানেক বেশী লাগবে। কোথায় থাকবেন এখনোপর্যন্ত – সাতলায় রাতে থাকার মত তেমন কোন স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। তাই থাকতে হবে বরিশালের আবাসিক হোটেল গুলোতে। সামর্থ্য ভেদে ৫০০-৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪,০০০ টাকার মধ্যে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। হোটেল গ্রান্ড পার্ক, হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল এ্যাথেনা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল এরিনা ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি হোটেলগুলোর যে কোনটাতেই থাকতে পারবেন। কিভাবে ঘুরবেন সাতলা পৌঁছেবিলে ঘোরার জন্যে নৌকা ভাড়া করতে হবে। ইদানিং লাল শাপলার সৌন্দর্য্য লোভী পর্যটকেরা ছুটে যান সাতলায়। স্থানীয় ভাবেই নৌকা ভাড়া পাওয়া যাবে। ভাড়া ঘন্টা ভিত্তিক ২০০-২৫০ টাকা। হাজার হাজার লাল শাপলায় ভরা বিলগুলো ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলার জন্যে আদর্শ জায়গা। ভাল ফটোগ্রাফীর জন্যে অতিরিক্ত ১টি নৌকা ভাড়া করতে পারেন। আর ২০০/১০০ টাকা বেশী পেমেন্টকরে নৌকা গুলো সুন্দর কওে সাজিয়েও নিতে পারেন। অপরিসীম সৌন্দর্য্যরে আধার, নানা জায়গা ছড়িয়ে আছে আমাদের আশে পাশেই। সামান্য সময় আর অল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে সেসব জায়গার নির্মল সৌন্দর্য্য আমরা উপভোগ কওে আসতে পারি সহজেই। একটু খানি সদিচ্ছা থাকলে লাল শাপলার এলাকা সাতলাও এর আশপাশও আমরা ঘুওে আসতে পারি অনায়াসেই। কৃত্রিম তাবর্জিত এখানের অনন্য সাধারণ প্রকৃতি যে কারো মনকেই নিজের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দেবে নিঃসন্দেহে। সাতলার এই রঙ্গের মেলায় তাই আমন্ত্রণ- সবাইকে। ঢাকা হতে বরিশাল আসার যানবাহনের তালিকা ঃ লঞ্চসার্ভিস ক্রমিক লঞ্চের নাম ঢাকা হতে ছাড়ার স্থান ভাড়া মোবাইল নং/ টিএন্ডটি ডেক,সিঙ্গেল কেবিন,ডাবল কেবিন,সেমিভিআইপি,ভিআইপি ১। সুন্দরবন লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ১৫০ এসি-৯০০ ননএসি-৮০০ এসি-২০০০ ননএসি-১৮০০ ৩৫০০-৪০০০ ৬০০০-৭০০০ ০১৭৬৫-৭৬৬৬৬৬ ২। কীর্তনখোলা সদরঘাট টার্মিনাল ১৫০ এসি-৯০০ ননএসি-৮০০, এসি-২০০০ ননএসি-১৮০০, ৩৫০০-৪০০০ ৬০০০-৭০০০ ০১৭৭১-৪৯৭৪৩২ ৩। সুরভী সদরঘাট টার্মিনাল ১৫০ এসি-৯০০ ননএসি-৮০০ এসি-২০০০ ননএসি-১৮০০ ৩৫০০-৪০০০ ৬০০০-৭০০০ ০১৭১২৭৭২৭৮৬ ০৪৩১-৬৪৩৮৮ ৪। এ্যাডভেঞ্চার সদরঘাট টার্মিনাল ১৫০ এসি-৯০০ ননএসি-৮০০ এসি-২০০০ ননএসি-১৮০০ ৩৫০০-৪০০০ ৬০০০-৭০০০ ৫। পারাবত সদরঘাট টার্মিনাল ১৫০ এসি-৯০০ ননএসি-৮০০ এসি-২০০০ ননএসি-১৮০০ ৩৫০০-৪০০০ ৬০০০-৭০০০ ০১৭৭৭৮৮৩৫৮৪ ৬। গ্রীন লাইন ওয়াটারওয়েজ সদরঘাট টার্মিনাল - নীচতলা (এসি)-৭০০ উপরতলা (এসি)-১০০০ - - ০১৭৩০০৬০০০৪ ০১৭৩০০৬০০৭১-৭৩, ৭৬-৭৭ বাস সার্ভিস ক্রমিক যানবাহনের নাম ঢাকা হতে ছাড়ার স্থান ভাড়া মোবাইল নং/ টিএন্ডটি এসি ননএসি ১। গ্রীন লাইন বাস গাবতলী বাস টার্মিনাল ৮০০.০০ - ঢাকা- বরিশাল- ২। সাকুরা পরিবহন টেকনিক্যাল/গাবতলী টার্মিনাল ৭০০.০০ ৫০০.০০ বুকিং-০১৮৪৪১৬৭৬৫০ কাউন্টার- ০১৮৭৮৩৩০১১২ ০২-৯০২১১৮৪ ৩। ঈগল পরিবহন গাবতলী বাস টার্মিনাল - ৫০০.০০ ঢাকা-০১৭১-৬৪৩৫৭৪৪ বরিশাল-০১৭১২-৫৬২৭৬২ ৪। হানিফ পরিবহন গাবতলী বাস টার্মিনাল - ৫০০.০০ ঢাকা-০১৭১৭-৩৭৪২৫০ বরিশাল-০১৭১৩-৪৫০৭৬০ বরিশালের হোটেল এর তালিকা ক্রমিক হোটেলের ভাড়া মোবাইলনং/ টিএন্ডটি সিঙ্গেল, ননএসি, সিঙ্গেল এসি,ডাবল ননএসি, ডাবলএসি, ১। হোটেল গ্রান্ড পার্ক - সিঙ্গেল-১০১২০, ননএসি- ১১৩৮৫/-১৩৯১৫/- মোবাইলঃ- ০১৭৭৭৭৩৫১৭১/০৪৩১-৭১৫০৮ ২। হোটেল এ্যাথেনা ইন্টারন্যাশনাল- ৬০০, ১২০০, ১০০০, ১২০০, ১৫০০,১৮০০, মোবাইলঃ- ০১৭১২-২৬১৬৩৩ ৩। হোটেল এরিনা ইন্টারন্যাশনাল- ১০০০, ২০০০, ২৫০০, ৩০০০, ৪০০০, মোবাইলঃ- ০১৭২৪-৪৪৪৪৮৮ ৪। হোটেল ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল -৬০০, ১০০০, ৭০০, ১২০০, ১৫০০, মোবাইল ঃ-০১৭৪৭-৯৯৩৭৩৩/০৪৩১-৬২৯৪১ ৫। হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল -৫০০, ১০০০, ২০০০, ২৫০০, মোবাইলঃ- ০১৭৯২১৫১১৯১