• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

ভুয়া এনআইডি বানিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, ইসির ৪৪ জন বরখাস্ত

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২১  

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট মালিক কিংবা ক্রেতা সেজে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিয়ে প্রতারণা করতো একটি চক্রটি। মঙ্গলবার (২ মার্চ) খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মতিঝিল গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে তাদের এই জালিয়াতির কাজে সহায়তা করতেন নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন নিম্ন শ্রেণির কর্মকর্তা। জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৪ জনকে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- আল-আমিন ওরফে জমিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুৎ, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহজাহান। তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। যার নম্বর- ঢাকা-মেট্রো-গ-২০-৩৭৯৭। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, ভুয়া এনআইডি, টিনসহ অন্যান্য তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় মামলা হয়। এ মামলা তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ।

jagonews24

তদন্তে ডিবি পুলিশ জানতে পারে, প্রতারক চক্রটি ভুয়া এনআইডি, ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ভুয়া টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাট লোন নিয়ে টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে বিপ্লব নামে একজনকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানায়, ভুয়া এনআইডি তৈরির সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের নিচের শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারী। ২৮ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে গ্রেফতারের পর তিনি ১ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ প্রতারক চক্রের মূলহোতা আল-আমিনকে গ্রেফতার করে। আল-আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন লোকের সন্ধান পাওয়া যায়।

তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎকে গ্রেফতার করা হয়। বিদ্যুৎ ও আল-আমিন তাদের অন্য সহযোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী কখনো ক্রেতা আবার কখনো বিক্রেতা, কখনো জমির মালিক কখনো ফ্ল্যাটের মালিক সাজিয়ে প্রতারণা করেন। আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মিডলম্যান হিসেবে কাজ করেন। রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করেন।

প্রথমে প্রতারকরা ব্যাংকে যায়। তারপর তারা ফ্ল্যাট কেনার জন্য লোন চায় ব্যাংকের কাছে। তখন ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ফ্ল্যাট কিনবেন সেখানে ব্যাংক ভিজিট করবে। তখন প্রতারকরা ভিজিটের জন্য ব্যাংকারসহ ফ্ল্যাট দেখতে যাবে। প্রতারকরা আগে থেকেই সাইনবোর্ড দেখে কোন ফ্ল্যাট বিক্রি হবে তাদের ঠিক করে রাখে। তারপর ব্যাংকের লোকসহ ফ্ল্যাট ভিজিটে গেলে ব্যাংক সবকিছু ঠিক দেখতে পায়।

পরে প্রতারক দল ফ্ল্যাট মালিকের কাছ থেকে এনআইডি ও ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে আসে। সরল বিশ্বাসে ফ্ল্যাট মালিক এনআইডি ও ফ্ল্যাটের কাগজপত্র দিয়ে দেয়। তারপর প্রতারকরা ফ্ল্যাট মালিকের এনআইডি হুবহু নকল করে শুধু ছবি পরিবর্তন করে এনআইডি তৈরি করে। যে এনআইডি সার্ভারে বা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখতে পায়। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এনআইডি সার্ভারে সার্চ দিলে তা সঠিক দেখতে পান।

এরপর ব্যাংক প্রতারকদের অফিস ভিজিটে যায়। তখন প্রতারকরা অফিস ভাড়া নেয় এক-দুই মাসের জন্য। ব্যাংকের লোক প্রতারকদের অফিস ভিজিটে গিয়ে অফিস গোছানো এবং সব ঠিক আছে দেখতে পায়। তারপর ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করার দিন ব্যাংকের লোক উপস্থিত থাকেন। যেহেতু ফ্ল্যাট ভিজিট করেছেন, এনআইডি সার্ভারে এনআইডি সঠিক পেয়েছেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সঠিক পেয়েছে, সব কিছু ঠিক দেখে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন হওয়ার দু-একদিন পর লোনের পে-অর্ডার দিয়ে দেয়া হয় ফ্ল্যাটের সাজানো ক্রেতা ও বিক্রেতাকে। পরবর্তীতে যখন লোনের কিস্তি পরিশোধ করে না তখন তারা প্রতারকদের দেয়া এনআইডির বিস্তারিত দেখতে গেলে ব্যাংক বুঝতে পারে যে, ব্যাংক প্রতারিত হয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চক্রটি কৌশলে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে থেকে ফ্ল্যাট কিনবে বলে তার এনআইডি ও অন্যান্য কাগজ নিয়ে নেয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতায় এনআইডির সব তথ্য ঠিক রেখে শুধু ছবি পরিবর্তন করে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করে। পরে ব্যাংক যখন এনআইডি সার্ভারে যাচাই করতে যায়, তখন সব তথ্য সঠিক পায়। সার্ভারের এসব তথ্য দেখে আশ্বস্ত হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং তারা লোন অনুমোদন করেন।

এসব প্রতারণায় ব্যাংকের কেউ জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ৪৪ কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও নির্বাচন কমিশন থেকে ডিবি পুলিশকে জানানো হয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে।