• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

বিষণ্নতা দূর করবে ১০ পুষ্টি

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২০  

 


আপনার আগে জানা না থাকলে এখন জেনে বিস্মিত হবেন যে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি আমাদের মানসিক অবস্থা বা মেজাজ ঠিক রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আমাদের ডায়েটে এসব প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি থাকলে বিষণ্নতার মতো মুড ডিসঅর্ডারে ভুগতে হতে পারে।

উদ্বেগ, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ও অন্যান্য মেজাজ-ধ্বংসাত্মক দশার উপসর্গকে দমিয়ে রাখতে পারে এমন ১০টি পুষ্টি নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্বে ৫টি পুষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ভিটামিন ডি:
মায়ো ক্লিনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আপনার ত্বক কতটুকু ভিটামিন ডি তৈরি করবে তা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন- মৌসুম, ত্বকের রঙ, দিনের সময় ও বাসস্থান। শীতের মাসগুলোতে আপনার অবস্থানের জায়গা ও জীবনযাপনের ওপর ভিত্তি করে ভিটামিন ডি উৎপাদন কমে যেতে পারে অথবা উৎপাদন নাও হতে পারে। এর ফলে আপনি ভিটামিন ডি ঘাটতিতে ভুগবেন। সাউথ ক্যারোলিনায় অবস্থিত থর্নি রিসার্চের মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর ডা. আমান্ডা ফ্রিক বলেন, ‘মস্তিষ্কে ভিটামিন ডি এর জন্য প্রচুর রিসেপ্টর রয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এ পুষ্টি মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।’ উপলব্ধি বা জ্ঞানার্জন, চিন্তাভাবনা, যৌক্তিক ব্যাখ্যা, স্মরণশক্তি বা স্মৃতি, মনোযোগ, সিদ্ধান্ত নেয়া, সমস্যা সমাধান ও অন্যান্য মানসিক সক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্যক্রমই হচ্ছে মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন। ডা. ফ্রিক প্রতিদিন সানস্ক্রিন মেখে ন্যূনতম ২০ মিনিট সূর্যালোকে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন, অথবা প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে হবে। নিজে নিজে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সেবনের ক্ষেত্রে দৈনিক ২,০০০ আইইউ’র বেশি গ্রহণ করবেন না।

ওমেগা ৩:
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিষণ্নতার উপসর্গের তেজ কমাতে, কগনিটিভ ফাংশন উন্নত করতে ও সামগ্রিক মেজাজ ঠিক রাখতে এ পুষ্টি বিশেষ সহায়ক। বেশি করে সমুদ্রের চর্বিযুক্ত মাছ খেয়ে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত ওমেগা ৩ সরবরাহ করতে পারেন। এছাড়া কিছু বাদাম ও বীজেও প্রচুর পরিমাণে এ পুষ্টি পাবেন, যেমন- আমন্ড বাদাম, আখরোট বাদাম, চিয়া বীজ ও ফ্ল্যাক্স বীজ। মাছ খাওয়ার প্রবণতা না থাকলে ফিশ অয়েল পিল আপনার জন্য ভালো সাপ্লিমেন্ট হতে পারে। ওরিয়েন্টাল মেডিসিন অ্যান্ড আকুপাংচারের ফিজিশিয়ান এলিজাবেথ ট্রেটনার দৈনিক ২,০০০ মিলিগ্রাম ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যেখানে ডিএইচএ ও ইপিএ উভয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনার ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্টে ডিএইচএ ও ইপিএ আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। আমি ৬৫০ মিলিগ্রাম ডিএইচএ ও ১২০০ মিলিগ্রাম ইপিএ রয়েছে এমন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করি।’

ভিটামিন বি৬:
পাইরিডক্সিন নামেও পরিচিত ভিটামিন বি৬ মানুষের শারীরিক ও মানসিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সুষ্ঠু স্নায়ু কার্যক্রমের জন্য এ পুষ্টির বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। এ পুষ্টি বিষণ্নতার মতো নিউরোসাইক্রিয়াটিক ডিসঅর্ডার দমাতেও সহায়তা করতে পারে। ডা. ফ্রিক বলেন, ‘ইস্ট্রোজেনের বিপাকে পাইরিডক্সিনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই এ পুষ্টির ঘাটতিতে প্রিমেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রোম ও হরমোনাল ইমব্যালেন্স জনিত বিষণ্নতার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি বি ভিটামিনকে নিঃশেষিত করে, বিশেষ করে ভিটামিন বি৬। একারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণের এ প্রক্রিয়ায় থাকলে পাইরিডক্সিন সাপ্লিমেন্ট সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়।’ তিনি প্রতিদিন ২৫ মিলিগ্রাম বি৬ সাপ্লিমেন্ট সেবনের সুপারিশ করছেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলে আরো বেশিও প্রয়োজন হতে পারে।

ভিটামিন বি৩:
নিয়াচিন নামেও পরিচিত ভিটামিন বি৩ সেরোটোনিন উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। এ নিউরোট্রান্সমিটারটি মস্তিষ্কের কোষ ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য কোষকে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম করে তোলে। সেরোটোনিনের মাত্রা খুব কমে গেলে বিষণ্নতায় ভোগার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু নিয়াচিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে আপনি এ পুষ্টির মাত্রা ব্যবস্থাপনা করতে পারেন। শরীরে পর্যাপ্ত নিয়াচিন থাকলে সেরোটোনিনের মাত্রায় ভারসাম্য আসবে। অন্য কথায়, ভিটামিন বি ৩ এর অভাবে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে যায় এবং মেজাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডা. ফ্রিক বিষণ্নতার উপসর্গ রয়েছে এমন লোকদের দৈনিক ২০ মিলিগ্রাম নিয়াচিন সাপ্লিমেন্ট সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু আপনার তীব্র বিষণ্নতা থাকলে উচ্চ ডোজের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। নিয়াচিন সাপ্লিমেন্টের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ফ্লাশিং বা শরীর উষ্ণ ও রক্তিম হয়ে যাওয়া। এ বিরক্তিকর প্রতিক্রিয়া এড়াতে নন-ফ্লাশিং নিয়াচিন ফরম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

ভিটামিন বি১২:
নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত মেট্রো ইন্টিগ্রেটিভ ফার্মেসির ন্যাচারোপ্যাথিক ডক্টর স্যালি ওয়ারেন বলেন, ‘ভিটামিন বি১২ মেজাজ উন্নত করে, প্রাণশক্তির যোগান দেয় ও বিষণ্নতার তেজ কমায়। প্রতিদিন ১০ মিলিগ্রাম ভালো বি-কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে শরীরে এ পুষ্টির ঘাটতি প্রতিরোধ হবে। আপনি ভেগান বা ভেজিটারিয়ান হলে এই সাপ্লিমেন্ট বিশেষভাবে সহায়ক হবে।’ খাবারের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি১২ এর কিছু সমৃদ্ধ উৎস হচ্ছে গরুর কলিজা, সার্ডিন মাছ, ম্যাকারেল মাছ ও ভেড়ার মাংস। এছাড়া ডিম, ফিটা চিজ ও কটেজ চিজেও এ পুষ্টি পাওয়া যায়।